Advertisement
E-Paper

কেদার সাসপেন্ড, ধন্দ ক্ষতিপূরণের প্রস্তাবে

আগের দু’টি ঘটনায় রাজ্যের শাসকদল যে পথে হেঁটেছিল, এ বারও তার ব্যতিক্রম হল না। অন্ডালে ঠিকাদার খুনে অভিযুক্ত আইএনটিটিইউসি নেতা কেদার পালকে সাসপেন্ড করা হল। কিন্তু গোড়ায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্নও এড়ানো যাচ্ছে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৪ ০২:২৯
অন্ডালের সিএল জামবাদ খনিতে মৃত ঠিকাদার অসীম মুখোপাধ্যায়ের আসানসোলের বাড়িতে গিয়ে পরিজনদের সান্ত্বনা দিলেন সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। ছবি: শৈলেন সরকার।

অন্ডালের সিএল জামবাদ খনিতে মৃত ঠিকাদার অসীম মুখোপাধ্যায়ের আসানসোলের বাড়িতে গিয়ে পরিজনদের সান্ত্বনা দিলেন সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। ছবি: শৈলেন সরকার।

আগের দু’টি ঘটনায় রাজ্যের শাসকদল যে পথে হেঁটেছিল, এ বারও তার ব্যতিক্রম হল না। অন্ডালে ঠিকাদার খুনে অভিযুক্ত আইএনটিটিইউসি নেতা কেদার পালকে সাসপেন্ড করা হল। কিন্তু গোড়ায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্নও এড়ানো যাচ্ছে না।

আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত কয়লা খাদান শ্রমিক কংগ্রেসের (কেকেএসসি) নেতা কেদার গত তিন বছর সিএল জামবাদ কোলিয়ারির শাখা সম্পাদক ছিলেন। সোমবার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হরেরাম সিংহ বলেন, “কেদার পালকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আদালতের রায় না বেরোনো পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।” তবে তাঁরা যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়ার কথা জানিয়েছিলেন, তৃণমূূলের তরফে তা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।

বর্ধমানের এই শিল্পাঞ্চলে সম্প্রতি পরপর যে তিনটি ঘটনা ঘটেছে, তার প্রথমটি ছিল জামুড়িয়ায় শ্যাম সেল কারখানা থেকে তোলা চাওয়া এবং কর্মীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ছোট ঘটনা’ বললেও অভিযুক্ত দুই যুবনেতা অলোক দাস ও চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাসপেন্ড করা হয়। রানিগঞ্জের জেকে নগর খনিতে ইসিএলের ম্যানেজারকে মারধর করায় অভিযুক্ত শ্রমিক নেতা চুনুলাল মিশ্রকেও সাসপেন্ড করেছে দল। গত শনিবার অন্ডালে ঠিকাদার অসীম মুখোপাধ্যায়কে খুনে অভিযুক্ত নেতার ক্ষেত্রেও তারই পুনরাবৃত্তি হল।

ফারাকের মধ্যে, প্রথম দু’টি ঘটনায় তৃণমূূলের তরফে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছিল। এ বার কেকেএসসি-র তরফে তদন্ত কমিটি গড়া হলেও তা বাতিল করে দিয়েছেন জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব। ঘটনার পরেই কেকেএসসি-র তরফে বলা হয়েছিল, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়ছে সংগঠন। এ দিন তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, “দলের অনুমতি না নিয়ে দলের কোনও গণসংগঠনই এই ধরনের কমিটি তৈরি করতে পারে না।”

গোড়াতেই টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্নও এড়ানো যাচ্ছে না। যাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা করেছে পুলিশ, নিহতের সেই ভাই অনুপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাকে কেউ টাকা দিতে চাননি। কিন্তু আমার জ্যাঠতুতো দাদা অক্ষয় মুখোপাধ্যায়কে পাঁচ লক্ষ টাকা ‘ক্ষতিপূরণ’ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।” অক্ষয়বাবুর দাবি, শনিবার আসানসোল মহকুমা হাসপাতাল থেকে অসীমের দেহ নিয়ে ফেরার সময়ে সিএল জামবাদ কোলিয়াররির ঠিকাদার সংগঠনের এক নেতা তাঁকে ওই প্রস্তাব দেন। তাঁর কথায়, “তখন আর এই নিয়ে কথা এগোয়নি। পরে ফোন করে বিষয়টি জানতে চাইলে অবশ্য তিনি আর টাকার কথা তোলেননি। জানান, তাঁরা সব রকম ভাবে আমাদের পাশে আছেন।” এ দিন সেই নেতা অবশ্য দাবি করেন, “আমি মোটেই টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিইনি। বলেছি, আমরা সব রকম ভাবে সাহায্য করব।”

রবিবারই তৃণমূল এবং বিজেপি নেতারা আসানসোলে অসীমদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। এ দিন যান যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সম্পাদিকা ইন্দ্রাণী মিশ্র। গিয়েছিলেন প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী এবং পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ও। তাঁরা পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন অসীমের বাবা দীপক মুখোপাধ্যায়। অনুপবাবু দাবি করেন, “৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট পেশ করে মামলার শুনানি শুরু হোক। মঙ্গলবার এই আবেদন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও চিঠি পাঠাব।”

প্রায় বছর ছয়েক ধরে ইসিএলের বিভিন্ন কোলিয়ারিতে বৈদ্যুতিক যন্ত্র সরবরাহ ও মেরামতির কাজ করে আসছিলেন অসীম। তাঁর স্ত্রী চিন্ময়ীর দাবি, সপ্তাহ দুই আগে অসীম জানিয়েছিলেন, ইসিএলের কাছে তাঁর প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা পাওনা রয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরেই পাঁচ লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, “কে কত পাবেন, তা কাগজপত্র দেখে তবেই বলা যাবে।” চিন্ময়ীর আর্জি, “ইসিএল যেন মানবিকতার খাতিরে বকেয়ার পুরো টাকা দিয়ে দেয়।” নীলাদ্রিবাবু বলেন, “পরিবারের তরফে আবেদন এলে দেখা যাবে।”

এ দিন ইসিএল সব কোলিয়ারিতে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বলে, সকাল সাড়ে ৮টার পরে কাউকে কাজে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। এত দিন অনেকেই দেরিতে আসতেন। তা নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। জেকে নগর কোলিয়ারিতে দেরিতে আসা কর্মীদের ঢুকতে দেওয়ার দাবি নিয়েই ম্যানেজারের সঙ্গে চুনুলালের বিরোধ বেধেছিল।

inttuc asansol kedar pal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy