Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অভাব সত্ত্বেও সাফল্য দুই আদিবাসী ছাত্রের

সংসারে অনটন নিত্য সঙ্গী। একজনের বাড়িতে বিদ্যুতের আলো পর্যন্ত নেই। আরেকজন আবার মায়ের গৃহস্থালীর কাজে নিয়মিত হাত লাগায়। তবে এ সব কিছু সামলেই দুর্গাপুরের দুই আদিবাসী পরিবারের সন্তান প্রসাদ মুন্ডা ও রবীন মুর্মু এ বারের মাধ্যমিকে তাক লাগানো ফল করেছে।

বাঁ দিকে, রবিন মুর্মু ও ডান দিকে, প্রসাদ মুন্ডা। —নিজস্ব চিত্র।

বাঁ দিকে, রবিন মুর্মু ও ডান দিকে, প্রসাদ মুন্ডা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ০১:৪৬
Share: Save:

সংসারে অনটন নিত্য সঙ্গী। একজনের বাড়িতে বিদ্যুতের আলো পর্যন্ত নেই। আরেকজন আবার মায়ের গৃহস্থালীর কাজে নিয়মিত হাত লাগায়। তবে এ সব কিছু সামলেই দুর্গাপুরের দুই আদিবাসী পরিবারের সন্তান প্রসাদ মুন্ডা ও রবীন মুর্মু এ বারের মাধ্যমিকে তাক লাগানো ফল করেছে।

দুর্গাপুরের গ্যামন ব্রিজ এলাকার বীরশা মুন্ডা কলোনিতে এক চিলতে মাটির ঘরে বাসা পেশায় ঠিকাকর্মী অমূল্য মুন্ডার। তাঁরই ছোট ছেলে প্রসাদ এ বার দুর্গাপুর প্রজেক্টস বয়েজ হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছে। প্রাপ্ত নম্বর ৬০৯। প্রসাদের দিদি মুনমুনও কলেজের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। প্রসাদের মা ঝন্‌কাদেবী জানান, তাঁর দুই ছেলেমেয়ে কুপির আলোতেই পড়াশোনা করে। প্রসাদ জানায়, স্কুলের মাস্টারমশাইরা তাকে নিয়মিত সাহায্য করেছে। স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক জয়নুল হক বলেন, ‘‘প্রসাদ প্রতিটি ক্লাস মনোযোগের সঙ্গে করতো। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করেছি ওর পাশে থাকতে।’’ প্রসাদের প্রিয় বিষয় ভূগোল। ভবিষ্যতে সে শিক্ষক হতে চায়। পড়াশোনার পাশপাশি রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গানের ভক্ত প্রসাদ বলে, ‘‘শিক্ষক হয়ে ভবিয্যতে আদিবাসী সমাজের মধ্যেও শিক্ষার প্রসার ঘটাতে চাই।’’ তবে ছেলেমেয়ের উচ্চশিক্ষার টাকা কী ভাবে জোগাড় হবে তা জানেন না রাতুড়িয়া-অঙ্গদপুর শিল্পাঞ্চলের কারখানায় অস্থায়ী ঠিকাকর্মী অমূল্যবাবু। তিনি বলেন, ‘‘কেউ এগিয়ে না এলে হয়তো ছেলের স্বপ্ন আর সফল হবে না।’’

মাধ্যমিক পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞানে ৯০ পাওয়া কাঁকসার মলানদিঘির রবীন মুর্মু হতে চায় ইঞ্জিনিয়র। মলানদিঘি দুর্গাদাস বিদ্যামন্দির থেকে রবীন এ বার মাধ্যমিকে ৫৬৯ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। রবীনের বাবা পেশায় ভ্যান চালক সুধীরবাবু বাড়ি বাড়ি রান্নার গ্যাস পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন। রবীনের বোন পার্বতীও প়ঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া। রবীনের বাবা সুধীরবাবু ও মা মালতীদেবী— দু’জনেরই আশা, ‘‘ছেলের উচ্চশিক্ষার জন্য কোনও সহৃদয় ব্যক্তি নিশ্চয় পাশে দাঁড়াবেন।’’ পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেটের ভক্ত রবীন। রবীন জানায়, বছরভর স্কুলের শিক্ষকদের থেকে বিভিন্নভাবে সাহায্য পেয়েছে সে। বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক তন্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগামী দিনে রবীন যাতে পডা়শোনা চালিয়ে যেতে পারে তার জন্য স্কুলের তরফে সবরকম সাহায্য করা হবে।’’

তবে দু’জনেই জানে সামনের পথ আরও কঠিন। তবে দমে না গিয়ে দু’জনেই শেষ পর্যন্ত বলতে চায় ‘চরৈবেতি।’ প্রদীপও গুনগুন করে ওঠে, ‘‘সমুখে ওই হেরি পথ...।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE