Advertisement
E-Paper

নির্বিঘ্ন সভা কীসের ইঙ্গিত

পুরনো জুটি কী আবার এক হচ্ছে— তিন মাস পরে গুসকরা পুরসভার বৈঠক উসকে দিল এই প্রশ্নটাই। সোমবার বিকেলে গুসকরা পুরসভার কাউন্সিলরদের মাসিক সভায় নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামীদের দেখা গেলেও প্রাক্তন পুরপ্রধান চঞ্চল গড়াইয়ের অনুগামীদের দেখা যায়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৬ ০৮:২০

পুরনো জুটি কী আবার এক হচ্ছে— তিন মাস পরে গুসকরা পুরসভার বৈঠক উসকে দিল এই প্রশ্নটাই।

সোমবার বিকেলে গুসকরা পুরসভার কাউন্সিলরদের মাসিক সভায় নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামীদের দেখা গেলেও প্রাক্তন পুরপ্রধান চঞ্চল গড়াইয়ের অনুগামীদের দেখা যায়নি। তার সঙ্গে এ দিনই ‘পারচেজ ও টেন্ডার কমিটি’ থেকে চঞ্চলবাবুর অনুগামী গীতারানি ঘোষকে সরিয়ে দিয়ে নিত্যানন্দবাবুকে নিয়ে এসেছেন পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায়। ফলে ‘জোটের’ জল্পনা থেকেই যাচ্ছে।

কোনও রকম অশান্তি ছাড়া প্রায় তিন মাস পরে গুসকরায় সুষ্ঠু ভাবে সভা হয় এ দিন। তৃণমূলের একাংশের দাবি, নিত্যানন্দবাবুর অনুগামীদের ‘আস্থা’ পেতেই এই সভা ডাকেন পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায়। দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা উন্নয়নের প্রায় চার কোটি ন’লক্ষ টাকা বিভিন্ন ওয়ার্ডে বরাদ্দ করাও হয় এ দিন। গত কয়েক মাস ধরে গুসকরার নাম যখনই সামনে এসেছে জুড়ে গিয়েছে বিতর্ক। কখনও তৃণমূলের দুই কাউন্সিলরের মধ্যে গোলমাল, কখনও কাউন্সিলরদের মাসিক সভায় হাতাহাতি বেধেছে। পিছিয়ে গিয়েছে শহরের উন্নয়ন। এর মধ্যেই পুরপ্রধানকে সরানোর জন্য ‘শত্রুর শত্রু মিত্র’ এই নীতিতে নিত্যানন্দ-চঞ্চল জুটি দেখা যায় শহরে। যে বাসিন্দারা ওই দুই নেতাকে কোনও দিন পাশাপাশি হাঁটতে দেখেননি, তাঁরাই হাত ধরাধরি করে পুরপ্রধান সরানোর ডাক দেন। এমনকী, দলের পর্যবেক্ষকের নির্দেশ উড়িয়ে দিয়ে নিত্যানন্দবাবুর মদতে তৃণমূলের ছয় কাউন্সিলর তলবি সভা ডেকে পুরপ্রধানকে সরিয়ে দেয়। ওই কাউন্সিলরদের দোসর হয়েছিল তৃণমূল।

ওই সভার সিদ্ধান্ত প্রশাসন কার্যকরী করছে না দেখে নিত্যানন্দবাবু আদালতের দ্বারস্থ হন। বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ওই তলবি সভা বাতিল করে জেলা প্রশাসনের কর্তার উপস্থিতিতে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করাতে বলেন নিত্যানন্দবাবুদের। সেই মতো গত ২৩ মে বর্ধমানের মহকুমাশাসক (সদর) মুফতি মহম্মদ শামিমের উপস্থিতিতে অনাস্থা প্রস্তাব নেওয়া হয়। সেই সভাতেও ধুন্ধুমার বাধে। বোমাবাজি যেমন হয়, তেমনি নিত্যানন্দবাবু-সহ বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে। পুরপ্রধানও পাল্টা দু’জন কাউন্সিলরকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এই তপ্ত আবহাওয়ার মধ্যেই জেলাশাসক ৪ জুন নতুন পুরপ্রধান বাছাইয়ের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের হাজির হয়েছিলেন পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায়। হাইকোর্ট পুরপ্রধান বাছাইয়ের প্রক্রিয়া এক মাস পিছিয়ে দেয়।

গুসকরা বাসিন্দারা ভেবেছিলেন, পুরপ্রধান নির্বাচনকে ঘিরে ফের অশান্তি হবে। অন্যান্য বারের মতো এ বারেও কাউন্সিলরদের মাসিক সভা বাতিল হয়ে যাবে, কিংবা গোলমাল হবে। কিন্তু এ বার কিছুই হল না। সবাইকে কার্যত অবাক করে দিয়ে নিত্যানন্দবাবুর অনুগামী দুই কাউন্সিলর রাখী মাজি ও মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল সভায় হাজির ছিলেন। দলের নির্দেশ মতো সিপিএমের কাউন্সিলররাও ছিলেন। কিন্তু কী এমন ঘটল, যাতে নিত্যানন্দবাবুরা গর্জে উঠলেও শেষ মূহুর্তে থমকে গেলেন?

সিপিএমের বিরোধী দলনেতা মনোজ সাউ বলেন, “নিত্যানন্দ ও বুর্ধেন্দুর মধ্যে পুরসভার ক্ষমতা নিয়ে মনোমালিন্য চলছিল। সে জন্য নিত্যানন্দ পুরপ্রধানের হাত ছেড়ে দিয়ে চঞ্চলবাবুর দিকে এগিয়ে ছিলেন। গোপনে হিসেব মিটতেই পুরনো জুটিকে এক সঙ্গে দেখার ইঙ্গিত দিল এই সভা।” আপাতত নিত্যানন্দবাবু হৃদযন্ত্রের রোগ নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সেখান থেকে তিনি জানিয়েছেন, গুসকরার কোনও খবর তাঁর কাছে নেই! আর তার বিশ্বস্ত অনুগামী রাখী মাজি বলেন, “দলের নির্দেশে অশান্তি মিটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া পরিষেবা যাতে ব্যাহত না হয় সে জন্যই সভায় হাজির হয়েছিলাম।” চঞ্চলবাবুকে বারবার ফোন করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি।

এই সভার পর বেশ তৃপ্ত পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায়। কোন রহস্যে একদা শত্রু হয়ে যাওয়া কাউন্সিলরদের ফের সভায় হাজির করলেন? রহস্য রেখেই হাসতে হাসতে বললেন, “সুষ্ঠু ভাবে সভা শেষ হল, এটাই আনন্দের। আর কোনও বিতর্ক চাই না।”

inter clash Guskara TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy