Advertisement
E-Paper

নতুন পেশায় হাত পাকানোর চেষ্টা

ক্ষুদিরাম সরণির ধারে ফুচকা বিক্রি করেন উজ্জ্বল রায়। তিনি জানান, তিনি ও তাঁর ভাই একটি বাস পরিষেবা সংস্থার কর্মী ছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২০ ০৪:১৮
ফুচকা বিক্রি করছেন উজ্জ্বল রায়। দুর্গাপুরের ডিভিসি মোড়ে। ছবি: বিকাশ মশান

ফুচকা বিক্রি করছেন উজ্জ্বল রায়। দুর্গাপুরের ডিভিসি মোড়ে। ছবি: বিকাশ মশান

করোনা-পরিস্থিতিতে পুরনো পেশায় রোজগার বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে দুর্গাপুরের অনেকেই নতুন পেশায় নিজেদের সড়গড় করে তোলার চেষ্টা চালানোর কথা জানিয়েছেন।

দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের নাগার্জুন এলাকার সহদেব সূত্রধর সিটি সেন্টারের একটি বেসরকারি সংস্থায় অস্থায়ী কর্মী ছিলেন। ‘লকডাউন’-এ সে কাজ বন্ধ। বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধা মা ও স্ত্রী। সংসার চালাতে ঘুরে-ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি শুরু করেছেন তিনি। প্রথমে অপটু হাতে চরম সমস্যায় পড়তেন। তবে এখন অনেকটাই সামলে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ঝালমুড়ি খেতে ভাল লাগে। তাই ভাবলাম, আমিও ঝালমুড়ি বিক্রি করব। কিন্তু মুড়ির সঙ্গে যে সব উপাদান যোগ করতে হয়, তার মাপ এ দিক-ও দিক হলে ঝালমুড়িতে স্বাদ আসে না।’’ তিনি জানান, প্রথমে অনেকেই ঝালমুড়ি খেয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। ক্রেতাদের কাছে নিজের সমস্যার কথা স্বীকারও করেছেন। তবে তিনি বলেন, ‘‘ওই ক্রেতাদের অনেকেই ফের আসেন ঝালমুড়ি কিনতে।’’ পাড়ার মোড়ে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝালমুড়ি বিক্রি করেন তিনি। রোজগার হয় প্রায় ৫০-৬০ টাকা। তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে রেশনের সামগ্রী রয়েছে। কোনও রকমে সংসার চলে যাচ্ছে।’’ অথচ, মাস গেলে তিনি মাইনে পেতেন প্রায় সাড়ে ছ’হাজার টাকা।

ক্ষুদিরাম সরণির ধারে ফুচকা বিক্রি করেন উজ্জ্বল রায়। তিনি জানান, তিনি ও তাঁর ভাই একটি বাস পরিষেবা সংস্থার কর্মী ছিলেন। ‘লকডাউন’-এ দু’জনেরই কাজ বন্ধ। তাঁদের বাবা অটোচালক। অটো চলাচলও বর্তমানে বন্ধ। উজ্জ্বলবাবু বলেন, ‘‘আমার মামা বরাবর ফুচকা বিক্রি করেন। তাঁর কাছে গিয়ে মাঝে-মধ্যে হাত লাগিয়েছি। তাই মোটামুটি ভাবে ফুচকা তৈরি করতে পারি। ছ’জনের সংসার সামাল দিতে তাই এটাই করছি।’’ তবে, প্রথম দিকে নুন, পেঁয়াজ, তেঁতুল-জলের পরিমাণ নিয়ে ক্রেতাদের অনেকের অভিযোগ থাকত। যত দিন যাচ্ছে, অভিযোগ কমছে। গড়ে দিনে শ’দেড়েক টাকা রোজগার হয় ফুচকা বিক্রি করে।

পুরনো পেশার অনিশ্চয়তা এবং নতুন পেশাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাওয়ার এই প্রবণতাটি চর্চায় রয়েছে অর্থনীতির শিক্ষকদের। তাঁদের একাংশের মতে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও পুরনো পেশায় সবাই আর ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক ভাস্কর গোস্বামী মনে করেন, “অসংগঠিত শ্রম-ক্ষেত্রে জীবনধারণের জন্য মানুষের এই প্রবণতা খুবই স্বাভাবিক। কিছু ক্ষেত্রে বিষয়টি ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরেও পুরনো পেশায় ফেরত যাওয়াটা কঠিন হবে।” বিষয়টি নিয়ে রানিগঞ্জ টিডিবি কলেজের অধ্যক্ষ তথা অর্থনীতির শিক্ষক অশিসকুমার দে-র প্রতিক্রিয়া, “উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রায় স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় জাতীয় আয় কমছে। কর্ম-সঙ্কোচনের ঘটনা তাই স্বাভাবিক। এই পরিস্থিতিতে চাকরি যাওয়া, পুরনো পেশাকে ধরে থাকতে না পারার মতো ঘটনা ঘটছে।”

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy