Advertisement
E-Paper

ভোট-রঙ্গ নিয়েই আলোচনা শহরে

রাত পেরোলেও ভোট দিতে পারা-না পারার গল্পেই মশগুল শহর। রবিবার সকাল থেকেই বাজার, চায়ের দোকান, যেখানেই কয়েকটা মাথা একসঙ্গে হয়েছে, শোনা গিয়েছে ‘ভোট দিতে পারলেন?, কেমন ভোট হল তোদের ওয়ার্ডে’—এমনই টুকরো-টাকরা কথা। অনেকে আবার সাফ বলেছেন, ‘ভোট তো হল সকালেই ঘণ্টা দুয়েক। তারপর তো লুঠ।’

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫২
কালনায় তৃণমূলের ছাপ্পা ভোটের অভিযোগে সিপিএমের মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।

কালনায় তৃণমূলের ছাপ্পা ভোটের অভিযোগে সিপিএমের মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।

রাত পেরোলেও ভোট দিতে পারা-না পারার গল্পেই মশগুল শহর।

রবিবার সকাল থেকেই বাজার, চায়ের দোকান, যেখানেই কয়েকটা মাথা একসঙ্গে হয়েছে, শোনা গিয়েছে ‘ভোট দিতে পারলেন?, কেমন ভোট হল তোদের ওয়ার্ডে’—এমনই টুকরো-টাকরা কথা। অনেকে আবার সাফ বলেছেন, ‘ভোট তো হল সকালেই ঘণ্টা দুয়েক। তারপর তো লুঠ।’ কেউ কেউ শুধু হাতে কালি লাগিয়ে ফিরে এসেছেন। তবে ক্ষোভটা বেশিরভাগই বহিরাগতদের বিরুদ্ধে। কালনার ভোটারদের দাবি, এরাই সকাল থেকে একের পর এক ওয়ার্ড দাপিয়ে বেড়াল, নিয়ন্ত্রণ করল প্রার্থীদের ভাগ্য।

শহরের বাসিন্দারা জানালেন, ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টিতেই বহিরাগতদের ‘অপারেশন’ চোখে পড়েছে। মোটরবাইকে ক্রমাগত এ গলি, ও গলিতে ঘুরেছে তারা। অনেকের পকেটে অস্ত্র ছিল বলেও বাসিন্দাদের অভিযোগ। ভোটের আগের দিনই সিপিএম শহরের কোন কোন এলাকায় বহিরাগতরা ঘাঁটি গেড়েছে তার তালিকা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল। যদিও পুলিশ, প্রশাসনের তরফে টহল দেওয়া আর কিছুই হয়নি বলে তাদের অভিযোগ। তৃণমূলের সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোটের দিন প্রায় শ’তিনেক বাইরের লোক এসেছিল শহরে। কোথা দিয়ে, কী ভাবে কাজ হবে, তা অবশ্য আগে থেকেই ছকে নেওয়া ছিল। জেলা পর্যায়ের এক নেতার ঘনিষ্ঠ দু’জনের উপরেই ‘ভোট করানোর’ দায়িত্ব ছিল বলে জানা গিয়েছে। তাদের এক জন কিসান তৃণমূলের জেলা সভাপতি রাজকুমার পাণ্ডে। অন্য জন তৃণমূল যুবর জেলা সম্পাদক ইনসান মল্লিক। দলের কর্মীরাই জানান, ঠাণ্ডা মাথায় মাস্টার প্ল্যান করতে জুড়ি নেই রাজকুমারের, আর ইনসানও রাজকুমারকে গুরু বলেই মানেন। তৃণমূল কর্মীদের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটে কালনা ১ ব্লক এবং মেমারির কয়েকটি পঞ্চায়েতে ইনসান মল্লিকের দাপটেই ভাল ফল করেছিল তৃণমূল। লোকসভা ভোটেও নিজের এলাকার ১১ ভোটারের মধ্যে ৮ হাজারেরই ভোট তৃণমূলের ঝুলিতে পুরেছিলেন তিনি। সিপিএম, বিজেপি বারবার তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছে। মাসছয়েক আগে বেগপুরে বিজেপির এক সভায় ইনসান মল্লিক ১৫ জন বিজেপি নেতা-কর্মীকে মারধর করে বলেও অভিযোগ।

পুরভোটের দিন এই গুরু-শিষ্যকেই এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায় বলে বিরোধীদের দাবি। তৃণমূল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শহরে ঢুকে পড়েন তারা। পরিকল্পনা ছিল, প্রকাশ্যে হিংসা না ছড়িয়ে এমন কিছু করা, যাতে বোর্ড নিজেদের দখলে আসে। সেই মতো সিপিএম এজেন্ট, প্রার্থী, নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়, শহরের বাসিন্দা অথচ গ্রামেও বাড়ি, জমিজমা রয়েছে এমন ভোটারদের ভয় দেখিয়ে গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছে, ভোটের দিন ১১টি দলে ভাগ হয়ে বহিরাগতরা ছড়িয়ে যায়। কোথাও ভোটারদের বলা হয়, ‘গণ্ডগোল চলছে বাড়ি যান’ আবার কাউকে ভয় দেখিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়। সাড়ে ১০টার পরে শুরু হয়ে যায় বুথে ঢুকে ছাপ্পা দেওয়া। ভোটারদের দাবি, অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে জানতে পারেন, তাঁর ভোট পড়ে গিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের নেতাদের দাবি, একদিকে রাজকুমার ঠান্ডা মাথায় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। আর একদিকে একের পর ওয়ার্ডে ঘুরে বহিরাগতদের নিয়ে অপারেশন সারছিলেন ইনসান। তবে শুধু এই দু’জনই নন, নান্দাই এলাকার তৃণমূল নেতা সেলিম শেখ-সহ বেশ কয়েকজন নেতাকেও এ দিন কালনা শহরে দেখা যায়।

যদিও শহরের ভোটে তাদের কোন ভূমিকা ছিল না বলে দাবি গুরু-শিষ্যের। দুজনেরই বক্তব্য, ‘‘ব্যক্তিগত কাজ ছিল। দরকার মিটিয়ে শহর ছেড়ে বাড়ি চলে গিয়েছি।’’ তৃণমুলের কালনা পুরসভার পর্যবেক্ষক প্রণব রায়েরও দাবি, ‘‘হেরে যাওয়ার ভয়ে সন্ত্রাসের গল্প ফেঁদেছে সিপিএম। আসলে মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট দিয়েছেন।’’ তবে সিপিএমের পাল্টা অভিযোগ, বুথ দখল হওয়ার খবর বারবার পুলিশকে জানিয়েও লাভ হয়নি। পুলিশ যতক্ষণে পৌঁছেছে, ততক্ষণে কাজ সেরে হাওয়া বহিরাগতরা। এমনকী বুথের প্রিসাইডিং অফিসারেরাও প্রতিবাদ করেননি বলে দাবি সিপিএম নেত্রী অঞ্জু করের। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব বিজেপিও। কালনা শহরের বিজেপি নেতা সুশান্ত পাণ্ডের দাবি, ‘‘কিভাবে শাসকদলকে সাহায্য করতে হয় তা দেখিয়ে দিল পুলিশ।’’ শুধু বিরোধীরাই নন, বহিরাগতদের শহরে এনে ভোট করানো নিয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমুলের একাংশও। রবিবার কালনা শহরের এক নেতা বলেন, ‘‘এভাবে ভোট করিয়ে দলের ভবিষ্যৎ ভাল হবে না। এমনিই তো জিততাম।’’

kedarnath bhattacharya Bardhaman muinicipal election BJP Trinamool Kalna CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy