Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

Coronavirus in West Bengal: পড়া যেন বন্ধ না হয়, বোঝাচ্ছেন সফিকুল

পড়ার চাপ কমে যাওয়ায় অনেক পড়ুয়া যে বাড়িতে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা ‘মোবাইল গেম’-এ সময় কাটাচ্ছে, সে খবর পেয়েও স্থির থাকতে পারেননি সফিকুল।

চলছে পড়াশোনা।

চলছে পড়াশোনা। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রণব দেবনাথ
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৩৩
Share: Save:

করোনা-কালে বছর দেড়েক ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার মান নিয়ে অনেকেই উদ্বেগে। তবে দুশ্চিন্তা নিয়ে ঘরে বসে থাকেননি পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া পঞ্চাননতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের পার্শ্বশিক্ষক শেখ সফিকুল ইসলাম। যাদের বাড়িতে পড়া দেখানোর কেউ নেই, তাদের জন্য স্কুল বন্ধ হওয়ার পরে নিজের বাড়িতেই খুলেছেন ‘ফ্রি কোচিং সেন্টার’। নিজের ভাতা থেকে অনেককে কিনে দিচ্ছেন বই, খাতা, পেন। ‘মোবাইলে গেম’-এ কেউ আসক্ত হয়ে পড়েছে শুনলে, তাদের বাড়িতে গিয়ে বুঝিয়ে ফের পড়াশোনায় মনোযোগী করছেন। ‘হোম ওর্য়াক’ দিয়ে নিদিষ্ট দিনে তাদের বাড়ি গিয়ে তা দেখেও আসছেন।

কাটোয়ার বাঁধমুড়া গ্রামের হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা বছর আটচল্লিশের শেখ সফিকুল ইসলাম ২০০৪ সালে পঞ্চাননতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে পার্শ্বশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তাঁর কথায়, ‘‘করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে স্কুল বন্ধ হওয়ার পরেই বুঝেছিলাম, এর ফলে, বিশেষত দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খুব ক্ষতি হবে। অনেকেই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া, তাদের বাড়িতে কে পড়া দেখিয়ে দেবে? অনেকের আবার গৃহশিক্ষক দেওয়ার আর্থিক সামর্থ্য নেই। স্কুলই তাদের বড় ভরসা। তাই সময় নষ্ট না করে নিজের বাড়িতেই ওই সব ছাত্রছাত্রীদের টেনে এনে ফ্রি কোচিং সেন্টার খুলেছি।’’

তিনি জানান, এখন সেখানে বাঁধমুড়া, দুর্গাগ্রাম, গাঁফুলিয়া, পঞ্চাননতলার ৫০-৬০ জন ছাত্রছাত্রী সপ্তাহে তিন দিন পড়তে আসছে। নিজে ভূগোলের শিক্ষক হলেও মাধ্যমিক পর্যন্ত ইংরেজি বাদে সব বিষয়ের পড়া দেখিয়ে দিচ্ছেন। কয়েক জনকে শিক্ষার সরঞ্জামও নিয়মিত কিনে দিচ্ছেন।

দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা সফিকুল বলেন, ‘‘পার্শ্বশিক্ষক হিসাবে মাসে ১১,৬৫০ টাকা ভাতা পাই। তা থেকেই মাসে আড়াই-তিন হাজার টাকা পড়ুয়াদের বই, খাতা, পেন কিনতে খরচ করি। এতে অসুবিধা হলেও মেনে নিয়েছি। কারণ, কাজটা মন থেকে করছি।’’

বাঁধমুড়া গ্রামের বাসিন্দা অভিভাবক পিন্টু হাজরা, সাদ্দাম মল্লিক বলেন, “মাস্টারমশাই বিনামূল্যে ছেলেমেয়েদের পড়া দেখিয়ে দিচ্ছেন, বই-খাতা কিনে দিচ্ছেন। এতে অনেক দুঃস্থ পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের উপকার হচ্ছে। ছেলেমেয়েরাও পড়ায় মন দিয়েছে।’’

শুধু তা-ই নয়। টানা স্কুল বন্ধ থাকায় পড়ার চাপ কমে যাওয়ায় অনেক পড়ুয়া যে বাড়িতে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা ‘মোবাইল গেম’-এ সময় কাটাচ্ছে, সে খবর পেয়েও স্থির থাকতে পারেননি সফিকুল। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে তিনি যতটা পারেন খোঁজ রাখছেন, কে ‘মোবাইল গেম’ খেলছে। সেই পড়ুয়ার বাড়িতে গিয়ে ‘মোবাইল গেম’ খেলার খারাপ দিকগুলো তুলে ধরছেন। পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় চাপ যাতে বজায় থাকে, সে জন্য ‘হোম ওয়ার্ক’ দিয়ে আসছেন।

সফিকুল বলেন, ‘‘সহপাঠীদের মাধ্যমেই জানতে পারি, কোন কোন পড়ুয়া পড়াশোনা বাদ দিয়ে মোবাইল গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের বুঝিয়ে পড়াশোনায় ফেরাচ্ছি।’’ নবম শ্রেণির ছাত্র নাসিম মল্লিক, মোবারক শেখ বলে, ‘‘দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়েছিলাম। কখন যে মোবাইলে অনলাইন গেমে মেতে গিয়েছিলাম, বুঝতেই পারিনি। সফিকুল স্যার বাড়িতে এসে আমাদের বোঝান। ভুল বুঝতে পেরে পড়াশোনায় মন দিয়েছি।’’ একই কথা জানায়, নবম শ্রেণির ছাত্রী সাথী হাজরা, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী নাজমা খাতুনেরা।

সফিকুলের এই উদ্যোগে উচ্ছ্বসিত পঞ্চাননতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামশের মুর্শিদ বলেন, “ওই শিক্ষক প্রশংসনীয় কাজ করছেন। এতে ছাত্র-সমাজ উপকৃত হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE