Advertisement
০৭ মে ২০২৪

মাঠে লড়ে জীবন গড়ছে দুই মেয়ে

অজয়ের ধার ঘেঁষা তালডাঙা গ্রামে বাবা, মা, দাদার সঙ্গে থাকে দাসী। কাশেমনগর বিএনটিপি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দেবে সে। বাবা সুকল কিস্কু দিনমজুর, মা সুখী কিস্কু গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে মিড-ডে মিল রান্নার কাজ করেন।

সফল: পোস্টারে সুস্মিতা।

সফল: পোস্টারে সুস্মিতা।

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
গুসকরা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৭ ০২:৩৩
Share: Save:

ভোর হলেই ফুটবল হাতে মাঠে ছোটে মেয়েটা। খাওয়া-দাওয়া, জামাকাপড়, এমনকী, বইপত্র না জুটলেও ফুটবল ছাড়া দিন কাটে না তার। মাঠের লড়াইয়েই জেলা প্রশাসনের কন্যাশ্রীর পোস্টারে জায়গা করে নিয়েছে মঙ্গলকোটের দাসী কিস্কু। গুসকরার সুস্মিতা রায়ও খেলার জোরেই ঠাঁই পেয়েছে পোস্টারে। তার হাতিয়ার কিক বক্সিং। শুক্রবার কন্যাশ্রীর আরও আট ‘পোস্টার গার্ল’র-এর সঙ্গে পুরস্কার পেয়েছে এই দু’জনও।

অজয়ের ধার ঘেঁষা তালডাঙা গ্রামে বাবা, মা, দাদার সঙ্গে থাকে দাসী। কাশেমনগর বিএনটিপি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দেবে সে। বাবা সুকল কিস্কু দিনমজুর, মা সুখী কিস্কু গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে মিড-ডে মিল রান্নার কাজ করেন। তবে অভাবের সংসার পিছু টানতে পারেনি দাসীকে। সুখীদেবী জানান, ছোট থেকে দাদার সঙ্গে মাঠে গিয়ে ফুটবল খেলত দাসী। নেশা এখন অভ্যাস। সুখীদেবী বলেন, ‘‘মেয়েটাকে ঠিকমতো খেতে দিতে পারি না। টিউশনের মাইনেও দিতে পারি না। নিজের চেষ্টায় যতটুকু পারে খেলে।” দাসী বলে, ‘‘এখানে মেয়েদের কোনও টিম নেই। তাই ছেলেদের সাথে রাইট আউটে খেলি।”

তবে জন্মের শংসাপত্র না থাকায় বাইরে কোথাও খেলতে যেতে পারে না দাসী। স্কুলের সব প্রতিযোগিতায় খেলত সে। সহপাঠী রিনা কিস্কু, সরলা কিস্কুরা জানায়, ‘‘যে খেলায় দাসী নাম দেবে তাতে ওই চ্যাম্পিয়ন হবে। তাই বাকিরা দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থানের জন্য খেলত।’’ আগামী দিনে বাংলার হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখে দাসী। গুসকরায় মহিলা ফুটবলের কোচিং ক্যাম্পের এক কর্তা বিনয় রায় জানান, “ও আমাদের মাঠে এসে অনুশীলন করলে সব রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত আমরা। সুযোগের অভাবে গ্রামের একটা প্রতিভা হারিয়ে যাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না।”

ফুটবলার দাসী কিস্কু

গুসকরার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুস্মিতা ২০১৬ সালে রাজ্য কিক বক্সিং প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ান। তার বাবা ভোলা রায়ের একটি ছবি বাঁধাইয়ের দোকান রয়েছে। সেই আয়েই চলে স্ত্রী ও চার ছেলেমেয়ের সংসার। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই সুস্মিতার দিদির বিয়ে হয়েছিল। সুস্মিতা অবশ্য সে পথে হাঁটেনি। গুসকরা বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এই ছাত্রী রাজ্য ও জাতীয় স্তরে একাধিক পদক জিতেছে একাধিক পদক। গত বছর দিল্লিতে জাতীয় কিক বক্সিং প্রতিযোগিতায় ৫৫ কেজি বিভাগে ব্রোঞ্জ জেতে সে। মা চন্দনাদেবী বলেন, ‘‘ছোট থেকে টিভিতে কিক বক্সিং দেখত ও। আগ্রহ দেখে এক প্রশিক্ষকের কাছে ভর্তি করেছিলাম। তবে যে সমস্ত সামগ্রী লাগে তা কেনার সামর্থ্য ছিল না।’’ মেয়ের স্বপ্নপূরণে লোকের বাড়িতে রান্না ও সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন তিনি। সুস্মিতা জানায়, প্রশিক্ষক পার্থসারথি পালের সাহায্যে নিয়মিত ঘণ্টা তিনেক কিক বক্সিং ও ক্যারাটে অনুশীলন করে সে। লক্ষ্য ২০২০-র রিও অলিম্পিক। সুস্মিতার স্কুলের শিক্ষিকা সহেলি মণ্ডল জানান, ‘‘সীমিত ক্ষমতা দিয়ে যতটা পারি ওর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি আমরা।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kanyashree কন্যাশ্রী
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE