নাবালিকা অবস্থায় পালিয়ে করা বিয়ে মানেনি বাপেরবাড়ি। কিন্তু মেয়ে সাবালিকা হওয়ার পরেও তাঁকে যেতে দেয়নি প্রেমিকের কাছে। বুদ্ধি খাটিয়ে সেই বন্দিদশা থেকে মুক্তির পথ খুঁজে নিলেন তরুণী। বুধবার, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে প্রশাসনের সহায়তায় সফল হল তাঁর ঘর বাঁধার স্বপ্ন।
বর্ধমানের পূর্বস্থলী ২ ব্লকের ধরমপুর গ্রামে বাড়ি মনোরমা খাতুনের। মনোরমা পুলিশকে জানান, ১৭ বছর বয়সে তিনি পেশায় ভ্যানচালক রকম আলি শেখকে ভালবেসে ঘর ছাড়েন। সেটা ২০১৪। মুর্শিদাবাদে গিয়ে বিয়ে করেন দু’জনে। ঘটনা জেনে মনোরমার বাবা তাঁকে বাড়ি ফিরতে বলেন। বিয়ে মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু বাড়ি ফিরতেই দোতলার একটি ঘরে তরুণীকে কার্যত ‘বন্দি’ করে রাখা হয়। মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়।
এ ভাবে কেটেছে প্রায় আড়াই বছর। মনোরমার কথায়, ‘‘অপেক্ষা করতাম কবে সাবালিকা হব।’’ যোগাযোগের সব পথই বন্ধ ছিল তরুণীর। তাঁকে ‘উদ্ধার’ করার রাস্তা পাননি রকম আলিও। মাথা খাটিয়ে সে সময় উপায় বার করেন দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া মনোরমা। প্রথম কাজ— বয়সের প্রমাণপত্র জোগাড়। তার পরে নিজের বন্দিদশার কথা জানিয়ে প্রশাসনকে চিঠি লেখেন তরুণী। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বাড়ির পাশ দিয়ে রকম আলিকে যেতে দেখে ঢিলের সঙ্গে বেঁধে চিঠি আর শংসাপত্রটি ছুড়ে দেন।
বুঝতে দেরি হয়নি রকম আলির। তিনি দ্বারস্থ হন মহকুমা প্রশাসন ও পুলিশের। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিডিও ও পুলিশের একটি দল মনোরমার বাড়ি পৌঁছয়। প্রাপ্তবয়স্কা (মনোরমা এখন উনিশ) মেয়েকে বন্দি করে রাখা অন্যায়, তা তাঁর পরিবারকে বোঝানো হয়। বুধবার মহকুমাশাসক (কালনা) নীতিন সিংহানিয়া মনোরমা, রকম
আলি ও তাঁদের বাবা-মাকে ডেকে পাঠান। মনোরমা মহকুমাশাসককে জানান, বাবা-মার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। শুধু রকম আলির সঙ্গে
সংসার করতে চান। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘ধর্মীয় মতে ওঁরা বিয়ে করেছেন। তরুণীটিকে স্বামীর ঘরে যাওয়ায় বাধা দিতে নিষেধ করা হয়েছে তাঁর পরিবারকে। মেয়েকে ঘরবন্দি করে
রাখার কথা মানেননি মনোরমার বাবা মোসলেম আলি মণ্ডল। মনোরমা বলেন, ‘‘বিশ্বাস ছিল, এক দিন স্বামীর ঘরে যাব। আজ খুব আনন্দ হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy