Advertisement
১৯ মে ২০২৪

কার্ডের তথ্য চেয়ে ফোন, উধাও টাকা

একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের প্রধান কার্যালয়ের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে আসছে ফোন। চাওয়া হচ্ছে এটিএম কার্ড সংক্রান্ত তথ্য। তার কিছু পরেই অ্যাকাউন্ট থেকে হাপিশ হয়ে যাচ্ছে টাকা। এ ভাবেই ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ফাঁদে পড়ছেন বর্ধমানের বেশ কিছু এলাকায় মানুষ। উদ্বেগ ছড়িয়েছে গ্রাহকদের মধ্যে। সোমবার দুপুরে বর্ধমান থেকে কাটোয়াতে কাজে এসেছিলেন একটি ওষুধ কোম্পানির কর্মী রাজীব ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, তিনি কাটোয়াতে থাকাকালীন তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ০০:৫৯
Share: Save:

একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের প্রধান কার্যালয়ের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে আসছে ফোন। চাওয়া হচ্ছে এটিএম কার্ড সংক্রান্ত তথ্য। তার কিছু পরেই অ্যাকাউন্ট থেকে হাপিশ হয়ে যাচ্ছে টাকা। এ ভাবেই ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ফাঁদে পড়ছেন বর্ধমানের বেশ কিছু এলাকায় মানুষ। উদ্বেগ ছড়িয়েছে গ্রাহকদের মধ্যে।

সোমবার দুপুরে বর্ধমান থেকে কাটোয়াতে কাজে এসেছিলেন একটি ওষুধ কোম্পানির কর্মী রাজীব ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, তিনি কাটোয়াতে থাকাকালীন তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে। ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি বলে দাবি করে জানায়, রাজীববাবুর এটিএম কার্ডের সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছে। নতুন কার্ড পাঠানো হবে। তাই পুরনো এটিএমের পিন নম্বর প্রয়োজন। রাজীববাবুর দাবি, “আমি প্রথমে এটিএম কার্ডের পিন নম্বর দিইনি। কিন্তু এর পর আমার কাছে বেশ কয়েকটি ফোন আসে। বলা হয়, পিন নম্বর না দিলে আমি নতুন কার্ড পাব না। এরপরে আমি পিন নম্বর দিই। তার পরেই আমার অ্যাকাউন্ট থেকে তিন বারে মোট ৩৬ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।’’ পুরো বিষয়টি জানিয়ে কাটোয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, ০৮৪৫১৯৭৩২০০ নম্বর থেকে রোহিত শর্মা পরিচয় দিয়ে তাঁকে ফোন করেছিল এক যুবক। থানায় অভিযোগ জানানোর পরেও তাঁর কাছে এটিএম সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে ফোন আসা বন্ধ হয়নি। তাঁর আরও অভিযোগ, “এখন ফোন করে বলা হচ্ছে আপনার টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তার আগে আপনার লক করে রাখা অ্যাকাউন্টটা খুলুন। অর্থ্যাৎ অ্যাকাউন্টের বাকি টাকা তুলে নেওয়ার জন্য চক্রান্ত হচ্ছে।”

রাজীববাবু একা নন, একই পদ্ধতিতে জালিয়াতি হয়েছে আরও অনেকের সঙ্গে। কলকাতার একটি ওষুধ কোম্পানির কর্মী, কাটোয়ার স্টেডিয়াম আবাসনের বাসিন্দা অপূর্ব মণ্ডলের অভিযোগ, “০৮০৮৪৭১১৭৪৬ নম্বর থেকে রাহুল শ্রীবাস্তব পরিচয় দিয়ে আমার কাছে ফোন আসে। আমি ভুল করে আমার অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত গোপন তথ্য দিয়ে ফেলি। তারপরেই ভুল বুঝতে পেরে ব্যাঙ্কে গিয়ে সমস্ত ঘটনা জানাই। তার ভিতরেই অ্যাকাউন্ট থেকে দু’বারে ৫০০০ টাকা উঠে যায়।” একই ঘটনা ঘটেছে, কাটোয়ার মনসা পাড়ার এক যুবকের সঙ্গে।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু কাটোয়াতেই গত দু’দিনে অন্তত ৮ থেকে ১০ জন গ্রাহক এই ধরণের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়াও গুসকরা, মেমারি ও বর্ধমান শহর থেকেও এই ধরণের অভিযোগ এসেছে। টাকা তুলে নেওয়া অ্যাকাউন্টগুলি খতিয়ে দেখে পুলিশ ও ব্যাঙ্ক কর্তাদের অনুমান, এই প্রতারণা চক্রটি ‘অপারেট’ করা হচ্ছে ঝাড়খণ্ড থেকে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিয়ে প্রতারকরা মুম্বই, গুড়গাঁওতে মোবাইল বিল মেটানো হয়েছে। অনলাইনে শপিংও করা হয়েছে। পুলিশের আশা, প্রতারক-চক্রকে খুব দ্রুত ধরা যাবে।

যে বেসরকারি ব্যাঙ্কের নাম করে গ্রাহকদের কাছে ফোন যাচ্ছে, তাঁরা এ ব্যাপারে খুবই উদ্বিগ্ন। ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক শীর্ষ কর্তার আক্ষেপ, “গ্রাহকরা যদি নিজেদের অ্যাকাউন্টের গোপনীয়তা রাখতে না পারে, তাহলে আমাদের পক্ষে কী করা সম্ভব!” তিনি জানান, ব্যাঙ্ক জালিয়াতির বিষয়ে আমরা নানাভাবে গ্রাহকদের সচেতন করছি। এই ধরণের ঘটনা রুখতে বিভিন্ন এলাকায় গ্রাহকদের নিয়ে সচেতনতা শিবির করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

katoa bank fraud
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE