Advertisement
২৫ মে ২০২৪

উদ্বোধনের পরেও বন্ধ পড়ে সব্জি হিমঘর

বছর তিনেক আগে স্থানীয় চাষিদের চাহিদা মেনে তৈরি হয়েছিল সব্জি হিমঘর। মুখ্যমন্ত্রী এসে তার উদ্বোধনও করে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও চাষিদের জন্য দরজা খোলেনি কালনা শহর ঘেঁষা জিউধরা এলাকার নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির ওই হিমঘরের। এমনকী কবে সেটি চালু হবে, পরিচালনা কীভাবে হবে তা নিয়েও অন্ধকারে প্রশাসন। নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির অভিযোগ, হিমঘর চালু না হওয়ায় একদিকে দামি যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে, আবার ওই প্রকল্পের জন্য প্রতি মাসে বড় অঙ্কের বিদ্যুতের বিলও চোকাতে হচ্ছে।

পড়ে নষ্ট হচ্ছে সার সার বসানো এসি মেশিন। —নিজস্ব চিত্র।

পড়ে নষ্ট হচ্ছে সার সার বসানো এসি মেশিন। —নিজস্ব চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০৮
Share: Save:

বছর তিনেক আগে স্থানীয় চাষিদের চাহিদা মেনে তৈরি হয়েছিল সব্জি হিমঘর। মুখ্যমন্ত্রী এসে তার উদ্বোধনও করে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও চাষিদের জন্য দরজা খোলেনি কালনা শহর ঘেঁষা জিউধরা এলাকার নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির ওই হিমঘরের। এমনকী কবে সেটি চালু হবে, পরিচালনা কীভাবে হবে তা নিয়েও অন্ধকারে প্রশাসন। নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির অভিযোগ, হিমঘর চালু না হওয়ায় একদিকে দামি যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে, আবার ওই প্রকল্পের জন্য প্রতি মাসে বড় অঙ্কের বিদ্যুতের বিলও চোকাতে হচ্ছে।

বাজার দর যাই থাকুক না কেন, মাঠ থেকে সব্জি তোলার পরেই তা বিক্রি করে দিতে হয় বলে রাজ্যের বহু এলাকার চাষিদেরই দীর্ঘদিনের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, এলাকায় সব্জি হিমঘর থাকলে দাম কম থাকা ফসল তারা মজুত করে রেখে দিতে পারেন। পরে দাম বাড়লে তা বিক্রি করে লাভ পাবেন। চাষিদের দাবি মেনে বাম আমলেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মার্কেটিং বোর্ড বেশ কিছু হিমঘর তৈরির উদ্যোগ করে। রাজ্যের এই উদ্যোগে নাবার্ড অর্থ সাহায়্য করতে এগিয়ে আসে। ঠিক হয় রাজ্যের বর্ধমান, হুগলি, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, মালদহ এবং জলপাইগুড়ি জেলায় নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির এলাকায় মোট ২৩টি সব্জি হিমঘর তৈরি করা হবে। ২০১০ সালে ঠিক হয়, এক একটি প্রকল্পের জন্য প্রায় এক কোটি টাকা করে খরচ করা হবে। তত্‌কালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রিমোটে প্রকল্পগুলিপ উদ্বোধনও করেন। কৃষিপ্রধান বর্ধমান জেলার কালনা, কাটোয়া এবং হুগলি জেলার চাঁপাডাঙা, পাণ্ডুয়া, চুঁচুড়াতে তৈরি হয় এই ধরনের প্রকল্প। ২০১২ সালের গোড়াতে রাজ্যের বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজও শেষ হয়ে যায়। কিছুদিনের মধ্যে বিদ্যুত্‌ সংযোগও পায় প্রকল্পগুলি। বছর দেড়েক আগে বর্ধমান জেলায় এসে মুখ্যমন্ত্রী কালনা এবং কাটোয়ার প্রকল্পদুটি উদ্বোধন করেন। তাঁর আসার আগে ঠাণ্ডা করার যন্ত্রাংশ, সব্জি রাখার শেড, সব্জি বাছাইয়ের স্থান-সহ প্রকল্পের নানা অংশ পরীক্ষা করে দেখে বিশেষজ্ঞরা।

কিন্তু তারপরেও তালা খোলেনি ওই হিমঘরের। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরেও রাজ্য মার্কেটিং বোর্ডের সঙ্কেত না মেলায় সব্জি হিমঘর নিয়ে জটিলতা কাটে নি। এমনকী হিমঘর কিভাবে পরিচালনা করা হবে তা নিয়েও স্পষ্ট কোনও নির্দেশিকা মেলে নি। জেলার এক আধিকারিকের কথায়, “এই ধরনের হিমঘরগুলি সরকারি ভাবে পরিচালনা করা হবে না বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ফলে রাজ্যের কোনও সব্জি হিমঘরেরই উদ্বোধন হয় নি।”

কালনা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গিয়েছে, এক সময়ের ঝাঁ চকচকে সব্জি হিমঘর ভবনের উপর ধুলোর পুরু আস্তরণ পড়ে গিয়েছে। কাছাকাছি প্রকল্পের দুটি ঘরের তালায় জঙ ধরেছে। দীর্ঘদিন পরে থাকায় ভিতরের ঠাণ্ডা করার যন্ত্রও নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ। অথচ প্রকল্পে বিদ্যুত্‌ সংযোগ থাকায় প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের বিল দিতে হচ্ছে। কালনা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ধরনের হিমঘরের ক্ষেত্রে নিয়ম রয়েছে যে বিদ্যুত্‌ না পোড়ালেও মাসে গড়ে ২৫ হাজার টাকা বিদ্যুত্‌ বিল আসবে। জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির এক আধিকারিক সুজয় মুখোপাধ্যায় জানান, আপাতত বিদ্যুত্‌ বিলের টাকা নিজেরা দিয়ে দিলেও, রাজ্য মার্কেটিং বোর্ডের তরফে তা দিয়ে দেওয়ার আশ্বাস মিলেছে।

প্রকল্পটি চালু না হওয়াই ক্ষুব্ধ এলাকার চাষিরাও। এলাকার সব্জি চাষি খলিদ শেখ জানান, টম্যাটো, ফুলকপি, বাধাকপির মতো বিভিন্ন সব্জি বহু সময়েই মাঠ থেকে তোলার পরে যা বাজার দর মেলে তাতে লাভ হয় না। হিমঘর থাকলে তা মজুত করে রাখা যায়, যাতে দর বাড়লে তা বিক্রি করে কিছুটা লাভ হয়। তাঁদের অভিযোগ, কালনা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতিতে সব্জি হিমঘর হওয়াই মনে হয়েছিল সুদিন আসছে, কিন্তু যে ভাবে গড়িমসি চলছে তাতে আদৌ হিমঘরের দরজা খুলবে কি না তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। পূর্বস্থলীর এক সব্জি চাষি অনন্ত সর্দারের বক্তব্য, “এলাকা থেকে বহু সব্জি রাজ্যের অজস্র বাজারে যায়। বাজার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে ফড়েরা। ফলে চাষিদের লাভ কমে যায়। হিমঘরটি চালু হলে চাষিরা সস্তায় ফড়েদের জিনিস বেচবে না।” কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ বলেন, “প্রকল্পটি চালু করার ব্যাপারে লিখিত কোনও নির্দেশ আমাদের হাতে পৌঁছয়নি। ফলে সেটি চালু করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারা যায় নি।”

তবে কবে নির্দেশ আসবে সে হদিস কেউ দিতে পারেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kedarnath bhttacharya kalna sold storage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE