Advertisement
E-Paper

ডজনখানেক ‘ভূত’ নিয়ে জেরবার, তাড়াতে রাজি না হওয়ায় ওঝাকেই মার

ওই গ্রামের বছর একুশের মৌসুমি ক্ষেত্রপাল বেশ কিছুদিন জ্বরে ভুগছিলেন। অন্ধবিশ্বাসী গ্রামবাসীদের একাংশের ধারণা হয়, ওই মহিলাকে ‘ভূতে’ ধরেছে। সোমবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ নমিতার বাড়ি ঘেরাও করেন খণ্ডঘোষের ওঝাকে নিয়ে এসে ‘ভূত’ ছাড়ানোর দাবি তোলেন কিছু গ্রামবাসী।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮ ০০:৫০
 এখানেই চলছিল ঝাড়ফুঁক, রায়নার বাথানডাঙা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

 এখানেই চলছিল ঝাড়ফুঁক, রায়নার বাথানডাঙা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

এক ‘ভূতে’ রক্ষা নেই, এ তো ডজনখানেক! আর বেছে বেছে মহিলাদেরই নাকি ‘ভূতে’ ধরছে! গ্রামবাসীদের কথা মেনে গ্রামে এসে এক মহিলার ঘাড় থেকে ‘ভূত নামিয়ে’ই ওঝা ও তাঁর সঙ্গীদের হাঁফ ধরেছিল। কিন্তু, গ্রামবাসী নাছোড়বান্দা। বাকিদেরও ‘ভূত তাড়ানোর’ দাবিতে তাঁরা অনড়। সে কথায় রাজি না হতেই ওঝা ও তাঁর সঙ্গীকে আটকে শুরু হয় মারধর। তাঁদের উদ্ধার করতে গিয়ে আক্রান্ত হয় পুলিশও।

সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে রায়নার বাথানডাঙা গ্রামের বাউড়িপাড়ায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গ্রামের বছর একুশের মৌসুমি ক্ষেত্রপাল বেশ কিছুদিন জ্বরে ভুগছিলেন। অন্ধবিশ্বাসী গ্রামবাসীদের একাংশের ধারণা হয়, ওই মহিলাকে ‘ভূতে’ ধরেছে। এর পিছনে রয়েছেন মৌসুমির দু’টি বাড়ি পরেই থাকা নমিতা ক্ষেত্রপাল। গ্রামবাসীরদের দাবি, নমিতা খণ্ডঘোষের খাঁড়কোল গ্রামের মহিলা ওঝা ঝুমা মালিকের কাছে নিয়মিত যাতায়াত করেন। তাঁর কাছ থেকে ‘অপবিদ্যা’ শিখে এসে গ্রামের ভিতরে প্রয়োগ করছেন। সে কারণে পাড়ার অন্তত ১০-১২ জন মহিলাকে নাকি ‘ভূতে’ ধরেছে। আর তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

সোমবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ নমিতার বাড়ি ঘেরাও করেন খণ্ডঘোষের ওঝাকে নিয়ে এসে ‘ভূত’ ছাড়ানোর দাবি তোলেন কিছু গ্রামবাসী। নমিতা সেই দাবি মেনে ঝুমাকে ফোন করে গ্রামে আসতে বলেন। ঝুমা কয়েক জন মহিলাকে নিয়ে পৌঁছন সেখানে। মৌসুমিকে মাটিতে রেখে ঝাড়ফুঁক শুরু হয়। ইতিমধ্যে নমিতার বাড়িতে হামলা চালান কিছু গ্রামবাসী বলে অভিযোগ। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, “খবর পেয়ে রায়না থানার পুলিশ এসে নমিতার বাড়ি থেকে লোকজনকে হটিয়ে দেয়। ততক্ষণে ওই মহিলা ওঝা বলে দেন, ভূত চলে গিয়েছে। ওঝার দলবল বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। তখন কয়েক জন ওই ওঝা ও নমিতাকে বলে আরও ১০-১২ জনকে ভূতে ধরেছে। তাদেরও ভূত নামাতে হবে।’’

পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা প্রথমেই অসুস্থ মহিলাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। তার পর দেখা যায়, ওই মহিলা ওঝা-সহ দু’জনকে নিয়ে গ্রামবাসীরা টানাটানি করছে। তাঁদের উদ্ধার করতে গেলে গ্রামবাসীর একাংশ পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছোড়ে।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, আরও ১০-১২ জনের ধাড় থেকে ‘ভূত’ নামানোর আবদার ওঝারা মানতে নারাজ হওয়াতেই চটে লাল হন গ্রামবাসীরা। ইটের ঘায়ে আট জন পুলিশকর্মী জখম হন। বর্ধমান থেকে বড় বাহিনী এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে রায়নার ওসি সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এফআইআর করেন। তার ভিত্তিতেই ১৭ জন গ্রামবাসীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ প্রচার চালাবে। ওই এলাকার জেলা পরিষদের সদস্য তৃণমূলের উত্তম সেনগুপ্ত বলেন, “পুলিশের পাশাপাশি আমরাও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রচার করব।’’ তাঁর দাবি, স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সমিতির সদস্যেরা ওই গ্রামে গিয়েছিলেন মহিলাদের উদ্ধার করতে।

Ghost Burdwan Witchcraft Lynching
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy