Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

এমএএমসি খোলার আর্জি বাবুলের কাছে

রূপনারায়ণপুরের বন্ধ হিন্দুস্থান কেবলস কারখানা ইতিমধ্যে পুনরুজ্জীবনের অক্সিজেন পেয়েছে। এ বার দুর্গাপুরের ‘মাইনিং অ্যান্ড অ্যালায়েড মেশিনারি কর্পোরেশন’ (এমএএমসি) খোলার ব্যাপারে আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ের দ্বারস্থ হলেন কারখানার আইএনটিইউসি এবং এআইটিইউসি নেতারা। আইএনটিইউসি নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায় জানান, সোমবার কলকাতায় তাঁরা বাবুলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:২৫
Share: Save:

রূপনারায়ণপুরের বন্ধ হিন্দুস্থান কেবলস কারখানা ইতিমধ্যে পুনরুজ্জীবনের অক্সিজেন পেয়েছে। এ বার দুর্গাপুরের ‘মাইনিং অ্যান্ড অ্যালায়েড মেশিনারি কর্পোরেশন’ (এমএএমসি) খোলার ব্যাপারে আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ের দ্বারস্থ হলেন কারখানার আইএনটিইউসি এবং এআইটিইউসি নেতারা। আইএনটিইউসি নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায় জানান, সোমবার কলকাতায় তাঁরা বাবুলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বাবুল প্রয়োজনীয় উদ্যোগের আশ্বাস দিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রক খনির কাজে ব্যবহৃত উন্নত যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য ১৯৬৫ সালে দুর্গাপুরে এমএএমসি গড়ে তোলে। প্রায় সাড়ে ৭ হাজার শ্রমিক-কর্মী ছিলেন। পরের দিকে নানা কারণে কারখানাটি রুগ্ণ হতে থাকে। ১৯৯২ সালে এমএএমসি চলে যায় বিআইএফআর-এ। বিআইএফআর কারখানা বন্ধের সুপারিশ করলে কলকাতা হাইকোর্ট তা অনুমোদন করে। ২০০১ সালের ৫ অক্টোবর বন্ধ হয়ে যায় এমএএমসি। প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক-কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হয়। ২০০৫ সালের ২৮ এপ্রিল কারখানাটি চলে যায় হাইকোর্ট নিযুক্ত লিক্যুইডেটরের অধীনে। কারখানাটি অধিগ্রহণ করে তা নতুন করে চালু করার আগ্রহ দেখায় তিন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেড (বিইএমএল), কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড (সিআইএল) এবং দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)। ২০০৭ সালের ১ জুন তারা একটি কনসর্টিয়াম গড়ে। বিইএমএল-এর অংশীদারিত্ব ৪৮ শতাংশ। সিআইএল এবং ডিভিসি-র ২৬ শতাংশ হারে। ২০১০ সালের ১১ জুন ১০০ কোটি টাকা দিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে এমএএমসি-র দায়িত্ব নেয় কনসর্টিয়াম।

কনসর্টিয়ামের চুক্তি অনুযায়ী, এমএএমসি-র নতুন নাম, ‘এমএএমসি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’। উৎপাদনের দায়িত্বে থাকবে বিইএমএল। উৎপাদিত খনি যন্ত্রাংশ কিনে নেবে সিআইএল। তারা কয়লা উত্তোলন করবে। সেই কয়লা কিনবে ডিভিসি। কিন্তু তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১০ সালের ২৫ অগস্ট কারখানার মোট ১৯৩ একর জমি বিইএমএলের নামে রেজিস্ট্রেশন হওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়। বিইএমএলের অধীনে থাকবে না বলে জানিয়ে দেয় সিআইএল এবং ডিভিসি। শেষ পর্যন্ত সমস্যা মেটানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে। ডিভিসি এবং সিআইএল নিজেদের বোর্ড অফ ডিরেক্টর্স মিটিংয়ে ‘শেয়ার হোল্ডিং এগ্রিমেন্ট’ চূড়ান্ত করে। তার ড্রাফট দুই সংস্থা জমা দেয় বিইএমএলের কাছে। বিইএমএল তা জানিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে। ওই মন্ত্রকের ছাড়পত্র ছাড়া এগোতে পারবে না বিইএমএল। কিন্তু দেড় বছরেও তা আসেনি।

কারখানার আইএনটিইউসি নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায় জানান, বিষয়টি জানিয়ে পূর্বতন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকেও চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু হয়নি। বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রাক্তন সাংসদ সাইদুল হক বলেন, “সাংসদ থাকাকালীন বাসুদেব আচারিয়াকে সঙ্গে নিয়ে আমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানাই। তাঁর পরামর্শে আমি ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। কোনও উদ্যোগ নজরে আসেনি।” কারখানার সিটু নেতা তথা জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তীর অভিযোগ, আগের এনডিএ সরকার কারখানা বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল। একই পথে এগোতে চেয়েছিল ইউপিএ সরকারও। কিন্তু তিন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কনসর্টিয়াম গড়ে এগিয়ে আসায় তা আটকে যায়। তাঁর দাবি, “পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের পক্ষ থেকে বারবার কারখানা খোলার দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দরবার করা হয়েছে। কিন্তু রাজ্যে সরকার বদলের পরে আর সে উদ্যোগ নজরে আসেনি।”

সোমবার আইএনটিইউসি-র অসীমবাবু এবং এআইটিইউসি-র স্বপন বিশ্বাস কলকাতায় বিজেপি সাংসদ বাবুলের সঙ্গে দেখা করেন। অসীমবাবু জানান, বিষয়টি জানিয়ে তিনি আগে বাবুলের সঙ্গে তিনি টেলিফোন, ফ্যাক্স এবং ই-মেলের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছিলেন। সোমবার এ নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে বাবুল বিষয়টি বিশদে তাঁদের কাছ থেকে জেনে নিয়েছেন।

এলাকার সাংসদ তৃণমূলের মমতাজ সঙ্ঘমিতাকে বাদ দিয়ে আসানসোলের বিজেপি সাংসদের কাছে কেন? অসীমবাবু বলেন, “তিনি কেন্দ্রের শাসক দলের সাংসদ। তা ছাড়া হিন্দুস্থান কেব্লস নিয়ে বাবুলের উদ্যোগ ছিল।” তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমএএমসি কলোনির কিছু বাসিন্দার অভিযোগ, ভোটে জেতার পরে স্থানীয় সাংসদ এই কারখানা নিয়ে খোঁজখবর নেননি। তাই তাঁর কাছে দরবার করেননি। ফোনে যোগাযোগ করা হলে মমতাজ সঙ্ঘমিতা শুধু বলেন, “ওটা নিয়ে কথাবার্তা চলছে।” বাবুল বলেন, “রাজনৈতিক সংকীর্ণতা নয়, কাজ করার জন্য ইতিবাচক মানসিকতা দরকার। কাজ করে তার প্রমাণ দেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE