Advertisement
E-Paper

খুদের দলকে হাসতে শেখান সুপ্রিয়, সোনালি

ওই বস্তিতে প্রায় ৫০টি পরিবার রয়েছে। বাবা-মায়েরা প্রায় প্রত্যেকেই দিনমজুর। তাঁদের ছেলেমেয়েদের পরিচর্যার যে অভাব রয়েছে, তা প্রতিদিনই কাজে যেতে গিয়ে দেখতেন বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী সুপ্রিয়। সেই শুরু। বস্তিতে গিয়ে বাবা-মায়েদের বুঝিয়ে তাঁদের সন্তানদের এক জায়গায় জড়ো করেন তিনি। শুরু হয় পড়াশোনা।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৩৬
‘দাদা-দিদির’ পাঠশালায়। তুলসিহার বস্তিতে। ছবি: পাপন চৌধুরী

‘দাদা-দিদির’ পাঠশালায়। তুলসিহার বস্তিতে। ছবি: পাপন চৌধুরী

এক ঝাঁক কচিকাঁচা। প্রত্যেকেরই টি-শার্টের পিছনে লেখা ‘দ্য স্মাইল’। সে দিকে তাকিয়ে সুপ্রিয় কর্মকার আর সোনালি দত্তেরা বললেন, ‘ওদের হাসির জন্যই তো সব।’ ওরা, আসানসোল পুরসভার ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের তুলসিহার বস্তির প্রায় তিরিশ জন ছেলেমেয়ে। ওদের মুখে হাসি আনতেই এই দু’জন গত দু’বছর ধরে তাদের পড়াশোনা, নাচ, আঁকা, এমনকি ‘মার্শাল আর্ট’-এর প্রাথমিক পাঠ দিচ্ছেন।

ওই বস্তিতে প্রায় ৫০টি পরিবার রয়েছে। বাবা-মায়েরা প্রায় প্রত্যেকেই দিনমজুর। তাঁদের ছেলেমেয়েদের পরিচর্যার যে অভাব রয়েছে, তা প্রতিদিনই কাজে যেতে গিয়ে দেখতেন বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী সুপ্রিয়। সেই শুরু। বস্তিতে গিয়ে বাবা-মায়েদের বুঝিয়ে তাঁদের সন্তানদের এক জায়গায় জড়ো করেন তিনি। শুরু হয় পড়াশোনা। ডিসেরগড়ের বাসিন্দা সুপ্রিয় বলেন, ‘‘এদের অনেকেই লাগোয়া একটি প্রাথমিক স্কুলে পড়ে। কেউ আবার স্কুলেই যায় না। এ সব দেখেই প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ওদের পড়াই। তার পরে কাজে যাই।’’

কিছু দিন এ ভাবে চলার পরে সুপ্রিয়ের সঙ্গে ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় আলাপ বার্নপুরের রাধানগর রোড এলাকার বাসিন্দা সোনালি দত্তের। কথায় কথায় সোনালি জানান, তিনিও সমাজের জন্য কিছু করতে চান। পেশায় বেসরকারি নার্সিং কলেজের প্রশিক্ষক সোনালিও এই পাঠশালায় আসা-যাওয়া শুরু করেন। পড়াশোনার সঙ্গে আবৃত্তি, নৃত্য, আঁকা শেখানো তো রয়েইছে। পাশাপাশি, মেয়েদের আত্মরক্ষার প্রাথমিক পাঠ দিতে শেখানো হয় মার্শাল আর্টের কিছু কৌশলও। দু’ঘণ্টা ধরে চলে পাঠ।
শুক্রবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, শীতের মিঠে রোদে একটি বড় গাছের তলায় সুপ্রিয় আর সোনালির এই কাজ চলছে। ‘দাদা’, ‘দিদি’র পাঠশালায় এসে খুবই খুশি খুদের দলও। অঞ্জলি বাউড়ি নামে এক জন জানায়, ‘‘স্কুলের শেষে বাড়িতে পড়া দেখানোর মতো কেউ নেই। দাদা, দিদি আছে বলে পড়াশোনায় কোনও সমস্যা হয় না।’’ তবে শুধু পড়াশোনার ব্যবস্থা করাই নয়, শিশুদের শিক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া, স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছনোর কাজও করেন সুপ্রিয় ও সোনালি। কিন্তু কী ভাবে চলে এই

খরচ? দু’জনেই বলেন, ‘‘বেতন থেকে অল্প করে টাকা জমিয়ে এ সব কাজ করা হয়।’’
এই দু’জনের উদ্যোগে খুশি অভিভাবকেরাও। অজয় বাউড়ি, লক্ষ্মী হেমব্রমদের মতো কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘রুটিরুজি জোগাড় করতেই দিন পেরিয়ে যায়। ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভাবব কখন। ওঁরা এ ভাবে এগিয়ে আসার ফলে, আমরা নিশ্চিন্ত হয়েছি।’’

শিশুদের প্রয়োজনীয় নানা সামগ্রী নিয়ে এগিয়ে আসছেন আরও অনেকেই, জানান সুপ্রিয়-সোনালি। তাঁদের এই কাজের মাধ্যমে খুদেরা বড় হয়ে অন্যের মুখে হাসি ফোটাবে, আশা করেন তাঁরা। এ সব কথার মাঝেই খুদের দলের এক সদস্য রং-পেন্সিলে কাগজের উপরে এঁকে ফেলেছে ‘সূয্যিমামা’র ছবি।

Burdwan Asansol Slumdwellers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy