বিক্ষোভ চলছেই। —নিজস্ব চিত্র।
হিন্দুস্তান কেব্লসের রূপনারায়ণপুর ইউনিটে শ্রমিক-কর্মীদের অবসরের বয়স ৬০ থেকে কমিয়ে ৫৮ করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চাইল কলকাতা হাইকোর্ট। তিন সপ্তাহের মধ্যে এই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পরে চার সপ্তাহের মধ্যে পরবর্তী শুনানি হবে। তত দিন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ অবসর সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না, শ্রমিক-কর্মীদের দায়ের করা মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
গত বছর ডিসেম্বর থেকে শ্রমিক-কর্মীদের অবসরের বয়স নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে রূপনারায়ণপুরে। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, হিন্দুস্তান কেব্লসের হায়দরাবাদ ও নৈনি ইউনিটে প্রথম থেকেই শ্রমিক-কর্মীদের অবসরের বয়স ৫৮ ছিল। কিন্তু রূপনারায়ণপুর ইউনিটে প্রথম থেকে অবসরের বয়স ছিল ৬০ বছর। রূপনারায়ণপুর ইউনিটের আধিকারিকেরা জানান, কর্পোরেট কার্য়ালয়ের উচ্চপদস্থ কর্তাদের নির্দেশ অনুসারে বাকি দু’টি ইউনিটের সঙ্গে সাযুজ্য রাখতে এখানেও শ্রমিক-কর্মীদের অবসরের বয়স ৫৮ করা হয়েছে। গত ২০ ডিসেম্বর রাতে এই মর্মে কারখানায় নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তাতে জানিয়ে দেওয়া, ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এই নির্দেশ কার্যকর করা হবে।
আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি কারখানার প্রায় ১৩৪ জন শ্রমিক-কর্মীর বয়স ৫৮ পূর্ণ হবে। নতুন এই নির্দেশিকা অনুযায়ী তাঁদের অবসর নেওয়ার কথা। তাই এই নির্দেশের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে সংস্থার শ্রমিক সংগঠনগুলি। নির্দেশ জারি হওয়ার পর থেকেই কার্য়ালয়ের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিক-কর্মীরা। তাঁরা সিদ্ধান্ত প্রত্যাহেরের দাবি তোলেন। অনুমোদিত চারটি শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি, সিটু, এআইটিইউসি এবং এইচএমএস যৌথ ভাবে ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’ গঠন করে। সিটু নেতা মধু ঘোষ, আইএনটিইউসি-র উমেশ ঝা, এইচএমএসের বিরোজা বন্দ্যোপাধ্যায়েরা দাবি করেন, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁদের চুক্তি ছিল, এই ইউনিটের শ্রমিক-কর্মীদের অবসরের বয়স ৬০ রাখা হবে। তাই নতুন জারি করা সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শ্রমিক সংগঠনগুলি হাইকোর্টেও মামলা করে। মঙ্গলবার হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায় ও সুদীপ অহলুওয়ালিয়ার এজলাসে শুনানি হয়। শ্রমিক সংগঠনগুলির পক্ষের আইনজীবী অপূর্ব ঘোষ বলেন, “প্রাথমিক ভাবে দু’পক্ষের কথা শোনার পরে ডিভিশন বেঞ্চ তিন সপ্তাহের মধ্যে সংস্থা কর্তৃপক্ষকে তাঁদের সিদ্ধান্তের সমর্থনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। সে সব হাতে পাওয়ার পরে চার সপ্তাহের মধ্যে পরবর্তী শুনানি করা হবে।”
মঙ্গলবারও কারখানা কার্যালয়ে অবস্থান-বিক্ষোভ করেন শ্রমিক-কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, গত ২০ ডিসেম্বর কারখানায় নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়ার পর থেকে উচ্চপদস্থ কর্তারা কেউ কারখানায় আসছেন না। শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, তাঁরা হাইকোর্টে যাওয়ার আগে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা কারখানায় না আসায় তা সম্ভব হয়নি। কর্মীদের বেশ কয়েক মাসের বেতনও বাকি আছে বলে তাঁরা জানান। এ দিন হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত বা শ্রমিক-কর্মীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কারখানার কর্তারা কেউ ফোন ধরেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy