ইদের আগের দিনেই নতুন জামা পরে পরীক্ষা দিতে এসেছিল বছর পঁচিশের যুবকটি। বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় ঘরে ফেরা হল না তাঁর।
শুক্রবার দুপুর ২টো নাগাদ আউশগ্রামের গোবিন্দপুরে জাতীয় সড়কের (২বি) উপর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান পুবার গ্রামের শেখ মোবারক নামে ওই যুবক। ঘটনার পরে আশপাশের একাধিক কলেজ পড়ুয়া ওই রাস্তায় স্পিড ব্রেকার, মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দাবিতে অবরোধ করেন। ঘণ্টা দুয়েকের অবরোধে থমকে যায় বহু গাড়ি। পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোবিন্দপুরেই একটি বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষণকেন্দ্রের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া ছিল শেখ মোবারক। এ দিন পরীক্ষা ছিল তাঁদের। পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার বাস ধরতে একসঙ্গেই দাঁড়িয়েছিলেন বেশ কিছু পড়ুয়া ও শিক্ষকেরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বর্ধমানগামী একটি অ্যাম্বুল্যান্স উল্টো দিক থেকে আসা একটি মোটরভ্যানকে পাশ কাটাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ধারে চলে যায়। মুহূর্তে ওই যুবককে ধাক্কা মেরে বেরিয়ে যায় গাড়িটি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই শিক্ষক, পড়ুয়ারা গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায় ওই যুবককে। সেখানেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। এরপরেই শুরু হয়ে যায় অবরোধ।
আড়াইটে থেকে জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু করেন এলাকার পলিটেকনিক, বিএ়ড এবং ওই শিক্ষণ কেন্দ্রের শ’পাঁচেক পড়ুয়া। তাঁদের দাবি, অ্যাম্বুল্যান্সটিকে আটক করতে হবে। ক্ষতিপূরণ দিতে হবে মৃত যুবকের পরিবারকে। সঙ্গে ওই রাস্তা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে স্পিড ব্রেকার লাগানোরও দাবি ওঠে। প্রতীক মণ্ডল, রিক্তা দাস, সৌরভ ঘোষদের অভিযোগ, ‘‘এই রাস্তা দিয়ে দ্রুত গতিতে যান চলাচল করে। বিগত ছ’মাসে অন্তত ১০-১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। প্রশাসনের তরফে বারবার আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ হয়নি।’’ ওই বেসরকারি শিক্ষণ কেন্দ্রের তরফে মলয় পীঠ বলেন, ‘‘এলাকায় স্কুলও রয়েছে। যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের সদর্থক ভূমিকা নেওয়া উচিত।’’ ঘণ্টা দুয়েকের অবরোধে বহু গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে দাবি মানার প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ ওঠে।
মৃতের বাবা শেখ মোজাম্মেল হক পেশায় চাষি। এ দিন কোনও রকমে বলেন, ‘‘খুব কষ্ট করে ছেলেটাকে লেখাপড়া শেখাচ্ছিলাম। চাকরি পেলে সংসারের সুরাহা হতো। কোরবানির আগের দিন ছেলেটাকেই হারালাম।’’