E-Paper

দলের নির্দেশ না মেনে প্রধান বাছাইয়ে ভোটাভুটি

জামালপুরের জৌগ্রামে দলের নির্দেশ অমান্য করে ভোটাভুটিতে প্রধান-উপপ্রধান ঠিক করার প্রতিবাদে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য, স্থানীয় বাসিন্দা এমনকী বিজেপির কর্মীরাও এককাট্টা হন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৫৭
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

দলীয় নির্দেশ অমান্য করে বহু জায়গায় ভোটাভুটি করে প্রধান, উপপ্রধান নির্বাচন করলেন তৃণমূলের সদস্যেরা। আবার কোথাও দলের মনোনীত প্রধান-উপপ্রধানকে বদলে দিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য। নির্দেশ না মানার পিছনে পঞ্চায়েত স্তরের গোষ্ঠী-রাজনীতিই কারণ, দাবি দলের একাংশের।

বৃহস্পতিবার জেলার ২১৫টি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন ছিল। তার মধ্যে ২০৯টি পঞ্চায়েতে তৃণমূল বোর্ড গঠন করে। বিরোধীদের দখলে পাঁচটি পঞ্চায়েত। প্রধান নির্বাচন নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে পূর্বস্থলী ২ ব্লকের পিলা পঞ্চায়েতে চরম বিশৃঙ্খলা হয়। তার জেরে বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেয় ব্লক প্রশাসন। বিডিও সৌমিক বাগচি জানিয়েছেন, আপাতত প্রধান-উপপ্রধানের শপথ পর্ব ওই পঞ্চায়েতে স্থগিত রাখা হয়েছে।

জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চার-পাঁচটি জায়গায় দলের নির্দেশ অমান্য হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। সংশ্লিষ্ট ব্লক থেকে রিপোর্ট নেওয়া হচ্ছে। রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হবে।’’

জামালপুরের জৌগ্রামে দলের নির্দেশ অমান্য করে ভোটাভুটিতে প্রধান-উপপ্রধান ঠিক করার প্রতিবাদে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য, স্থানীয় বাসিন্দা এমনকী বিজেপির কর্মীরাও এককাট্টা হন। দু'আড়াই ঘণ্টা ধরে পঞ্চায়েত অফিসের সামনে বসে তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। বিজেপি কর্মীদের দাবি, জৌগ্রামে তৃণমূলের জয়ী সৌমেন কোলের উপপ্রধান হওয়ার কথা ছিল। গ্রামের ছেলেকে অন্যায় ভাবে বাদ দেওয়ার জন্যই ধর্না। সৌমেনের জায়গায় উপপ্রধান হয়েছেন শাজাহান মণ্ডল। আর কৃষ্ণা সরকারের জায়গায় প্রধান হয়েছেন অঞ্চল সভাপতি মৃদুলকান্তি মণ্ডলের স্ত্রী মল্লিকা। সৌমেনের অভিযোগ, ‘‘ভোটাভুটি করে দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে দেওয়া হল। দলের নির্দেশ মেনে আমরা কয়েক জন ভোটে যাইনি।’’ ১৯ জন তৃণমূল সদস্যের মধ্যে ১৪ জন ভোট দেন সেখানে। ১৩ জনই মল্লিকাকে ভোট দেন। বর্ধমান ২ ব্লকের গোবিন্দপুরে ভোটাভুটিতে দলের প্রার্থী লতা হাঁসদাকে হারিয়ে দেন প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান বাণী মান্ডি। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন আগে বিজেপির জয়ী প্রার্থী লতা তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁকে প্রধান হিসেবে মানতে নারাজ ছিলেন বাকিরা। বিধায়ক (বর্ধমান উত্তর) নিশীথ মালিক বলেন, ‘‘সকালেই প্রধান বদলে দিয়েছিল দল। তার পরেও ভোটাভুটি কেন হল বুঝতে পারছি না!’’

গলসি ১ ব্লকের মানকর, বুদবুদ, চাকতেঁতুল ও গলসি ২ ব্লকের কুরকুবা ও শিড়রাইতে ভোটাভুটি হয়। দলীয় তালিকায় নাম থাকা গলসি ১ ব্লকের তিনটি পঞ্চায়েতেই প্রধানেরা হেরে গিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। গলসি ১ ব্লক সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দলের জেলা ও রাজ্য স্তরে জানানো হয়েছে।” পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন হওয়ার পরে পদক্ষেপ করা হবে বলে তিনি জানান। শিড়রাইয়ে তালিকায় প্রধান পদে দিলু বাগদি ও উপপ্রধান নজরুল ইসলাম মল্লিকের নাম ছিল। তার বদলে সোনালি দাসবৈরাগ্যকে প্রধান ও কাজল মল্লিকে উপপ্রধান করা হয়। ১৬ আসনের কুরকুবায় তৃণমূল পেয়েছিল ১৩টি। একটি কংগ্রেস ও দু’টি আসন সিপিএম পায়। এ দিন সদস্যেরা ইসমাতারা মল্লিককে প্রধান ও উপপ্রধান পদে অর্চনা বাগদির নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু ভোটাভুটি ৭-৬ ভোটে জিতে যান দলের মনোনীত হাফিজুর রহমান ও টুম্পা বাগদি। গলসির বিধায়ক নেপাল ঘরুই বলেন, “এ বিষয়ে আমরা যা বলার দলের নেতৃত্বকে জানিয়েছি।”

ভাতারের আমারুন ১ পঞ্চায়েতেও তালিকায় নাম থাকা প্রধান বদল হয়। বিধায়ক সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করে সাবিত্রী মান্ডিকে প্রধান করেন। ভাতার ও বড়বেলুন ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধানও বদল হয়েছে। আউশগ্রাম ২ ব্লকের এড়াল, ভেদিয়ায় প্রধান বদল হয়। তালিকায় থাকা প্রার্থীর নাম প্রস্তাবের পরেই দলের আর একটি গোষ্ঠী অন্য নাম প্রস্তাব করে। দু'টি পঞ্চায়েতেই তালিকায় থাকা প্রধানের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য না থাকায় ভোটাভুটি হয়নি। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, ওই দু’টি পঞ্চায়েতে ব্লক সভাপতি রামকৃষ্ণ চক্রবর্তীর অনুগামী বেশি, সেখানে প্রধান-উপপ্রধান হয়েছিলেন বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দারের অনুগামীরা। সে কারণে দলীয় সিদ্ধান্ত ‘পাল্টে’ দেন সদস্যেরা। বিধায়কের আশা, সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে। ব্লক সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

মেমারি ২ ব্লকের সাতগেছিয়া ২ পঞ্চায়েতের সদস্যদের পঞ্চায়েত থেকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, এই পঞ্চায়েতের সব সদস্যের শংসাপত্র ব্লক নেতৃত্ব নিয়ে রেখেছিল। দলের তালিকায় থাকা প্রধান বিরোধীদের শংসাপত্র ফেরত দেননি বলে অভিযোগ। আর শংসাপত্র দেখাতে পারেননি বলে প্রশাসন পঞ্চায়েত থেকে বার করে দেয়।

কালনা ১ ব্লকের সুলতানপুর পঞ্চায়েতে জয়িতা আজমির বদলে প্রমীলা মুর্মুর নাম প্রস্তাব করা হয়। ভোটাভুটি শুরুর মুখে সভাকক্ষ থেকে জয়িতা-সহ তিন জন চলে যান। প্রমিলা প্রধান হন। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নসরৎপুরে ৩০টি আসনের মধ্যে ২৫টি আসন জেতে তৃণমূল। ছায়া ঘোষ ও আনারুল শেখের বদলে প্রধান হন কানন মণ্ডল ও মোবিল হোসেন মণ্ডল। তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘দলীয় নির্দেশ অমান্যকারীদের শাস্তি পেতে হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy