Advertisement
E-Paper

খুনের পিছনে কি পঞ্চায়েত দখল

পুলিশ যে চার জনকে গ্রেফতার করেছে তাঁরাও তৃণমূল কর্মী বলেই এলাকায় পরিচিত। তবে তৃণমূল নেতারা দাবি করেছেন, সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই খুন করেছে সাহাঙ্গির শেখকে। সিপিএম যদিও অভিযোগ মানেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০১:৩৯
হাসপাতালে নিহতের স্ত্রী রিনা বিবি। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে নিহতের স্ত্রী রিনা বিবি। নিজস্ব চিত্র

পঞ্চায়েত নির্বাচনের রায়ে রাজ্য জুড়ে যখন স্বস্তিতে শাসকশিবির, তখন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা কাটোয়া মহকুমার একটি পঞ্চায়েতের ‘দখল’কে ঘিরে উত্তপ্ত হল কৈথন। দলের এক কর্মীর খুনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ করেছে পরিবার। পুলিশ যে চার জনকে গ্রেফতার করেছে তাঁরাও তৃণমূল কর্মী বলেই এলাকায় পরিচিত। তবে তৃণমূল নেতারা দাবি করেছেন, সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই খুন করেছে সাহাঙ্গির শেখকে। সিপিএম যদিও অভিযোগ মানেনি।

গত জুনের শেষে কাটোয়ার গিধগ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ের বাইরে একটি প্লাস্টিকের জারে ১০০টির কাছাকাছি সকেট ও পেট্রোল বোমা মিলেছিল। ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল নিহত সাহাঙ্গিরের। বৃহস্পতিবার বর্ধমান জেলা আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়ে গ্রামে ঢোকেন তিনি। সে দিনই সন্ধ্যায় কৈথনের নীলেরপাড় এলাকায় আচমকা কয়েকজন দুষ্কৃতী তাঁর উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। কুড়ুল ও শাবল দিয়ে পিঠে এলোপাথাড়ি আঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে জমিতে ফেলে পালায় দুষ্কৃতীরা। নিহকের দুই ভাই জাহাঙ্গির শেখ ও মনিরুল শেখ পুলিশকে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে লাঠির ঘায়ে আহত হন তাঁরা। রাতেই তাঁদের কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শুক্রবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর গিধগ্রামের বিদায়ী পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী আজমত শেখ-সহ ৪৭ জনের নামে খুনের অভিযোগ করেন জাহাঙ্গির।

এ দিন হাসপাতালে দাঁড়িয়ে নিহতের স্ত্রী রিনা বিবি দাবি করেন, ‘‘স্বামী তৃণমূল করত। জামিন নিয়ে ফেরার পরেই ওকে শেষ করে দিল। দল দল করেই মানুষটা চলে গেল।’’

তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, পঞ্চায়েতের পরবর্তী প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে গিধগ্রামের বিদায়ী তৃণমূল প্রধান নিলুফা বিবির স্বামী আজমত শেখের সঙ্গে দলেরই আর এক নেতা অ্যালেন শেখের গোলমাল চলছিল কয়েক মাস ধরে। বোমা উদ্ধারের পরে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। মামলায় নাম জড়ায় আজমত ও বিরোধী গোষ্ঠীর সাহাঙ্গির, দু’জনেরই। এলাকায় অশান্তি যাতে না ছড়ায় সে জন্য মাসখানেক ধরে গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশে পাহারা বসায় কাটোয়া থানা। তারপরেও গোলমাল ঠেকানো যায়নি। স্থানীয় সূত্রের খবর, দিন তিনেক আগে জামিন নিয়ে গ্রামে ফেরেন আজমত। তার দু’দিন পরে ফেরেন সাহাঙ্গির। নিহতের ভাই সাগর শেখের দাবি, ‘‘জামিন পেয়ে ফিরে গ্রামের পুলিশ ক্যাম্পে জামিনের প্রতিলিপি জমা দিই। ভাই ফিরেছে জেনেই প্রধানের স্বামী আজমতের নেতৃত্বে দুষ্কৃতীরা পুলিশের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে এমন কাজ করল।’’

যদিও ষড়যন্ত্রের কথা মানতে চায়নি পুলিশ। তৃণমূলের একটা সূত্রের দাবি, গিধগ্রাম পঞ্চায়েত কাটোয়া ১ ব্লক ও কাটোয়া থানার অন্তর্ভুক্ত হলেও এটি মঙ্গলকোট বিধানসভা এলাকার মধ্যে পড়ে। মৃত সাহাঙ্গির অ্যালেন শেখের অনুগামী ছিল। অ্যালেন শেখ আবার মঙ্গলকোটের ব্লক সভাপতি অপূর্ব চোধুরীর ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত। আর আজমত বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামী বলে পরিচিত। এ দিন হাসপাতালে মৃতের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে আসেন দুই নেতা। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এমনটা করেছে। দোষীদের খুঁজে উপযুক্ত শাস্তি দিক পুলিশ। প্রধান কে হবেন তা নির্বাচন করবে দল।’’ অপূর্ববাবুর বক্তব্যও একই। তবে অভিযোগপত্রে তৃণমূল প্রধানের স্বামীর নাম সবার প্রথমে কেন, তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি কোনও পক্ষই। এলাকার সিপিএম নেতাদের দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত দখল নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ধামাচাপা দিতেই আমাদের নাম জড়াচ্ছে তৃণমূল।’’

পুলিশ জানায়, ধৃত সেলিম শেখ, রিয়াজ শেখ, মানিক শেখ ও হাসিবুল শেখকে কৈথনের বাড়ি থেকে এ দিন গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে তোলা হলে সাত দিনের পুলিশ হেফাজত হয় তাঁদের।

এ দিন আতঙ্কে পঞ্চায়েত দফতর যাননি কোনও কর্মী। ব্লক অফিসে লিখিত ভাবে আতঙ্ক, ভয়ের কথা জানিয়েছেন তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদস্যদের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত দখল নিয়েই যত সমস্যা। আবার পাল্টা হামলার আশঙ্কা রয়েছে।’’ কাটোয়া ১-এর বিডিও মারগুব ইলমির যদিও দাবি, ‘‘কর্মীরা আতঙ্কের কথা মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন। একশো দিনের প্রকল্প নিয়ে বৈঠক থাকায় ওঁরা ব্লকে ছিলেন।’’

Dead Hospital TMC Panchayat election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy