E-Paper

গ্রামবাসীই হাল ফেরালেন ভগ্ন ডাকঘরের

কেন্দ্র সরকারের বিধি অনুযায়ী, গ্রামীণ ডাকঘরে পরিষেবার ব্যবস্থা থাকলেও পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য কোনও খরচ করা যাবে না।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৪ ০৭:৪৪
মাধবডিহির ছোট বৈনানের নতুন তৈরি ডাকঘর।

মাধবডিহির ছোট বৈনানের নতুন তৈরি ডাকঘর। — নিজস্ব চিত্র।

টিনের চাল দিয়ে জল ঝরছে। মাটির দেওয়ালে উইপোকার বাসা। ঝড় উঠলেই যেন দুলছিল বাড়িটা। এই অবস্থাতেই কাজ চলছিল মাধবডিহির ছোট বৈনান গ্রামের ডাকঘরে। স্থানীয় চার-পাঁচটি গ্রামের বাসিন্দারা পরিষেবা পান এখান থেকে। তাঁরাই উদ্যোগী হয়ে সাড়ে চার লক্ষ টাকা খরচ করে ভোল বদলে দিলেন ডাকঘরের। রবিবার পাকা ডাকঘরের উদ্বোধন করে ওই দফতরের বর্ধমানের আঞ্চলিক দফতরের আধিকারিক লক্ষ্মণচন্দ্র খাঁ বলেন, “সরকারি ভাবে কিছু করতে পারিনি। গ্রামবাসীরাই উদ্যোগী হয়ে ঘরটি তৈরি করে দিয়েছেন। এখান থেকে যাতে সব রকম পরিষেবা দেওয়া যায়, তার চেষ্টা করা হবে।”

কেন্দ্র সরকারের বিধি অনুযায়ী, গ্রামীণ ডাকঘরে পরিষেবার ব্যবস্থা থাকলেও পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য কোনও খরচ করা যাবে না। ওই ডাকঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বাড়ি থেকেও পরিষেবা দিতে পারবেন। সেই কারণে ১৮৮২ সালে তৈরি ডাকঘরের পরিকাঠামো ভেঙে পড়লেও সংস্কারের টাকা মেলেনি। আবার ওই ডাকঘরের জায়গা কাগজে-কলমে ‘সর্বসাধারণের জন্য’ চিহ্নিত থাকায় সাংসদ বা বিধায়কেরাও তাঁদের তহবিল থেকে সাহায্য করতে পারেননি। এ দিকে, ডাকঘর ‘অচল’ হয়ে গেলে বা পাশের কোনও গ্রাম জায়গা দিলে ১৪০ বছরের পুরনো ‘ঐতিহ্য’ ধাক্কা খাবে। এলাকায় আর কোনও ব্যাঙ্ক না থাকায় পরিষেবা থেকেও বঞ্চিত হবেন গ্রাহকেরা। এই সব ভেবেই গ্রামের ‘যুবগোষ্ঠী’ নামে একটি সংগঠন ডাকঘরটি সংস্কারে উদ্যোগী হয়। বৈঠক করে ঠিক হয়, ডাকঘরের এলাকাভুক্ত ছোট বৈনান ছাড়াও মাধবডিহি থানার মোমরেজপুর, খাঁহার, মিটুনি গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে গিয়ে ডাকঘরটিকে পাকা করার জন্য সাহায্য চাওয়া হবে। গত কয়েক মাস ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তুলেছেন তাঁরা।

মূল উদ্যোক্তা, ছোট বৈনান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক দেবনাথ বলেন, “যার যা সামর্থ্য, সে ভাবেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সাড়ে চার লক্ষ টাকা খরচ করে প্রায় ৮০০ বর্গফুটের ঘর তৈরি হয়েছে।” কৃষ্ণসাধন চক্রবর্তী, রামশঙ্কর বটব্যালদেরও দাবি, “ইংরেজ আমল থেকে এই ডাকঘরটি চলছে। ওই ডাকঘর গ্রামের ঐতিহ্য। এলাকার একমাত্র ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ওই ডাকঘর থেকেই পাওয়া যায়। তাকে রক্ষা করার দায়ভার আমাদের নিতেই হবে।” প্রায় ৮০০-৮৫০ জন মানুষ ৫০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ডাকঘর তৈরিতে সাহায্য করেছেন বলে জানা যায়।

ডাকঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী পরেশ কাইতি বলেন, “ডাকঘরটি ভেঙে পড়ছিল। অন্য গ্রামে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। সে কথা গ্রামবাসীদের বলতে ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে তাঁরা ডাকঘর বাঁচাতে রাস্তায় নামেন। তাঁদের সাহায্যেই এই কাজ সম্ভব হল।’’ ডাকঘরটিতে দু’হাজারের মতো অ্যাকাউন্ট আছে। বিধি অনুযায়ী, একটি শাখাকে বাঁচাতে গেলে আড়াই হাজারের মতো সচল অ্যাকাউন্ট রাখতে হবে। প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক বলেন, “রবিবারই প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে। ফের অ্যাকাউন্ট তৈরি করার জন্য প্রচার চালানো হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy