E-Paper

বিক্ষোভে অনড় টিএমসিপি, কাজকর্ম ব্যাহত

আন্দোলনের নেপথ্যে ‘সস্তা রাজনীতি’ রয়েছে দাবি করে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার অভিযোগ তুলেছে একাধিক শিক্ষক সংগঠন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৪ ০৭:৪৩
তালা দিয়ে বিক্ষোভ।

তালা দিয়ে বিক্ষোভ। — নিজস্ব চিত্র।

কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন মঙ্গলবারও জারি রাখল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)। প্রশাসনিক ভবনের সঙ্গে উপাচার্য ও নিয়ামকের চেম্বারেও এ দিন তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ফলে, কাজে যোগ দিতে পারেননি উপাচার্য, নিয়ামক-সহ প্রশাসনিক কর্তারা। আন্দোলনের জেরে পঠনপাঠনেও বিঘ্ন ঘটেছে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন উপাচার্য। আন্দোলনের নেপথ্যে ‘সস্তা রাজনীতি’ রয়েছে দাবি করে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার অভিযোগ তুলেছে একাধিক শিক্ষক সংগঠন। টিএমসিপি-র পাল্টা দাবি, পড়ুয়াদের স্বার্থেই এই আন্দোলন।

আইনি লড়াইয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে বহু টাকা খরচ করা হয়েছে, এই অভিযোগে সোমবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সদর দরজায় তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ-অবস্থানে বসেন টিএমসিপি সমর্থকেরা। মঙ্গলবারও তা চলে। এ দিন তাঁদের চেম্বারে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় এ দিনও কাজে যোগ দিতে পারেননি উপাচার্য দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, নিয়ামক চন্দন কোনার-সহ প্রশাসনিক দফতরের আধিকারিকেরা। পড়ুয়াদের একাংশ অভিযোগ করেন, ক্রমাগত স্লোগান ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। পঠনপাঠনে বিঘ্ন ঘটছে। উপাচার্য বলেন, ‘‘যাঁরা আন্দোলন করছেন তাঁদের বুঝতে হবে, শিক্ষাঙ্গনে প্রধান কাজ হল নির্বিঘ্ন পঠনপাঠন। তাতে বিঘ্ন ঘটলে পড়ুয়াদের ক্ষতি। এ কথা বুঝে আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।’’

ছাত্র সংগঠনের এই আন্দোলনের নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপির শিক্ষক সেলের আহ্বায়ক বিকাশ বিশ্বাসের। তাঁর দাবি, ‘‘এই উপচার্য যেহেতু রাজ্যপালের মনোনীত, তাই তাঁকে যে কোনও উপায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া করাই লক্ষ্য। রাজ্য জুড়ে শিক্ষাক্ষেত্রে এমন নৈরাজ্য তৈরি করেছে শাসক দল ও তাদের সংগঠনগুলি। কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ও তার বাইরে নয়।’’ কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন ওয়েবকুটার পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘এমন আন্দোলনের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। ফল ভুগছেন পড়ুয়ারা।’’ তাঁর অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে বহু বিতর্ক হয়েছে কয়েক বছরে। প্রাক্তন উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন শিক্ষকদের একাংশ। বর্তমান উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে ছাত্র সংগঠন। চন্দনের মতে, যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কেউ মামলা করে, কর্তৃপক্ষকে আইনি লড়াই তো করতে হবে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকেই খরচ হবে। টিএমসিপির এই আন্দোলনকে অবশ্য সমর্থন করেছেন অন্য শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার জেলা আহ্বায়ক বীরু রজক। তিনি বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই আন্দোলন হচ্ছে। উপাচার্যের উচিত, পড়ুয়াদের সঙ্গে বৈঠক করে এর সমাধান করা।’’

প্রশাসনিক কাজ অচল করে এমন আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে এসএফআই। সংগঠনের তরফে পড়ুয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এর বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি জেলা নেতৃত্বের। জেলা এসএফআই সম্পাদক সুদীপ কুড়ির দাবি, ‘‘শিক্ষাক্ষেত্রে এখন মত্ত হাতির দাপাদাপি চলছে। ১৩ বছর ধরে বাংলার প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে এক পরিবেশ। নজরুলের নামাঙ্কিত এই বিশ্ববিদ্যালয়েও অরাজকদশা চলছে।’’

আন্দোলনের প্রশ্নে নিজেদের দাবিতে অনড় রয়েছেন টিএমসিপি নেতৃত্ব। সংগঠনের জেলা সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘কে কী ভাবে ব্যাখ্যা করছেন, সে নিয়ে ভাবছি না। পড়ুয়াদের স্বার্থ আমাদের কাছে আগে। সেই দাবিতেই লড়াই চলছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘ছাত্রীদের হস্টেলে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই। অর্থাভাবের কারণ দেখিয়ে দায় সারেন কর্তৃপক্ষ। উন্নত রসায়নগার, পাঠাগার কিছুই নেই। কর্তৃপক্ষের উচিত, সর্বাগ্রে এ সবের ব্যবস্থা করা।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kazi Nazrul University TMCP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy