Advertisement
E-Paper

অঙ্ক উল্টে যেতেই পাল্টে গেল পাণ্ডবেশ্বরের রং

এ যেন একেবারে উলটপুরাণ। আর তাতেই উল্টে গেল ফল। গত বার রাজ্য জুড়ে পরিবর্তনের হাওয়ার মাঝেও পাণ্ডবেশ্বর কেন্দ্রে সিপিএমের গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় জিতেছিলেন হাজার আটেক ভোটে।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৬ ০২:১২

এ যেন একেবারে উলটপুরাণ। আর তাতেই উল্টে গেল ফল।

গত বার রাজ্য জুড়ে পরিবর্তনের হাওয়ার মাঝেও পাণ্ডবেশ্বর কেন্দ্রে সিপিএমের গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় জিতেছিলেন হাজার আটেক ভোটে। কিন্তু এ বার তৃণমূলের জিতেন্দ্র তিওয়ারির কাছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ভোটে হার হয়েছে তাঁর। যে অঙ্কে গত বার পাণ্ডবেশ্বর ধরে রাখতে পেরেছিল বামেরা, এ বার তা পাল্টে যাওয়ার কারণেই কেন্দ্রের রঙ বদল হয়েছে বলে মনে করছে দু’পক্ষ।

সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরে লাউদোহা ও পাণ্ডবেশ্বর ব্লক নিয়ে তৈরি হয় এই আসনটি। তার আগে লাউদোহা ছিল দুর্গাপুর এবং পাণ্ডবেশ্বর উখড়া কেন্দ্রের অন্তর্গত। সিপিএমের একটি সূত্রের খবর, পাণ্ডবেশ্বর কখনও সে ভাবে তাদের দুর্গ ছিল না। কিন্তু লাউদোহা ছিল তাদের শক্ত ঘাঁটি। গত বিধানসভা ভোটে তাই লাউদোহার ভোটের উপরে নির্ভর করেই জয় হয় তাদের। কিন্তু এ বার পাণ্ডবেশ্বরে সিপিএম সামান্য ভোটে এগিয়ে যায়। কিন্তু হার হয়েছে লাউদোহায় পিছিয়ে পড়ে।

সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন।

পরিস্থিতি অবশ্য পাল্টাতে শুরু করেছিল লোকসভা ভোট থেকেই। ২০১৪-র ওই ভোটে পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা এলাকায় বামেরা প্রায় সাড়ে ন’হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়ে তৃণমূলের থেকে। তার মধ্যে পাণ্ডবেশ্বর ব্লকে ব্যবধান হাজার দুয়েক থাকলেও লাউদোহায় তা সাত হাজার ছাড়িয়ে যায়। তবে তা সত্ত্বেও বাম নেতৃত্ব আশা করছিলেন, এ বারও পাণ্ডবেশ্বরে যা ঘাটতি হবে তা পুষিয়ে দেবে লাউদোহা। হল উল্টোটা।

এ বার পাণ্ডবেশ্বর ব্লকে সিপিএম ৩৮১ ভোটে এগিয়ে থেকেছে। অথচ, পাণ্ডবেশ্বরে একমাত্র বহুলা ছাড়া সব পঞ্চায়েতই তৃণমূলের দখলে। জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতিতেও তাদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য। তা সত্ত্বেও এই ব্লকের ছ’টি পঞ্চায়েতের মধ্যে হরিপুর, বৈদ্যনাথপুর ও নবগ্রামে তৃণমূল এগিয়ে যায়। সিপিএম বেশি ভোট পায় ছোড়া, বহুলা ও কেন্দ্রায়। বামেদের আশায় জল ঢেলে লাউদোহায় সব পঞ্চায়েতে এগিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। যা তাদের জয় এনে দিয়েছে।

তবে লোকসভা লোকসভা ভোটে এই আসনে যে পরিমাণ ভোটে তৃণমূল এগিয়ে ছিল, তা ধরে রাখা গেল না কেন? তৃণমূলের এক নেতার ব্যাখ্যা, পাণ্ডবেশ্বর মূলত খনি এলাকা। কিন্তু তৃণমূলের খনি শ্রমিক সংগঠনের নেতা হরেরাম সিংহকে নিয়ে দলের অভ্যন্তরে ক্ষোভ ছিল। সে কারণে শ্রমিক-কর্মীদের অনেকে দল থেকে দূরে সরে গিয়েছেন। তৃণমূলের একটি সূত্রের আবার দাবি, ভোটের আগে হরেরামবাবুর অনুগামীরা ধরে নিয়েছিলেন, তিনি টিকিট পাচ্ছেন। কিন্তু তা না হওয়ায় তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েন। ভোটে তার প্রভাব পড়েছে বলে দলের একাংশের অনুমান। হরেরামবাবু শুধু বলেন, ‘‘দল সব খতিয়ে দেখছে। যা বলার দলীয় নেতৃত্ব সময় মতো বলবেন।’’

তৃণমূলের পাণ্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি নরেন চক্রবর্তী যেখানকার বাসিন্দা, তার কাছাকাছি রয়েছে দু’টি পঞ্চায়েত এলাকা— ছোড়া ও নবগ্রাম। ছোড়ায় ১৮০ ভোটে তৃণমূল পিছিয়ে পড়লেও নবগ্রামে ৬৬৯ ভোটে এগিয়ে যায়। এই ব্লকে দলের নানা গোষ্ঠীর কোন্দলেরও প্রভাব পড়েছে বলে দলের একাংশের ধারণা। লাউদোহায় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায় দলের দুর্গাপুর জেলা সভাপতি উত্তম মুখোরাধ্যায়ের অনুগামী বলে পরিচিত। এই এলাকায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তুলনায় রাশ থাকার ফল এ বার মিলেছে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

হারের কারণ নিয়ে সিপিএমের একাংশের দাবি, গৌরাঙ্গবাবু গত বার জেতার পরে শোনপুর বাজারি প্রকল্প এলাকায় পুনর্বাসন নিয়ে আন্দোলনে প্রথম দিকে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু পরে নরেন-অনুগামীদের বাধার মুখে পড়ে সরে যান। তার পর থেকে তাঁকে এলাকায় আর কোনও আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। সে কারণেই অনেক মানুষ পাশ থেকে সরে গিয়েছেন বলে নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন। এ ছাড়া গত পাঁচ বছরে অনেক বাম কর্মীর তৃণমূলে যোগ, নেতাদের আত্মতুষ্ট আচরণ হারের অন্যতম কারণ বলে তাঁদের দাবি।

তৃণমূল বিধায়ক জিতেন্দ্রবাবুর কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষ প্রার্থী হিসেবে আমাকে ভরসা করেছেন। রাজ্যে উন্নয়নের ধারাও আমাদের পক্ষে গিয়েছে।’’ তিনি দাবি করেন, সিপিএম বিধায়কের পাঁচ বছর মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ও কেন্দ্র জুড়ে ধারবাহিক উন্নয়নের অভাব তাঁদের কাজ সহজ করেছে।

সিপিএমের গৌরাঙ্গবাবু বলেন, “লড়াই করেছে দল। তবে বিধানসভা ভোটে হার-জিত নিয়ে দলে এখনও কোন বিশ্লেষণ হয়নি।’’ সিপিএমের দামোদর-অজয় জোনাল সম্পাদক তুফান মণ্ডলের অভিযোগ, “সন্ত্রাসের কারণে লাউদোহায় জিততে পারিনি। ওখানে ভোট লুঠ আমরা আটকাতে পারিনি। পাণ্ডবেশ্বরের মতো অবাধ ভোট হলে আমরাই জিততাম।’’

assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy