Advertisement
E-Paper

সবেধন ময়ূর বাঁচাতে জোট বেঁধেছে গোটা গ্রাম

গোটা গ্রাম জুড়েই অবাধ বিচরণ সবেধন ময়ূরটির। অবলীলায় সে ঢুকে পড়ে ঘরের ভিতরে। তাকে রক্ষা করার জন্য পালা করে নজরদারি চালান বাসিন্দারাই। শুধু ওই গ্রাম নয়, আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষও ময়ূর রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫৮
গ্রামে ঘুরে বেড়ায় ময়ূরটি। নিজস্ব চিত্র

গ্রামে ঘুরে বেড়ায় ময়ূরটি। নিজস্ব চিত্র

কয়েক বছর আগেও গ্রামে ডাল থেকে ডালে ঘুরে বেড়াত গোটা দশেক ময়ূর। কিন্তু তাদের নিরাপত্তার দিকে নজর দেওয়া হয়নি। তার ফলে, এখন হাতে রয়েছে সবেধন একটি ময়ূর। পুরনো ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সেটিকে রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন খণ্ডঘোষের বাদুলিয়ার গ্রামবাসীরা।

গোটা গ্রাম জুড়েই অবাধ বিচরণ সবেধন ময়ূরটির। অবলীলায় সে ঢুকে পড়ে ঘরের ভিতরে। তাকে রক্ষা করার জন্য পালা করে নজরদারি চালান বাসিন্দারাই। শুধু ওই গ্রাম নয়, আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষও ময়ূর রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন। তাঁরা জানান, আর কোনও ভুল করতে চান না।

গ্রামের রাজা মুন্সি পঁচিশ বছর আগে এক ব্যক্তির মাধ্যমে এক জোড়া ময়ূর-ময়ূরী আনিয়েছিলেন। তিনি বেঁচে থাকাকালীনই ময়ূরের সংখ্যা বাড়ে। তাঁর মৃত্যুর পরে ময়ূরগুলির দায়িত্ব নেন খণ্ডঘোষের শালুন উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত বাংলার শিক্ষক, ‘পাখিবাবু’ বলে পরিচিত বনবিহারী সামন্ত। তাঁর খামারবাড়িতে গড়ে তোলেন ‘ময়ূর-মহল’। ময়ূর বাঁচানোর আর্জি নিয়ে তিনি এ গ্রাম-ও গ্রাম ছুটে বেড়িয়েছেন।

খামারবাড়িতে দাঁড়িয়ে বনবিহারীবাবুর অভিযোগ, “বড় ময়ূর মেরে পালক ছিঁড়ে নিয়েছে এলাকারই কিছু যুবক। ডিম নিয়ে পালিয়েছে। আবার শিকারিরাও ময়ূর মেরেছে। ওই সব ময়ূরকে নিজের হাতে মাটিতে পুঁততে গিয়ে বুক ফেটেছে। ময়ূর রক্ষা করার জন্য গ্রামে-গ্রামে ছুটে গিয়েছি। মাইকে করে মানুষকে বুঝিয়েছি।” তাঁর সংযোজন, “এখন মানুষ বুঝেছেন। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। তবে এটা দেখেও ভাল লাগছে, একটি ময়ূরকে বাঁচানোর জন্য সবাই এককাট্টা হয়েছেন।”

স্থানীয় বাসিন্দা জগবন্ধু ঘোষ, দীনবন্ধু ঘোষদের কথায়, “সবার বাড়ির ছাদের ধান-চাল রাখা থাকে। ময়ূরের যখন ইচ্ছে ছাদে গিয়ে খাবার খায়। আবার ঘরের ভিতরে ঢুকলেও কেউ বাধা দেন না। রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেও কেউ উৎপাত করেন না।” শুধু বাদুলিয়া নয়, পাশের ৫-৭টি গ্রামেও অবাধ বিচরণ ময়ূরটির। সেখানকার বাসিন্দাদের কথায়, “আগে না বুঝে অনেকে ময়ূর মেরে ফেলেছে। এই ময়ূরকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।” তাঁরা জানান, এখন ময়ূরটির জন্য সঙ্গিনীর খোঁজ চলছে।

খণ্ডঘোষের প্রাক্তন বিডিও তথা পক্ষিপ্রেমী মৃদুল হালদার বলেন, “বাদুলিয়া গ্রামে ময়ূর থাকার মতো পরিবেশ রয়েছে। এখন সেখানকার মানুষেরাও সচেতন হয়েছেন। বনবিহারীবাবুরা বন দফতরকে বলে ময়ূরী আনলে সঙ্গীর অভাবে ময়ূরের কষ্ট কমবে।” বনবিহারীবাবু জানান, গ্রামবাসীদের নিয়ে বন দফতরে আবেদন জানানো হচ্ছে।

জেলা পরিষদ সদস্য অপার্থিব ইসলামও জানান, তাঁরাও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হবেন। প্রস্তাব পেলে নিয়ম মেনে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে বন দফতরের বর্ধমান বিভাগ।

peacock Badulia বাদুলিয়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy