মাথার উপরে কড়া রোদ্দুর থাকবে, না কি বৃষ্টিতে যাত্রাভঙ্গ হবে— পুজোর দিনগুলোয় আবহাওয়া যেমনই থাকুক না কেন মণ্ডপের বরফ কিছুতেই গলবে না। হঠাৎ গা ছমছম! সৌজন্যে অন্য একটি মণ্ডপ। সেখানে শিল্পীর সৃষ্টিতে তৈরি হয়েছে রীতিমতো এক ভৌতিক পরিবেশ। কোথাও বা আবার সাবেক পুজোতেই দর্শকদের মন জেতার চেষ্টা। এ ভাবেই থিমের সঙ্গে সাবেকিয়ানার মেলবন্ধন ঘটেছে চিত্তরঞ্জন ও রূপনারায়ণপুরের পুজো মণ্ডপগুলিতে।
এক সময় শীত পড়লেই চিত্তরঞ্জনে দেখা মিলত পরিযায়ী পাখিদের। কিন্তু এলাকায় দূষণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাখির দল না কি চলে গিয়েছে বরফের রাজ্যে! ‘বরফের দেশে পরিযায়ী পাখি’দের সেই স্মৃতিকেই এ বার মণ্ডপে ফুটিয়ে তুলেছে চিত্তরঞ্জনের সুন্দরপাহাড়ি পুজো কমিটি। মণ্ডপশিল্পী রাজু দাসের আবেদন, ‘‘বরফের দেশের মতো দূষনমুক্ত শহর গড়ে ফিরিয়ে আনা হোক পাখির দল।’’ বরফ, জঙ্গলে ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশ দর্শকদের ভাল লাগবে বলেই দাবি উদ্যোক্তাদের।
বরফের দেশ ঘুরে একটু যদি ‘ভয় পেতে’ ইচ্ছে করে, তবে যেতে হবে রূপনারায়ণপুরের কল্যাণগ্রাম ৫ নম্বরের পুজোয়। রাজস্থানের চিতোরগড়ের এক পরিত্যক্ত বাড়ির আদলে সেজে উঠেছে মণ্ডপ। দেওয়ালের ফাটল ফুঁড়ে বেরনো গাছের শিকড়, প্রতিমার সামনে ধ্যানস্থ তান্ত্রিক— পরিবেশ তৈরিতে সবই সৃষ্টি করেছেন শিল্পীরা। উদ্যোক্তারা জানান, মণ্ডপ থেকে বেরনোর পথ রয়েছে গুহামুখের মধ্যে!
‘ক্লিন বাংলা, গ্রিন বাংলা’র স্লোগানকে সামনে রেখে মণ্ডপ সাজিয়েছেন চিত্তরঞ্জনের পশ্চিম রাঙ্গামাটি দু’নম্বরের পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা। বাঁশ-কাঠি দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়েছেন ২৪ পরগনার চাটাই শিল্পীরা। তাঁদের পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রামবাংলার শিল্পীদেরও রোজগারের সুযোগ করে দিতে এখানে কাজে লাগানো হয়েছে।
এ সবের পাশাপাশি ইস্কন মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করে সাবেকিয়ানাতেই আস্থা রেখেছে রূপনারায়ণপুরের দেশবন্ধু ক্লাবের সর্বজনীন পুজো কমিটি। মণ্ডপের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে ডাকের সাজের প্রতিমা। ঝিনুক দিয়ে তৈরি হয়েছে চিত্তরঞ্জনের ছয়েরপল্লির উদ্যোক্তারা। হায়দরাবাদ থেকে আনা হয়েছে কয়েক লাখ ঝিনুক। সাবেক রীতিতেই আস্থা রেখেছে আসানসোলের মরিচকোটা গ্রামের পুজোও। স্থায়ী মণ্ডপেই পুজো হবে। এই পুজোতে এ বার দেবী দুর্গার মাথায় সোনার মুকুট পরানো হবে।