Advertisement
০৬ মে ২০২৪

তারকেশ্বরের ‘কীর্তি’তে ক্ষুব্ধ ওয়েবকুপা, ছাত্ররা

রাজ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ (টিচার ইন-চার্জ) তারকেশ্বর মণ্ডলের নিয়মবিরুদ্ধ কাজকর্ম নিয়ে সরব হলেন শহরের কিছু তৃণমূল নেতা। কলেজের অন্দরে একের পর এক অভিযোগ ওঠায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল ছাত্র পরিষদও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০০:৩০
Share: Save:

রাজ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ (টিচার ইন-চার্জ) তারকেশ্বর মণ্ডলের নিয়মবিরুদ্ধ কাজকর্ম নিয়ে সরব হলেন শহরের কিছু তৃণমূল নেতা। কলেজের অন্দরে একের পর এক অভিযোগ ওঠায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল ছাত্র পরিষদও।

যদিও তারকেশ্বরবাবু বুধবার তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যে বলে জোর করে কলেজের একাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দিয়ে সই করিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকেরা। বর্ধমান থানায় মৌখিত ভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন তাঁরা। যদিও পরপর অভিযোগেও তারকেশ্বরবাবু নির্লিপ্তই। তাঁর কথায়, ‘‘সমস্ত অভিযোগই যে মিথ্যা, তা তো ৮৭ জন শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারী সই করে জানিয়ে দিয়েছেন। এর পরেও মন্তব্যের প্রয়োজন আছে কী?’’

তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত তারকেশ্বরবাবু এর আগেও বারবার বিতর্কে জড়িয়েছেন। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তাঁর নাম জড়িয়েছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে দলের একটি পিকনিকে তৃণমূল কাউন্সিলর বসির আহমেদ ওরফে বাদশা তাঁকে চড় মারেন বলেও অভিযোগ। প্রথমে থানায় অভিযোগ করলেও পরে তা তুলে নেন তিনি। বুধবার ওই কাউন্সিলর পুরসভার একটি উন্নয়নমূলক বৈঠকের শেষে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের কাছে রাজ কলেজের কাজকর্ম নিয়ে নানা অভিযোগ জানান। সূত্রেক খবর, ওই কাউন্সিলর মন্ত্রীকে বলেন, ‘ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। অনার্স পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তারকেশ্বরবাবুর পোষা গুন্ডারা টাকা তুলতে শুরু করেছে। এতে দলের বদনাম হচ্ছে। কলেজের ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে।’ স্বপনবাবু তাঁকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘বিষয়টি পার্থদা (শিক্ষামন্ত্রী) নিজে দেখছেন। আমি দলের পর্যবেক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করব।’ পরে ওই কাউন্সিলরকে সরাসরি জিজ্ঞেস করা হলে তিনি শুধু বলেন, ‘‘আমি আগে সরব হয়েছিলাম। এ বার তারকেশ্বরবাবুর ঘনিষ্ঠরাও তাঁর কাজকর্ম নিয়ে প্রতিবাদ করতে শুরু করেছেন। এ বার দল যা ভাল বুঝবে করবে।” দলের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস অবশ্য বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি শুনেছি। খতিয়ে দেখছি।’’

কয়েকদিন আগে রাজ কলেজের পঞ্চাশ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে প্রশাসনের নানা স্তরে চিঠি দিয়ে তারকেশ্বরবাবুর বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, টাকা দিতে রাজি নাহলে নানা ভাবে হেনস্থা তো বটেই, মারধরও করা হচ্ছে। জোর করে টাকা নেওয়ার অভিযোগে এক শিক্ষক বর্ধমান থানায় এফআইআরও করেন। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বও তারকেশ্বরবাবুর কাজকর্মে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ। দলের একাধিক নেতা এ দিন বলেন, “তারকেশ্বরবাবু তাঁর দলবলকে দিয়ে কলেজে গুন্ডামি চালিয়েছে। জোর করে সই করিয়েছেন। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, এ সব গুন্ডামি বরদাস্ত করা হবে না। এতে দলের ক্ষতি হচ্ছে।”

তারকেশ্বরবাবুর এই সব কর্মকান্ডে নাম জড়িয়ে পড়ছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের। তাতে যে অস্বস্তি বাড়ছে তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন সংগঠনের জেলা সভাপতি বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমরা দল ও সংগঠনের নেতাদের রাজ কলেজের বিষয় নিয়ে জানিয়েছি। আমাদের কোনও ছাত্র এতে যুক্ত নয়। তবে শোনা যাচ্ছে, বহিরাগতরা নাকি কলেজে ঢুকে দাপাদাপি করে। এ ব্যাপারেও আমি নিজে তারকেশ্বরবাবুকে বলেছি।”

তৃণমুলের কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন ওয়েবকুপাও এই মূহুর্তে তারকেশ্বরবাবুর পাশে নেই। সংগঠনের জেলা সভাপতি সুশান্ত বারি বলেন, “আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বারেবারে তারকেশ্বরবাবুকে সতর্ক করেছি। যে সব নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, তাতে নিষেধ করা হয়েছে। ফের জেলা কমিটির বৈঠকে তারকেশ্বরবাবুর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে রাজ্য কমিটিতে পাঠানো হবে।” কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি প্রভাত সোম বলেন, ‘‘আনন্দবাজার পত্রিকা কাগজ দেখার পরেই অন্তর্তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে পরিচালন সমিতির বৈঠক ডাকা হয়েছে জরুরি ভিত্তিতে।’’

তারকেশ্বরবাবু যদিও কোনও অভিযোগই মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, “সবটাই চক্রান্ত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

wbcupa Tarakeswar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE