চুক্তিতে জমি নিয়ে চাষ করছিলেন কালনার কয়া গ্রামের চাষি মাধব মাঝি। সোমবার তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে পরিবার কারণ হিসেবে চাষে ঋণের বোঝাকে দায়ী করলেও মঙ্গলবার প্রশাসনের রিপোর্টে লেখা হয়েছে, মাধববাবুর মৃত্যুর সঙ্গে চাষের সম্পর্ক নেই। ব্যক্তিগত কারণে তিনি আত্মঘাতী হন। কৃষি দফতরও জানিয়েছে, চার বিঘা জমি চুক্তিতে নিয়ে আলু চাষ করেছিলেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু নিজের নামে কোনও জমি না থাকায় ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা পাবেন না তিনি।
এ দিন ওই চাষির বাড়িতে যান বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী পরেশচন্দ্র দাস। তিনি দাবি করেন, ‘‘এক দিকে সাম্প্রতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হওয়ায়, অন্য দিকে খোলা বাজারে আলুর দাম না পাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যে আত্মহত্যা ছাড়া ওই চাষির সামনে কোনও পথ খোলা ছিল না।’’ এ রাজ্যে সহায়ক মূল্যে ফসল কেনার রেওয়াজ থাকলেও কাজের কাজ হয় না বলেও তাঁর দাবি।
যদিও জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তৃণমূলের দেবু টুডুর দাবি, ‘‘সরকার আলু কিনতে শুরু করেছিল। কিন্তু ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় তা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। কৃষকবন্ধু প্রকল্পও থমকে গিয়েছে একই কারণে। স্থানীয় ভাবে জানা গিয়েছে, ব্যক্তিগত কারণে ওই চাষি মারা গিয়েছেন। বিজেপি বিষয়টা নিয়ে রাজনীতি করছে।’’
মাধববাবুর মৃত্যুর পরে, তাঁর স্ত্রী বীণারানি মাঝি দাবি করেছিলেন, চাষ শুরু করার সময় একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক, ঋণদায়ী সংস্থা থেকে টাকা নিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। গয়নাও বন্ধক দিয়েছিলেন। কিন্তু ফলন ভাল হলেও আলু তোলার ঠিক আগে দিন তিনেক টানা বৃষ্টি হয়। তাতেই জমিতে জমা জলে পচে যায় বেশির ভাগ আলু। ওই পরিবারের দাবি, সামান্য কয়েক বস্তা আলু মিলেছিল। তা-ও জলের দরে বিক্রি করতে হয়। সব মিলিয়ে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে মাধববাবু আত্মঘাতী হন বলে তাঁর দাবি।
এ দিন বিডিও-র নির্দেশ কালনা ১ ব্লক কৃষি আধিকারিক শুভেন্দু মণ্ডল রিপোর্ট দেন। তাতে তিনি জানিয়েছেন, বাঘনাপাড়া পঞ্চায়েতের কয়া গ্রামের ওই চাষির পরিবার সরকারি প্রকল্পে ঘর পেয়েছে। পূত্রবধূকে নিয়ে তাঁদের পরিবারে অশান্তি চলছিল। চাষাবাদের কারণে মাধববাবুর অপমৃত্যু হয়নি বলেও দাবি করা হয়েছে সরকারি রিপোর্টে। রিপোর্টটি পাঠানো হয়েছে জেলা কৃষি আধিকারিক, মহকুমা কৃষি আধিকারিক, কালনা ১-এর বিডিও, কালনার মহকুমাশাসককে।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ বছরের পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে চালু হয়েছে রাজ্য সরকারের ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্প। এই প্রকল্পে আমন এবং রবি মরসুমে চাষের জন্য বছরে দু’বার সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা সাহায্য পান চাষি। তার সঙ্গে ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে চাষির মৃত্যু হলে দু’লক্ষ টাকা সরকারি সাহায্য মেলে। কালনা মহকুমা কৃষি আধিকারিক আশিস বারুই বলেন, ‘‘মাধববাবুর নাম এই প্রকল্পে নথিভুক্ত হয়নি। কারণ, তাঁর নিজের নামে কোনও জমি নেই।’’
সরকারি ভাবে এ পর্যন্ত কালনা মহকুমার ৪০০টি মৌজায় প্রায় ৩১ হাজার চাষির নাম ওই প্রকল্পে নথিভুক্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে সেই চাষিদের।
তবে বামপন্থী কৃষক সংগঠন ‘কৃষকসভা’র দাবি, ভূমি সংস্কারের পরে জমিহীন চাষির সংখ্যা বেড়েছে। এঁরা অন্যের জমি মৌখিক-চুক্তির ভিত্তিতে চাষ করেন। শুধু কালনা মহকুমায় ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে নথিভুক্ত নন এমন চাষির সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy