Advertisement
১৯ মে ২০২৪
নজরে পুরভোট

এলাকায় প্রতিষ্ঠিতদের চাইছে বিজেপি

লোকসভা ভোটের মোদী ঝড়ে ভরসা রেখে গ্রামীণ বর্ধমানের তিন পুরসভাতেও ঘর গোছাতে নেমে পড়েছে বিজেপি। আগামী মে মাসে রাজ্যের ৯০টি পুরসভার সঙ্গে বর্ধমানের কাটোয়া, কালনা ও দাঁইহাটেও পুরভোট হওয়ার কথা। তার আগে বৃহস্পতিবার কালনার অঘোরনাথ পার্কে সভা করতে এসে ওই পুরসভাগুলিতে ক্ষমতাসীন দলকে টক্কর দিতে কীভাবে সংগঠন সাজাতে হবে তারই দিশা দিয়ে গেলেন বিজেপির রাজ্য সম্পাদক রাহুল সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪৩
Share: Save:

লোকসভা ভোটের মোদী ঝড়ে ভরসা রেখে গ্রামীণ বর্ধমানের তিন পুরসভাতেও ঘর গোছাতে নেমে পড়েছে বিজেপি। আগামী মে মাসে রাজ্যের ৯০টি পুরসভার সঙ্গে বর্ধমানের কাটোয়া, কালনা ও দাঁইহাটেও পুরভোট হওয়ার কথা। তার আগে বৃহস্পতিবার কালনার অঘোরনাথ পার্কে সভা করতে এসে ওই পুরসভাগুলিতে ক্ষমতাসীন দলকে টক্কর দিতে কীভাবে সংগঠন সাজাতে হবে তারই দিশা দিয়ে গেলেন বিজেপির রাজ্য সম্পাদক রাহুল সিংহ।

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরভোটকে সামনে রেখে কাটোয়া, কালনা ও দাঁইহাটে তিন থেকে পাঁচটি ওয়ার্ড নিয়ে অঞ্চল গঠন করেছে তারা। ওই অঞ্চলগুলি দেখার জন্য জেলা কমিটি থেকে বিশেষ পদাধিকারীদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়াও পুর এলাকার ‘গোপন রিপোর্ট’ নেওয়ার জন্য ওই তিনটি শহরেই সর্বক্ষণের কর্মী নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কর্মী নিয়োগের জন্য শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতিও শুরু করেছেন বিজেপির নেতারা। ওই কমিটির সদস্যেরা আবার স্থানীয় দলীয় কর্মীদের নিয়ে টিম গড়ে কাজ শুরু করছেন।

লোকসভা ভোটে এ বার ওই তিন শহরেই বিজেপির ভোট গতবারের তুলনায় বেড়েছে। কাটোয়া শহরের ১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টিতে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি, পাঁচটি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তবে এই তিন পুরসভাতেই বিজেপির কোনও কাউন্সিলর নেই। কাটোয়াতে কংগ্রেস ইতিমধ্যে কী কী কারণে বিজেপির ভোট বেড়েছে তা বিশ্লেষণ করে ভোট ব্যাঙ্ক ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে। তেমনি দাঁইহাট ও কালনায় শাসকদল তৃণমূল বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিজেপির ভোট বাড়ার কারণ খুঁজে দেখতে শুরু করে দিয়েছে।

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকসভা ভোটে দলের যে ভোটব্যাঙ্ক তৈরি হয়েছে, তা অটুট রাখার জন্য কালনায় দলের জেলা নেতাদের বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকার জন্য বলে গিয়েছেন রাহুল সিংহ। এ দিন রাহুলবাবু নেতাদের জানিয়েছেন, কেন্দ্রে মোদী সরকার রয়েছে, আর রাজ্যে তৃণমূলের দিশেহারা অবস্থার জন্য রাজনৈতিক হাওয়াও অনুকূল। এ অবস্থায় দলের প্রভাব বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে পুর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ড ধরে স্থানীয় সমস্যা নিয়ে মিছিল-পথসভা করার নির্দেশ দিয়ে যান তিনি। দলের জেলা সভাপতি রাজীব ভৌমিক বলেন, “পুরভোটকে সামনে রেখে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে কাটোয়া শহরে রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের উপস্থিতিতে একটি সভা করা হবে।”

এত দিন জেলা স্তরে বিজেপির বেশিরভাগ স্থানীয় দফতর চলত দলের কার্যকর্তাদের বাড়িতেই। এ বার দলের নিজস্ব দফতর তৈরি করে সেখান থেকেই কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেতারা। রাজীববাবুর দাবি, বাম দলগুলি থেকে তো বটেই, কংগ্রেস ও তৃণমূল থেকেও অনেকে আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন। তাঁদের সঙ্ঘবদ্ধ করে কাজ যেমন করাতে হবে, তেমনই নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করতে হবে। সেই কাজ দলের কর্মকর্তাদের বাড়িতে করা যাবে না। বিজেপির রাজ্য কমিটির এক নেতাও বলেন, “ওই তিন পুরসভার মানুষ আমাদের পাশে রয়েছেন তা লোকসভা ভোটের ফলেই স্পষ্ট। তখন আমরা বুথ ক্যাম্প করতে পারিনি, এজেন্ট দিতে পারিনি, তারপরেও কংগ্রেসের ঘাঁটি কাটোয়া থেকে সাতটি ওয়ার্ডে আমরা জিতেছি। তবে পুরভোটের জন্য এখন থেকেই প্রার্থী বাছতে শুরু করেছি আমরা।”

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, পুর নির্বাচনে দলের সদস্যদের চেয়ে এলাকায় ‘আস্থাভাজন ও প্রতিষ্ঠিত’ মানুষদের প্রার্থী করার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী দল। সে জন্য পাড়ায় পাড়ায় কিংবা ওয়ার্ডের মানুষদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থীর নাম তুলে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে সেই প্রার্থী সম্পর্কে মানুষের ধারণা কেমন, তা গোপনে খোঁজ নেবে পুরসভা। এলাকায় নিযুক্ত সর্বক্ষণের কর্মীর রিপোর্টে সন্তুষ্ট হওয়ার পরেই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে দল। বিজেপির জেলা কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অনিল দত্ত বলেন, “আমরা শিক্ষক, অধ্যাপক, আইনজীবীদের মতো সমাজের প্রতিষ্ঠিত মানুষজনকে প্রার্থী করতে চাইছি। যাঁরা রাজনীতির প্যাঁচকে দূরে সরিয়ে রেখে এলাকার উন্নয়নের জন্য ভাবনা-চিন্তা করবেন।”

তবে বিজেপিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে রাজি নয় রাজ্যের শাসকদল থেকে শুরু করে অন্য রাজনৈতিক দলগুলি। তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, “আমরা মানুষকে সঙ্গে নিয়েই প্রার্থী বাছি। আমাদের এলাকাতে লোকসভাতেও বিজেপি ছিল না, পুরসভাতেও থাকবে না।” সিপিএমের জেলা কমিটির সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “বিজেপি এখন সংবাদপত্রে আর চ্যানেলে, মানুষের মনে নেই। জনসভাতে লোক হচ্ছে কোথায়?” আর কংগ্রেসের রাজ্য প্রদেশ কমিটির সদস্য রাধানাথ ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের সঙ্গে বসে প্রার্থী ঠিক করে থাকি। লোকসভা আর পুরভোট এক নয়, এটা মাথায় রাখতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

municipality vote katoa bjp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE