বিপদ: দুর্ঘটনায় তুবড়ে যাওয়া গাড়ি। নিজস্ব চিত্র
কালিকাপ্রসাদের স্মৃতি ফিরিয়ে জাতীয় সড়কে ফের গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল তিন শিল্পীর। গানের অনুষ্ঠান সেরে বর্ধমানের বাড়িতে আসছিলেন ওই তিন জন। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে চাকা ফেটে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে চলন্ত একটি ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মারে। যাত্রীবাহী ছোট গাড়িটি ছেঁচড়ে গিয়ে রাস্তার ধারে উল্টে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা ও পুলিশ এসে গাড়ি থেকে তিন শিল্পীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করে।
সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে শহরের কাছে আঁজিরবাগান ও তেজগঞ্জের মাঝে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন, বর্ধমান শহরের কানাইনাটশালের দম্পতি দেবজ্যোতি হাজরা (৩৭) ও মৈত্রেয়ী (৩২)। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন শহরের রাধানগর-পীরতলার বাসিন্দা লোটন বাগ (৩৫)। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন দেবজ্যোতিই। ওই দম্পতির ছেলে আয়ুষ্মান গলসির কাছে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। এ দিন বিকেল পর্যন্ত বাড়ির কেউ তাকে দুর্ঘটনার কথা জানায়নি। দেবজ্যোতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গানের আয়োজন করতেন। ৭-৮ জনের দলে মৈত্রেয়ী ছিলেন গায়িকা। লোটন বাদ্যযন্ত্র-শিল্পী হিসেবে অনুষ্ঠানগুলিতে যেতেন। দেবজ্যোতির পরিচিতেরা জানান, তিনি মাইকেল নামে শহরে বেশি পরিচিত। গানের জগৎ ছাড়াও ভাল ভলিবল খেলোয়াড় হিসেবে নাম রয়েছে। এই দুর্ঘটনার পরে গানের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের সঙ্গে শহরের ক্রীড়াপ্রেমীরাও শোক প্রকাশ করেছেন।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে যাতায়াত করার জন্য ‘টোল’ দিতে হয় গাড়ি-চালকদের। তার পরেও ওই জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না। পর পর দুর্ঘটনায় মানুষের মনে আতঙ্ক বাড়ছে। গত বছর ওই রাস্তায় একের পর এক দুর্ঘটনার জেরে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ নড়েচড়ে বসে। গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ গাড়ি, স্পিড গান, ওয়াচ টাওয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক সময় রাতে স্টিয়ারিং হাতে ক্লান্ত চালকদের চোখে ঘুম জড়িয়েও আসাও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সে জন্য গভীর রাতে বা ভোরের দিকে চালকদের চোখে-মুখে জল দেওয়ার বন্দোবস্তও করা হয়েছে পুলিশের তরফে। তার পরেও দুর্ঘটনার বিরাম নেই।
এক বছর আগে হুগলির গুড়াপে এই দুর্গাপুর এক্সপ্রেওয়েতেই গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন গানের দল ‘দোহার’-এর শিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। ২০১৭-র মার্চে সিউড়ি থেকে অনুষ্ঠান সেরে ফেরার পথে কালিকাপ্রসাদের গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নয়ানজুলিতে পড়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তের পরে গাড়ির অতিরিক্ত গতিকে দায়ী করেছিল পুলিশ।
দেবজ্যোতি ও মৈত্রেয়ী। পাশে, লোটনের পরিবার। নিজস্ব চিত্র
পুলিশের দাবি, পশ্চিম বর্ধমানের লাউদোহায় গানের অনুষ্ঠান সেরে দেবজ্যোতিদের গাড়িটিও প্রচণ্ড গতিতে বর্ধমানের উল্লাস মোড়ের দিকে আসছিল। তার সামনেই ছিল একটি বড় ট্রাক। আঁজিরবাগান পেরনোর পরেই চাকা ফেটে যায়। চালকের আসনে থাকা দেবজ্যোতি গাড়ির উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। গাড়িটি সোজা গিয়ে ধাক্কা মারে ট্রাকের পিছনে। তার অভিঘাতে গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
ঘটনার সময় রাস্তার ধারে থাকা দোকানে কাজ করছিলেন বেশ কয়েক জন। তাঁরা জানান, ‘দুম’ করে আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখেন, ট্রাকের পিছনে আটকে গিয়েছে গাড়িটি। ওই অবস্থাতেই গাড়িটিকে ছেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে ট্রাক। তাঁদের চিৎকার শুনে ট্রাকটি দাঁড়ানোর পরেই গাড়ি উল্টে গিয়ে রাস্তার ধারে গিয়ে পড়ে। ওই অবস্থাতেই বেশ কয়েক ফুট ছেঁচড়ে গিয়ে রাস্তার ধারে উল্টে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, দেবজ্যোতি গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। পাশেই বসে ছিলেন স্ত্রী মৈত্রেয়ী। পিছনের আসনে ছিলেন লোটন। ঘটনাস্থলেই তিন জন মারা যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy