আলু কুড়িয়ে এনে স্নান সেরে তখন সবেমাত্র বাড়ির দাওয়ায় বসেছিলেন আউশগ্রামের হাটমাধবপুর আদিবাসী পাড়ার বছর আটান্নর দাসী টুডু। হঠাৎই বাড়িতে এসে গলায় উত্তরীয় পরিয়ে, তাঁর হাতে ফুল-মিষ্টির প্যাকেট ধরিয়ে দেন আউশগ্রামের একটি সংস্থার সদস্যেরা। শনিবার বিকেলের এই ঘটনায় বিস্মিত হন দাসী। সভা, সমিতিতে মঞ্চে বিশিষ্টদের এ ভাবে বরণ করার অনেক ছবি তিনি দেখেছেন। তাঁকে বরণ করার কারণ জানতে চাইলে দাসীকে ওই সম্পাদক রাধামাধব মণ্ডল জানান, ‘আজ
নারী দিবস।’
শুধু ওই প্রৌঢ়া নন, আউশগ্রামের রামনগরের ওই সংস্থার তরফে এ দিন রানি টুডু, ভাদু মেটে, বাদুলি মেটে, মল্লিকা বিশ্বাসের মতো ২৫ জন শ্রমজীবীকে নারী দিবস উপলক্ষে সংবর্ধনা জানানো হয়। ছোড়া ফাঁড়ির সামনে মল্লিকার ছোট একটি চায়ের দোকান রয়েছে। স্বামী অন্যত্র থাকেন। উল্লাসপুরের বাদুলি মেটে গৃহ-সহায়িকার কাজ করেন। ভাদুর বয়স প্রায় সত্তর। দাসী, মল্লিকা, বাদুলিরা বলেন, “নারী দিবস কী তা জানি না। আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। অন্য দিনের মতো এ দিনও কাজে বেরিয়েছিলাম। কাজ না করলে দিন চলবে কী করে? সম্মানিত হয়ে ভাল লাগছে।”
ওই সংস্থার সদস্য রাখি ঘোষ, আকাশ অধিকারী, তারক দাস, রাজেশ মণ্ডলেরা বলেন, “ওঁরা লড়াই করে সংসার চালান। সন্তানদের বড় করেন। সমাজকে শুধু দিয়েই গেলেন ওঁরা। কিছু প্রত্যাশা করেননি। তাই তাঁদের শ্রদ্ধা জানাতে এই উদ্যোগ।”
ভাতার গ্রামের বাসিন্দা টোটোচালক সুস্মিতা রোমকে সংবর্ধনা দেন ভাতার থানার পুলিশ কর্মীরা। থানার তিন মহিলা পুলিশ কর্মীকেও সংবর্ধিত করা হয়। সুস্মিতা জানান, সুখের সংসার তিনি পাননি। তাঁর চার বছরের সন্তান বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। বছর দেড়েক আগে স্বামীর মৃত্যু হয়। সুস্মিতা বলেন, ‘‘বাবা টোটো চালাতেন। তাঁর মৃত্যুর পরে কী ভাবে সংসার চলবে বুঝে উঠতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত বাবার টোটো নিয়েই বেরিয়ে পড়ি। সন্তানকে বুকে বেঁধে টোটো চালাই।’’
উদয়চাঁদ জেলা গ্রন্থাগারে একটি সংস্থা ৩০ জন নারীকে শংসাপত্র ও স্মারক দেয়। অন্য দিকে জামালপুর ব্লকে পদযাত্রা হয়। বর্ধমান ২ ব্লকের বড়শুল নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছাত্রী ও শিক্ষিকারা যোগ দেন। বর্ধমান ২ ব্লক সভাগৃহে এক অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রশাসনের কর্তারা।
বর্ধমান শহর ৩ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে আন্তজার্তিক নারী দিবস উদ্যাপন করা হয়। মহিলা তৃণমূলের উদ্যোগে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের দক্ষিণ শ্রীরামপুরে পালিত হয় দিনটি।গুসকরা কলেজের উদ্যোগে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের নিয়ে কর্মশালা হয়।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)