যেখানে-সেখানে অটোর লাইন। —নিজস্ব চিত্র।
আদালতের নির্দেশ মেনে অটোর রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার ক্ষমতা নেই আসানসোলের পরিবহণ দফতরের। ফলে, শহরে নেই অটো স্ট্যান্ড। নেই অটোর কোনও নির্ধারিত ভাড়াও। অথচ, নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শহরে ছুটছে কয়েকশো অটো। স্ট্যান্ড না থাকায় যেখানে-সেখানে দাঁড়াচ্ছে তারা। নিচ্ছে ইচ্ছে মতো ভাড়া। বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটতে গিয়ে মাঝে-মধ্যে ঘটাচ্ছে দুর্ঘটনাও। আসানসোলে অটোর এই দাপাদাপিতে সাধারণ বাসিন্দাদের পাশাপাশি মুশকিলে পড়েছে প্রশাসনও।
১৯৯১ সালে মিনিবাস মালিক সংগঠনের দায়ের করা একটি মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী, আসানসোলের পরিবহণ দফতর অটোর নিবন্ধীকরণ করতে পারে না। তাই আসানসোল শহরে এখন মোট কত অটো চলাচল করছে, তার নিদিষ্ট কোনও হিসেব নেই প্রশাসনের কাছে। নিত্যযাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোনও পরিবহণ আইন মানার ধারেকাছে যায় না এই অটোগুলি। শহরে কোনও বৈধ অটো স্ট্যান্ড না থাকায় জনবহুল রাস্তা, বাসস্ট্যান্ড, বাজার এলাকাপ্রায় সব জায়গায় সার বেঁধে দাঁড়িয়ে পড়ছে অটো। তৈরি হচ্ছে যানজট। মাঝে-মধ্যেই ভাড়া নিয়ে মিনিবাস চালক ও কনডাক্টরের সঙ্গে অটো চালকদের বচসা, এমনকী মারামারি হচ্ছে। মিনিবাস মালিক সংগঠনের অভিযোগ, একাধিক বাসস্টপে অস্থায়ী অটো স্ট্যান্ড তৈরি করে নেওয়া হয়েছে। সেখানে অনেক যাত্রী এসে মিনিবাসের বদলে অটোয় চড়ছেন। নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী না পেয়ে লোকসান হচ্ছে বাসগুলির।
কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তার আক্ষেপ, বেশ কয়েক বার অভিযান চালিয়েও এই বেনিয়ম বন্ধ করা যায়নি। এডিসিপি (ট্রাফিক) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “এই সমস্যা নিয়ে আমরা চিন্তিত। সমাধানের উপায় খোঁজা হচ্ছে।” পুলিশের আরও দাবি, অটোস্ট্যান্ড তৈরি করার দায়িত্ব পুরসভার। এ ক্ষেত্রে তাদেরই উদ্যোগী হতে হবে।
বারবার অভিযোগ উঠলেও কেন অটো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, শহরের বেশির ভাগ অটোই আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত পরিবহণ কর্মী সংগঠনের ছত্রছায়ায় রয়েছে। সে জন্য অনেক ক্ষেত্রেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। ব্যবস্থা নিলেও দোষ লঘু করে দিতে হয়। অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত কোনও ভাড়ার তালিকা না থাকায় অটোচালকেরা যাত্রীদের থেকে ইচ্ছে মতো ভাড়া নেন।
অভিযোগ যে কিছুটা হলেও সত্য, তা স্বীকার করেছেন আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়াকার্স ইউনিয়নের সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়া। তিনি বলেন, “ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বচসা, দুর্ব্যবহার ও পরিবহণ আইন না মেনে অটো চালানোর অভিযোগ আমরাও পেয়েছি।” তবে তাঁর দাবি, তাঁদের সংগঠনের তরফে বিভিন্ন রুটে অটোর ভাড়া ঠিক করে দেওয়া আছে। কিন্তু, যেখানে শহরে অটোর রেজিস্ট্রেশনই হয় না, সেখানে কোনও সংগঠন কি নিজে থেকে অটোর ভাড়া ঠিক করতে পারে? রাজুবাবুর দাবি, তাঁদের সংগঠন দীর্ঘ দিন ধরে আসানসোল ও আশপাশের এলাকায় অটো চলাচলের বৈধ অনুমতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রীর কাছেও এই দাবি জানানো হয়েছে। প্রশাসন কিছু না করার জন্যই তাঁদের ভাড়া নির্ধারণ করতে হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। অটো চালকদের দাবি, এই শহরে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ অটো চালানোর সঙ্গে নানা ভাবে যুক্ত। মুষ্টিমেয় কয়েক জন বাদ দিলে অটোচালকেরা নিয়ম মেনেই অটো চালান বলে তাঁদের দাবি।
আসানসোল পুরসভার প্রশাসক তথা মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস বলেন, “কিছু অভিযোগ পেয়েছি। আইনি জটিলতা বাঁচিয়ে কী ভাবে সমস্যা মেটানো যায়, দেখা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy