অন্ডাল রেলমাঠে পঞ্চাশ ফুটের প্রতিমা।
কেউ আমদানি করেছে যমের দুয়ার। কারও পছন্দ আবার গ্রামীণ পরিবেশ। কেউ-কেউ আবার মণ্ডপের থেকে প্রতিমার আকারেই নজর দিয়েছে বেশি। এমনই নানা রঙে জমে উঠেছে খনি অঞ্চলের কালীপুজো।
পাণ্ডবেশ্বর তফসিলি উন্নয়ন সমিতির ৪২তম বছরের পুজোয় ইসকনের মন্দিরের আদলে তৈরি মণ্ডপে রয়েছে ১৩ ফুটের দশভুজা দেবীপ্রতিমা। পুজো কমিটির পক্ষে কীর্তন কোটলের দাবি, তাঁদের মণ্ডপেই সব থেকে বেশি ভিড় হচ্ছে। অন্ডালে রেজিমেন্ট ক্লাবের পুজো ৪৪ বছরের পুরনো। এ বার তাদের থিম ‘যমের দুয়ার’। প্রবীণ কর্মকর্তা গৌতম চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আমাদের পুজো বরাবরই এলাকায় বড় আকর্ষণ।’’ অন্ডাল ট্রাফিক জিমন্যাসিয়ামের পুজোর বয়স ৪৯ বছর। সাত দিনের মেলায় মানুষের ঢল নামে।
অন্ডালের ধান্ডাডিহি গ্রামে শ্মশানকালী পুজো এলাকায় জনপ্রিয়। কথিত রয়েছে, বর্গি হামলায় আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা বর্ধমানের রাজার দ্বারস্থ হন। রাজা জানান, কালীপুজোর আয়োজন করলে রক্ষা মিলবে। সেই থেকে পুজো শুরু। এখনও পুজোর শুরুতে বর্ধমান রাজবাড়ির নামে উৎসর্গ করা হয়। পুরনো রীতি মেনে ধীবর পরিবার মশাল জ্বালার পরে ভোগ রান্না শুরু করে কুমার পরিবার। মাটির পাত্রে ভোগ রাধা হয়। তিন দিন কলকাতা ও এক দিন স্থনীয় শিল্পীরা যাত্রা করেন।
বল্লভপুরে পুজো মণ্ডপ। —নিজস্ব চিত্র।
উখড়ার সন্ন্যাসীতলার কালীপুজোর বয়স ২৭৫ বছর বলে জানান এলাকার প্রবীণেরা। জনশ্রুতি রয়েছে, প্রেমপুরী পুজারী তন্ত্র সাধনার জন্য সন্ন্যাসীতলায় পঞ্চমুন্ডির আসন পেতে বসেছিলেন। তাঁকে কালী স্বপ্নে জানান, তিনি এখানে বিরাজ করছেন। এখানে পুজোর ব্যবস্থা করে অন্য কোথাও গিয়ে তন্ত্রসাধনা করার নির্দেশ দেন তাঁকে। তার পরেই একটি বকুল গাছের তলায় পুজো শুরু হয়। পরে সেই গাছ ঘিরে মন্দির তৈরি করা হয়। সেই গাছ আজও অক্ষত। উখড়ায় পাতাল ভৈরবী পুজো হিসেবে পরিচিত কালীপুজো শুরু হয়েছিল ১৯৯০ সালে। আয়োজকেরা জানান, এলাকার তরুণেরা ‘পাতাল ভৈরবী’ সিনেমা দেখে পুজো শুরু করেন। সেই থেকে ‘পাতাল ভৈরবী পুজো’ নামে পরিচিত। গোড়ায় বছর চারেক ছয় হাত ও তিন মাথার মূর্তি পুজো করা হলেও এখন সাবেক মূর্তিরই পুজো হয়।
রানিগঞ্জের জেমারি পল্লিমঙ্গল সমিতির পুজো শুরু হয় ২০ বছর আগে। সমিতির সভাপতি অভয় উপাধ্যায় জানান, ২৫ ফুটের প্রতিমা এ বার তাদের বিশেষ আকর্ষণ। অশোকপল্লী যুব সমাজের মণ্ডপ পুরনো মন্দিরের আদলে তৈরি। তিন দিন সাংস্কতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। অজয়ের ধারে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত নারায়ণকুড়িতে প্রায় দেড়শো বছর আগে শুরু হয়। কথিত রয়েছে, স্বপ্নাদেশে একটি পাথর কালীরূপে পুজো শুরু করেন শম্ভু শর্মা। সেই পাথরটি বেদীর নীচে রেখে দীর্ঘদিন মাটির মূর্তি গড়ে পুজো চালাচ্ছিলেন তাঁর উত্তরাধিকারীরা। এ বছর পাথরের মূর্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এখন পুজো সামলায় শম্ভুবাবুর দৌহিত্রের পরিবার।
জেকে রোপওয়েজের কাছে জঙ্গলে খাদান কালীপুজো হয় মহা সমারোহে। জনশ্রুতি, বছর সত্তর আগে এখানে খনিতে কয়লা নিতে এসে একটি লরির চাকা ফেঁসে যায়। কিছুতেই সেটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দা সমর মাজি স্বপ্নাদেশ পান, কালীপুজো শুরু করলেই লরির চাকা ঘুরবে। তার পরে পুজো শুরু করলে সমস্যা মেটে।
রানিগঞ্জের ডলফিন ক্লাব, কুমারবাজারের শিবাজি সঙ্ঘের পুজো মণ্ডপে এ বার দেখা যাচ্ছে গ্রামীণ পরিবেশ। স্কুলপাড়ার ক্যাপ্টেন ক্লাব পুজো বৈদ্যুতিন কারসাজিতে দেখানো হচ্ছে দেবী কালীর এসে শিবের উপরে দাঁড়াচ্ছেন। বল্লভপুর সর্বজনীনের মণ্ডপে থিম ‘ডিজনিল্যান্ড’। আসানসোলে ইসিএলের কাল্লা সেন্ট্রাল হাসপাতালের কালীপুজো ৪৩ বছর পেরোল। চট ও মাটি দিয়ে তৈরি ধানের মড়াইয়ে দেবীর অধিষ্ঠান। রবি ও সোমবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে। মঙ্গলবার আতসবাজির প্রর্দশন হবে। আয়োজক সংগঠনের সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্য জানান, ওড়িশা থেকে আতসবাজি এনেছেন তাঁরা। গ্রামীণ পরিবেশ গড়ে তুলতে মণ্ডপের বাইরে ঢেঁকিতে চাল ভাঙার মডেল বসানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy