Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Union Budget 2023

শুধু তহবিলে কতটা লাভ, ধন্দে শিল্পাঞ্চল

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসার ঘটাতে ‘ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম’-এর জন্য ৯ হাজার কোটি টাকার তহবিল গড়ার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন।

বাজেট অধিবেশনের পরে প্রেস সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী।

বাজেট অধিবেশনের পরে প্রেস সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী। ছবি পিটিআই।

সুব্রত সীট , সুশান্ত বণিক
দুর্গাপুর, আসানসোল শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:০৫
Share: Save:

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসার ঘটাতে বড় তহবিল তৈরির কথা ঘোষণা হল কেন্দ্রীয় বাজেটে। কিন্তু শিল্পের প্রসারে তা কতটা কাজে আসবে, সে নিয়ে সন্দিহান পশ্চিম বর্ধমান শিল্পাঞ্চলের অনেক শিল্পোদ্যোগী। কেউ-কেউ অবশ্য আশার আলোও দেখছেন। বুধবার বাজেট নিয়ে এমনই মিশ্র প্রতিক্রিয়া ধরা পড়ল খনি-শিল্পাঞ্চলে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসার ঘটাতে ‘ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম’-এর জন্য ৯ হাজার কোটি টাকার তহবিল গড়ার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে ইস্পাত অনুসারী শিল্প হিসেবে এক সময়ে রমরমা ছিল ক্ষুদ্র ইঞ্জিনিয়ারিং, ফেব্রিকেশন, রিফ্যাক্টরি শিল্পের। এক সময়ে এমন কারখানার সংখ্যা ছিল শ’খানেক। সগড়ভাঙার আরআইপি শিল্পতালুক, জাকির হোসেন অ্যাভিনিউ প্রভৃতি জায়গায় কারখানাগুলি গড়ে উঠেছিল। জানা গিয়েছে, এখন কোনও রকমে ৫০-৬০টি চালু রয়েছে।বাকিগুলিতে হয় উৎপাদন বন্ধ, অথবা একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দুর্গাপুরের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের সংগঠন ‘দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ় অ্যাসোসিয়েশন’-এর উপদেষ্টা তথা প্রাক্তন সভাপতি সুব্রত লাহা বলেন, ‘‘উৎপাদিত সামগ্রীর বাজার নেই। বরাত মেলে না। ফলে, সমস্যা দিন-দিন বেড়ে চলেছে।’’

এ দিন ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকার তহবিল গড়ার কথা ছাড়াও, ২ লক্ষ কোটি টাকার অতিরিক্ত ‘কো-ল্যাটারাল ফ্রি গ্যারান্টি ক্রেডিট’-এর কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সুব্রতর মতে, ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমে বন্ধকি ছাড়াই ঋণ দেওয়া হয়। তাই তহবিল গঠনের উদ্যোগ ইতিবাচক।‘কো-ল্যাটারাল ফ্রি গ্যারান্টি ক্রেডিট’-এর আওতায় ছোট-বড় সব শিল্পোদ্যোগীই ঋণ পাবেন। কিন্তু পুরো বিষয়টির উপরে সরকার বা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কোনও নজরদারি নেই।ফলে, এক-এক ব্যাঙ্ক এক-এক রকম হারে সুদ নেয়। কোনও শিল্পোদ্যোগী ঋণ না পেলে কার কাছে অভিযোগ জানাবেন, তা জানা নেই। তা ছাড়া, কাঁচামালের দাম-সহ আনুষঙ্গিক খরচ বেড়েছে। কিন্তু ঋণের সীমা বাড়ানো হয়নি। তাঁর দাবি, ‘‘শুধুমাত্র তহবিল গঠন করে সমস্যা মিটবে না। ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের প্রকৃত বিকাশ ঘটাতে গেলে আগে এ সবের সুরাহা করতে হবে।’’

‘ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর সাধারণ সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ রায়ের অবশ্য মত, আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে এখন নতুন ভারী শিল্প আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পরিকাঠামো উন্নয়ন হলে ইস্পাত ও কয়লা অনুসারী শিল্প গড়ে উঠবে। ফলে, কর্মসংস্থান বাড়বে। তবে যতটা আশা করেছিলেন, ততটা উপকার হবে না বলে মনে করছেন আর এক শিল্পোদ্যোগী রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান।তিনি বলেন, ‘‘বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে উন্নয়নে যে ব্যয় বরাদ্দ দরকার, এ বারের বাজেটে কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়।’’ তবে কৃষিক্ষেত্রে বাজেটে বাড়তি নজর দেওয়ায় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে উদ্যোগপতিরা আগ্রহী হবেন বলে মনে করছেন তিনি।

এ বারের বাজেটকে ‘প্রগতিশীল’ বলে মনে করেছেন সিমেন্ট শিল্পের সঙ্গে যুক্ত উদ্যোগপতি পবন গুটগুটিয়া। তাঁর আরও মত, বাজেটে আয়কর নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাতে সাধারন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার ইঙ্গিত রয়েছে। তাতে বাজার চাঙ্গা হবে।রানিগঞ্জের বণিক সংগঠনের সদস্য অজয় খেতান আবার এই বাজেট একেবারেই সাধারণ মানুষের পক্ষে নয় বলে মনে করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এত সহজে বাজেট বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। তবে বাজেটে এমন কিছু নেই যা থেকে বলা যেতে পারে, সাধারন মানুষ উপকৃত হবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE