Advertisement
E-Paper

বেতন বাকি ১৩ মাসের, ক্ষুব্ধ কর্মীরা

নারদ-কাণ্ডে আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরেই তৃণমূল সাংসদ কে ডি সিংহের সংস্থা ‘অ্যালকেমিস্ট’-এর বিরুদ্ধে জোরদার তদন্তে নেমেছে রাজ্য। ঠিক ততটাই তেড়েফুঁড়ে কেউ তাঁদের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করুক—এমনই চাইছেন দুর্গাপুরে অ্যালকেমিস্টের ডিম উৎপাদন কেন্দ্রের ৫৫ জন কর্মী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৭ ০০:৪৪
দুর্গাপুরের সেই কেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র

দুর্গাপুরের সেই কেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র

নারদ-কাণ্ডে আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরেই তৃণমূল সাংসদ কে ডি সিংহের সংস্থা ‘অ্যালকেমিস্ট’-এর বিরুদ্ধে জোরদার তদন্তে নেমেছে রাজ্য। ঠিক ততটাই তেড়েফুঁড়ে কেউ তাঁদের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করুক—এমনই চাইছেন দুর্গাপুরে অ্যালকেমিস্টের ডিম উৎপাদন কেন্দ্রের ৫৫ জন কর্মী। গত ১৩ মাস বেতন হয়নি তাঁদের। বকেয়া পাওয়ার ব্যবস্থা করতে সম্প্রতি তাঁরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন।

দুর্গাপুরে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ইপিআইপি শিল্পতালুকে প্রায় সাড়ে আট একর জমিতে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিম উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে ‘অ্যালকেমিস্ট’। জার্মানি থেকে উন্নত যন্ত্রপাতি আনা হয়। ২০০৪-এর অক্টোবরে কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সে সময় কেন্দ্রে এক লক্ষ পূর্ণবয়স্ক মুরগি এবং এক লক্ষ মুরগির ছানা থাকত। পূর্ণবয়স্ক মুরগি ডিম দেওয়া বন্ধ করলে সে জায়গায় নতুন মুরগি রাখা হতো। মুরগি ডিম পাড়লে তা চ্যানেলের মাধ্যমে চলে আসত প্যাকেট-বন্দি করার ঘরে। সেখানে ডিম প্যাকেটে ভরে সংস্থার ‘লেবেল’ সেঁটে দেওয়া হত। বাজার থেকে সাত-সকালে গাড়ি এসে ডিম নিয়ে চলে যেত। দিনে লক্ষাধিক ডিম উৎপাদন করেও ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো যেত না।

অভিযোগ, সেই সময়ে এই কেন্দ্রের বাড়বাড়ন্ত দেখিয়ে ২০০৯ থেকে লাগোয়া এলাকায় টাকা তুলতে শুরু করে ‘অ্যালকেমিস্ট’। লগ্নিকারীর বিশ্বাস অর্জনের জন্য ডিম উৎপাদন কেন্দ্রের রমরমার কথা বলতেন এজেন্টরা। প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০০৯-২০১৩—এই চার বছরে আনুমানিক ১০ কোটি টাকা তোলে সংস্থাটি। পরিস্থিতি বদলায় ২০১২ সালে। বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। ‘অ্যালকেমিস্ট’ও নিজেদের গুটিয়ে নিতে শুরু করে। তখনও দুর্গাপুরের কেন্দ্রে দিনে ৮০ হাজার ডিম উৎপাদন হতো।

কেন্দ্রের কর্মীরা জানাচ্ছেন, আচমকা, এক দিন তাঁরা কর্তাদের সূত্রে জানতে পারেন, কেন্দ্রে ‘বার্ড ফ্লু’ ছড়িয়েছে। লক্ষাধিক মুরগি মেরে পুঁতে দেওয়া হয় মাটির নীচে। সেই শেষ। আর নতুন মুরগি আসেনি। সেই ২০১২ থেকে উৎপাদন বন্ধ। বেতনও অনিয়মিত হয়ে পড়ে। সংস্থার কর্মী বিপত্তারণ গোপ, আশিস রায়, বারুদেব ঘোষ, পথিক ঘোষরা জানাচ্ছেন, কর্তাদের কাছে কেন এই কেন্দ্রটিকে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে না—সে প্রশ্ন করে জবাব পাননি তাঁরা। কলকাতায় সংস্থার দফতরে গিয়ে ‘হচ্ছে, হবে’ এই আশ্বাস মিলেছে। কিন্তু অনিয়মিত (দু-তিন মাস অন্তর) হলেও বেতন পাওয়ায়, সে ব্যাপারে বিশেষ চাপাচাপিও করেননি কর্মীরা।

১৩ মাস বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ফল পাননি আশিসবাবু, পথিকবাবুরা। কলকাতার দফতরেও তালা পড়ে গিয়েছে তত দিনে। মঙ্গলবার তাঁরা বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার যে ভাবে অ্যালকেমিস্টের বিরুদ্ধে তদন্তে নামছে, সেই একই রকম উদ্যমে প্রশাসন যদি আমাদের বকেয়া বেতন, প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা মেটানোর ব্যবস্থা করে বেঁচে যাই।’’ একই রকম আশা কেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষীদেরও। শেষ চার মাস বেতন পাননি তাঁরাও।

কেন কর্মীদের বেতন মেটানো হচ্ছে না জানতে চাওয়া হলে ওই কেন্দ্রের অ্যাকাউন্ট্যান্ট সুজিত বসু বলেন, ‘‘২০১২ সালে উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পরে তিন বছর আমরা বেতন দিয়েছি। পরে সংস্থার বিভিন্ন জিনিস চুরি হতে শুরু করে। তা নিয়ে টানাপড়েন শুরু হওয়ায় বেতন-প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।’’ মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) শঙ্খ সাঁতরা বলেন, ‘‘শ্রমিকদের আবেদন পেয়ে ‘অ্যালকেমিস্ট’ কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি চেয়েছি। জবাব পাইনি। শ্রম দফতরকেও জানিয়ে রাখা হয়েছে।’’

Workers unpaid Alchemist Alchemist egg product factory Durgapur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy