Advertisement
E-Paper

খুদের আকুতিতে একজোট গ্রাম

সকাল থেকেই গ্রামবাসীরা পৌঁছে যাচ্ছেন রাস্তার মোড়ে। হাতে নানা আকারের বাক্স। ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রের আকুতি রয়েছে তাতে— ‘আমার বাবা ক্যানসারে আক্রান্ত, মায়ের দুটো কিডনিই খারাপ। আমাদের কাছে টাকা নেই। বাবা-মাকে বাঁচাতে আপনারা আমার পাশে দাঁড়ান।’ সেই আকুতিতেই জোট বেঁধেছে মন্তেশ্বরের একাধিক গ্রাম।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৪৮
রাস্তায় দাঁড়িয়ে চলছে সাহায্য চাওয়া, রয়েছে দেবজিৎ। নিজস্ব চিত্র।

রাস্তায় দাঁড়িয়ে চলছে সাহায্য চাওয়া, রয়েছে দেবজিৎ। নিজস্ব চিত্র।

সকাল থেকেই গ্রামবাসীরা পৌঁছে যাচ্ছেন রাস্তার মোড়ে। হাতে নানা আকারের বাক্স। ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রের আকুতি রয়েছে তাতে— ‘আমার বাবা ক্যানসারে আক্রান্ত, মায়ের দুটো কিডনিই খারাপ। আমাদের কাছে টাকা নেই। বাবা-মাকে বাঁচাতে আপনারা আমার পাশে দাঁড়ান।’ সেই আকুতিতেই জোট বেঁধেছে মন্তেশ্বরের একাধিক গ্রাম।

মন্তেশ্বরের প্রত্যন্ত এলাকার জোড়া গ্রাম মথুরাপুর-হাজরাপুর। ধান চাষই মূল জীবিকা। স্বাভাবিক ভাবেই শীত শুরুর মরসুমে ধান কাটতে ব্যস্ত চাষিরা। তার উপর নোট বাতিলের পরিস্থিতিতে নগদ কম থাকায় মজুরের অভাবে অনেকেই বড়ির সবাই মিলে নেমে পড়েছেন খেতজমিতে। তার মাঝেও বছর বারোর দেবজিৎ বসুর ওই আকুতি শুনে কাজ ফেলে টাকা তুলতে ব্যস্ত হয়েছেন তাঁরা। কখনও বাড়ি বাড়ি ঘুরে, কখনও পাড়ার চা-চপের দোকানে, কখনও রাস্তায় বাস-ট্রাক-গাড়ি দাঁড় করিয়ে সাহায্য চাওয়া চলছে। দেবজিৎকে দেখে যে যার মতো সাহায্যও করছেন।

যে মোড়ে টেবিল পেতে টাকা তোলার শিবির করেছেন গ্রামবাসীরা, সেখান থেকে কিলোমিটার দেড়েক দূরে দেবজিৎদের বাড়ি। টিনের চাল দেওয়া মাটির ঘরে কাতরাচ্ছেন দেবজিতের বাবা বছর বাষট্টি আশিসবাবু। কিডনি থেকে ক্যানসার ছড়িয়ে গিয়েছে ফুসফুসে। ওঠা-চলারও শক্তি নেই। মা স্বপ্নাদেবীরও দুটো কিডনিই নষ্ট হওয়ার মুখে। কলকাতায় একটি হাসপাতালে ডায়ালিসিস চলছে তাঁর। খুদে হাতে ছেলেই সামলাচ্ছে বাবা-মাকে। গ্রামবাসীরা জানান, হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজারের কর্মী ছিলেন আশিসবাবু। বছর দশেক আগে স্বেচ্ছাবসর নেন। দুই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর থেকে অর্থকষ্টে ভুগছেন তাঁরা। তার মধ্যে বছর তিনেক আগে স্বপ্নাদেবীর কিডনির অসুখ ধরা পড়ে। মাসখানেক আগে ক্যানসার ধরা পড়ে আশিসবাবুরও। দু’জনের চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে সমস্ত জমা পুঁজি শেষ হয়ে যায়। আত্মীয়, মেয়ে-জামাইয়েরা এগিয়ে এসে চিকিৎসার ভার নেন। কিন্তু পরিস্থিতি তাঁদেরও হাতের বাইরে এখন। এরপরেই এগিয়ে আসেন গ্রামবাসীরা। স্থানীয় লাল্টু ঘোষের উদ্যোগে ডায়ালিসিসের টাকা, গাড়িভাড়ার খরচ ওঠে। আশিসবাবুর ভাই সুভাষবাবু বলেন, ‘‘পুরো পরিবারই নিঃস্ব দাদা-বৌদির চিকিৎসায়। এতদিন চালানো গেলেও এখন গ্রামের লোকই ভরসা। তাঁদের দেখেই বুকে বল পাচ্ছি।’’

তিন দিন ধরে মথুরাপুর তো বটেই হাজরাপুর, দুয়ারি চন্দনপোঁতা গ্রামের মানুষজনও এগিয়ে এসেছেন ওই পরিবারকে সাহায্য করতে। লিফলেট ছাপিয়ে, ঘরের কোণায় পড়ে থাকা বাক্স নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন তাঁরা। পৌঁছে যাচ্ছেন আশপাশের চকদোবারি, সাতপোঁতা, সুটরা, রাউতগ্রাম, কাইগ্রাম, গোয়ালবাটি গ্রামেও। মথুরার জয়দেব চক্রবর্তী, চন্দনপোঁতার জগন্নাথ ঘোষেরা বলেন, ‘‘তিরিশ, পঞ্চাশ, একশো যে যা পারে দিচ্ছেন। তাই অনেক।’’ হাজরাপুরের সনাতন ঘোষ, দুয়ারির সুনীল ঘোষও বলেন, ‘‘এটুকু বয়সে বাবা-মাকে হারিয়ে কী করে থাকবে ছেলেটা। চেষ্টা করছি এক জনকেও যাতে বাঁচিয়ে রাখা যায়’’ দ্বারিমন্দাকিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরূপবরণ রায় দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র দেবজিৎকে পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। সাহায্য করেছেন ওই স্কুলের প্রাক্তন করণিক বাণেশ্বর পাঠকও। দেবজিৎ বলে, ‘‘বাবা-মা বিছানায়। সবাই পাশে না দাঁড়ালে ভেসেই যেতাম আমরা।’’

child request cancer kidney damage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy