Advertisement
E-Paper

দূষণ রুখতে মুখে ‘মাস্ক’ শহর জুড়েই

দূষণের হাত থেকে বাঁচতে দুর্গাপুরে বাড়ছে মাস্ক পরার প্রবণতা। শীতের শুরুতে শিশুদের অনেকেরই শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়। চিকিৎসকেরাও বাইরে বার হওয়ার সময়ে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেন। সেই কথা মাথায় রেখে এই মুহূর্তে অনেক অভিভাবককেই দেখা যাচ্ছে ছেলে-মেয়েদের মাস্ক পরিয়ে স্কুলে পাঠাচ্ছেন।

অর্পিতা মজুমদার

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৮ ০১:২৯
দুর্গাপুরে। নিজস্ব চিত্র।

দুর্গাপুরে। নিজস্ব চিত্র।

শিল্পাঞ্চল হওয়ার কারণে এমনিতেই দুর্গাপুরে দূষণের মাত্রা নিয়ে সবসময়েই চিন্তায় থাকেন পরিবেশকর্মীরা। কিছু দিন আগে পুজোর সময়ে সেই দূষণের মাত্রা বেড়েছিল অনেকটাই। এই পরিস্থিতিতে শহরের পড়ুয়া, মধ্যবয়স্কদের অনেককেই দেখা যাচ্ছে ‘মাস্ক’ পরে রাস্তায় বার হচ্ছেন। বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

শহরের পরিবেশকর্মীরা জানান, এলাকায় বহু কলকারখানা রয়েছে। তা ছাড়া অতিরিক্ত মুনাফার লোভে অনেক কারখানা দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র ব্যবহার করে না। এমন নানা কারণে বাতাসে বিপজ্জনক ভাসমান কণার পরিমাণ বাড়ে। কার্বন, সিলিকা, অ্যাসবেস্টস, লোহা, ম্যাঙ্গানিজের আকরিকের গুঁড়ো থেকে শুরু করে কয়লার গুঁড়োও বাতাসে মেশে। পুজোর মরসুমে তা আরও বাড়ে। পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা (১০ মাইক্রোমিটারের থেকে ছোট আকারের) ও সালফার-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড যৌগের পরিমাণ কত, তার নিরিখেই বায়ু দূষণের মাত্রা মাপা হয়। দুর্গাপুরে কালীপুজো ও দীপাবলির রাতে বাকিগুলি নির্ধারিত মাত্রার নীচে থাকলেও দুশ্চিন্তায় ফেলে ভাসমান ধূলিকণার মাত্রা। বাতাসে ১০ মাইক্রোমিটারের ছোট আকারের ভাসমান ধূলিকণার গড় স্বাভাবিক পরিমাণ, প্রতি ঘনমিটারে ১০০ মাইক্রোগ্রাম। চিকিৎসকেরা জানান, কিন্তু ২.৫ মাইক্রন আকারের কণা ফুসফুসের অ্যালভিওলাইতে গিয়ে সংক্রমণ ছড়ায়। এ বছর কালীপুজোর রাতে তা সর্বোচ্চ ২৬৫ ও দেওয়ালির রাতে পৌঁছয় ২৬৮-তে। চিকিৎসকেরা জানান, মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে শ্বাসনালীর সংক্রমণ বাড়ছে। তাছাড়া যাঁদের অ্যাজমা, ‘ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ’ (সিওপিডি) রয়েছে তাঁদের শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে দূষণের হাত থেকে বাঁচতে দুর্গাপুরে বাড়ছে মাস্ক পরার প্রবণতা। শীতের শুরুতে শিশুদের অনেকেরই শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়। চিকিৎসকেরাও বাইরে বার হওয়ার সময়ে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেন। সেই কথা মাথায় রেখে এই মুহূর্তে অনেক অভিভাবককেই দেখা যাচ্ছে ছেলে-মেয়েদের মাস্ক পরিয়ে স্কুলে পাঠাচ্ছেন। নবম শ্রেণির পড়ুয়া শিল্পী তালুকদার নামে এক জন বলে, ‘‘শীত পড়লেই হাঁচি-কাশি বাড়ে। মাস্ক ব্যবহারে অনেকটাই ভাল থাকি।’’ দুর্গাপুর স্টেশন লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা প্রীতি দাসের ছেলে প্রীতম ডিএসপি টাউনশিপের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ে। প্রীতি জানান, মাস্ক পরিয়েই ছেলেকে স্কুলে পাঠান তিনি।

কিন্তু কোন ধরনের মাস্ক উপযোগী? চিকিৎসকেরা জানান, বাজার থেকে কেনা সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। যাঁদের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা অন্তত কাপড় বা স্কার্ফ দিয়েও বাচ্চার নাক ঢেকে দিতে পারেন। তাতেও উপকার হবে।

শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয়া, ফুলের রেণু— এ’সবই শ্বাসকষ্টের কারণ। যাঁরা ধূমপান করেন তাঁদেরও অ্যাজমার সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও সকালে খুসখুসে কাশি, সর্দির মত সমস্যাও থাকে। প্রধানত অ্যালার্জির জন্যই এই ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে, এমনটাই জানাচ্ছেন চেস্ট স্পেশ্যালিস্ট অর্পণ রায়চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘শীতের ঠান্ডা হাওয়া মোটেও ভাল নয়। মাস্ক পড়লে সব ধরনের সমস্যা থেকেই মুক্তি। অনেকেই সম্প্রতি মাস্ক ব্যবহার শুরু করেছেন। এটা খুবই ইতিবাচক অভ্যাস।’’

Air Pollution Musk Child Health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy