Advertisement
E-Paper

কর্তা ও এক কর্মী, চলছে দফতর!

কারখানা পরিদর্শকের দফতরে ঢুকে দেখা গিয়েছে, ঘরের দেওয়ালের পলেস্তরা জায়গায়-জায়গায় খসে পড়েছে। জানলার কাচ ভাঙা। জানলা বন্ধও করা যায় না। ফাইল, টেবিল, চেয়ারে পুরু ধুলোর আস্তরণ।

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:৫৭
Critical condition of the office

এমনই হাল কারখানা পরিদর্শকের দফতরের। নিজস্ব চিত্র।

ঘরের দেওয়ালের পলেস্তরা খসে পড়েছে। চতুর্দিকে ধুলোর আস্তরণ। জানলার কাচ ভাঙা। এমন একটি পরিবেশে বসে রয়েছেন এক আধিকারিক। আর এক ডেপুটেশনে আসা কর্মী।— এমনই হাল দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে কারখানা পরিদর্শকের দফতরটির। অথচ, এই দফতরের দায়িত্ব, বাঁকুড়া ও দুর্গাপুর মহকুমার ৫০০টিরও বেশি কারখানায় নজরদারি চালানো! কিন্তু দফতরের হাল যেখানে এমন, সেখানে সে নজরদারি আদৌ কতটা সুষ্ঠু ভাবে করা সম্ভব, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধী নেতৃত্ব। তাঁদের কটাক্ষ, ঢাল নেই, তরোয়াল নেই। এ যেন নিধিরাম সর্দার!

কারখানা পরিদর্শকের দফতরে ঢুকে দেখা গিয়েছে, ঘরের দেওয়ালের পলেস্তরা জায়গায়-জায়গায় খসে পড়েছে। জানলার কাচ ভাঙা। জানলা বন্ধও করা যায় না। ফাইল, টেবিল, চেয়ারে পুরু ধুলোর আস্তরণ। সে সব সাফ করার জন্য কেউ নেই। কারণ, ২০১৫-১৬ সালের মধ্যে সব কর্মীরা একে-একে অবসর নিয়েছেন। তার পরে থেকে সে সব পদ ফাঁকা থেকে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চূড়ান্ত অগোছালো অবস্থা গোটাদফতর জুড়েই।

দফতরে ঢুকে দেখা গেল, নিজের চেয়ারে বসে আছেন কারখানা পরিদর্শক অনিমেষ প্রামাণিক। অফিসের অন্য দিকে বসে আছেন, আসানসোল থেকে ডেপুটেশনে আসা কর্মী সত্যেন রজক। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নেই। ফলে, দফতরের তালা খোলা থেকে নিজেদের চেয়ার-টেবিল সাফ করা, সবই ওই আধিকারিক ও কর্মীকেই করতে হয়। অনিমেষ জানান, বছরে গড়ে ১২০-১৫০টি কারখানায় পরিদর্শনে যেতে হয় তাঁকে। কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও তাঁদের কল্যাণে কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন, সরকার নির্দেশিত ছুটি দেওয়া হয় কি না প্রভৃতি বিষয়ে নজর রাখেন কারখানা পরিদর্শক। দুর্ঘটনা এড়াতে কী কী পদক্ষেপ করা যায়, সে নির্দেশও দেওয়া হয় কারখানা কর্তৃপক্ষকে।

কিন্তু এত সীমাবদ্ধতা নিয়ে ঠিক ভাবে কাজ করা সম্ভব? অনিমেষের অবশ্য বক্তব্য, “এখন কাজের ধারা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। অধিকাংশ কাজই অনলাইনে হচ্ছে। তাই সামাল দেওয়া যায়। তবে অন্তত দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী যদি থাকেন, তা হলে সুবিধা হয়।” তিনি বলেন, “সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি, সমস্যা মিটবে।”

শ্রম দফতর সূত্রে অবশ্য দাবি, রাজ্যের প্রায় সব কারখানা পরিদর্শকের দফতরেই কর্মীর অভাব রয়েছে। সে কথা মাথায় রেখে কিছু কর্মী ইতিমধ্যেই নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের দফতরের প্রধান কার্যালয়ে প্রশিক্ষণ চলছে। প্রশিক্ষণ শেষ হলে তাঁদের জেলায় পাঠানো হবে।

এ দিকে, বিষয়টি নিয়ে অবশ্য সরব হয়েছেন বিরোধীরা। সিটুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের বক্তব্য, “দুর্ঘটনায় কারখানার শ্রমিকের মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ঠিক করছে শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন। ফলে, কারখানা পরিদর্শকের দফতরের আর এমনিতেই কাজ আছে না কি!” বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক তথা দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, “বর্তমান রাজ্য সরকারের শিল্প নিয়ে কী মনোভাব, তা স্পষ্ট হচ্ছে। তা না হলে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি দফতরের এমন হাল হয়?” তবে তৃণমূল নেতা তথা পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “বিরোধীদের পায়ের তলায় মাটি নেই।তাই ভেসে থাকার জন্য নানা ভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করে। শিল্পের উন্নয়নে রাজ্য সরকার সব সময় চেষ্টা করছে।”

Durgapur poor infrastructure
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy