Advertisement
E-Paper

কার মদতে জুয়ার রমরমা, চাপানউতোর শিল্পাঞ্চলে

ঝোপ-জঙ্গলে ঘেরা এলাকা থেকে শ্মশান, পুজোর মরসুমে শিল্পাঞ্চলে এমন নানা জায়গায় দেখা যায় ছোট-ছোট জটলা। উৎসবের আবহে সেই সব জটলায় রমরমিয়ে চলে জুয়ার ঠেক। আসানসোল-রানিগঞ্জের খনি অঞ্চলে বেআইনি এই কার্যকলাপ চলে আসছে বহু বছর ধরেই। সেই ঠেকে অভিযানে গিয়ে এ বার চার জায়গায় পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার পরে বছরের পর বছর এই আসর কী ভাবে চলে আসছে, সে নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ০১:২৩

ঝোপ-জঙ্গলে ঘেরা এলাকা থেকে শ্মশান, পুজোর মরসুমে শিল্পাঞ্চলে এমন নানা জায়গায় দেখা যায় ছোট-ছোট জটলা। উৎসবের আবহে সেই সব জটলায় রমরমিয়ে চলে জুয়ার ঠেক। আসানসোল-রানিগঞ্জের খনি অঞ্চলে বেআইনি এই কার্যকলাপ চলে আসছে বহু বছর ধরেই। সেই ঠেকে অভিযানে গিয়ে এ বার চার জায়গায় পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার পরে বছরের পর বছর এই আসর কী ভাবে চলে আসছে, সে নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।

খনি অঞ্চলের বাসিন্দাদের দাবি, দুর্গাপুজোর আগে থেকেই নানা এলাকায় জুয়ার আসর শুরু হয়ে যায়। কালীপুজোর সপ্তাহখানেক পর পর্যন্ত তা চলে। রাজনৈতিক মদত ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে প্রকাশ্যেই মাসখানেক ধরে এ সব চলে বলে এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ। অজয়ের পাণ্ডবেশ্বর ঘাটে শ্মশানের সামনে, খোট্টাডিহি সাহেব বাংলোর কাছে, বারাবনির কাপিষ্ঠা, কেলেজোড়া, গৌরান্ডি হাটতলার আশপাশে, বালিয়াপুর, কাঁটাপাহাড়িতে ফাঁকা মাঠে, বারাবনির রসুলপুরে জঙ্গলে এই ধরনের ঠেক চলে বলে স্থানীয় নানা সূত্রের দাবি।

খনি চালু করার সময়ে প্রথমে মাটি ও পাথর পাশে সরিয়ে ফেলা হয়। সে সব জমে বড়সড় ঢিপির আকার নেয়। আমডিহায় এই রকম ঢিপিতে বছরভর জুয়ার আসর চলে বলে এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ। রানিগঞ্জের একটি স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি অজয় দে অভিযোগ করেন, দুর্গাপুজোর আগে থেকে স্কুলের ক্লাসঘর খুলে প্রতি সন্ধ্যায় বহিরাগতেরা জুয়ার আসর বসাচ্ছে। প্রতিবাদ করায় তাঁকে হেনস্থা হতে হয়েছে বলে অভিযোগ অজয়বাবুর। তাঁর দাবি, “আমি তৃণমূল কর্মী। বিষয়টি পুলিশকে না জানালেও দলের কয়েক জন নেতাকে জানিয়েছিলাম। তবে প্রতিকার হয়নি।”

এলাকা সূত্রে খবর, রানিগঞ্জের হালদারবাঁধে, হিলবস্তি ডোমপাড়ায় মাঠে, বাউরিপাড়া, রাজারবাঁধ, পঞ্জাবি মোড়ে দিনভর জুয়ার ঠেক চলে। জামুড়িয়া এবি পিট এলাকায় উপরপাড়া, শ্রীপুর গ্রাম, শ্রীপুর বাজার ও নাজিরপাড়ায়, নর্থ সিহারসোল কোলিয়ারি ও নন্দী রোডের পাশে ফাঁকা মাঠে, কেন্দা ফাঁড়ির পিছনে ফাঁকা মাঠে জুয়ার আসর বসে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। অন্ডালে হরিপুরে একটি সিনেমা হলের পিছনে ও পরাশিয়া কোলিয়ারির সামনে ফাঁকা জায়গাতেও নিয়মিত এমন ঠেক চলে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। কালীপুজোর সময়ে আসানসোলে কিছু বাড়িতেও আসর বসে বলে অভিযোগ।

জুয়ার ঠেকে হানা দিয়ে পুলিশের আক্রান্ত হওয়া অবশ্য এ বারই প্রথম নয়। বছর দুয়েক আগে বারাবনির গৌরান্ডির কাছে পুলিশ আক্রান্ত হয়েছিল। রানিগঞ্জে বাঁশরা কোলিয়ারির কাছে বাধা পেয়েছিল পুলিশ। ওই ঘটনায় রানিগঞ্জের বিধায়ক সোহরাব আলির ঘনিষ্ঠ এক নেতার নাম জড়িয়েছিল। এ বছর কালীপুজোর রাতে অন্ডালের রয়্যালটি মোড়ে পুলিশ অভিযান চালাতে গিয়ে বাধা পায়। পরে বড় বাহিনী নিয়ে গেলেও কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। সেই রাতেই রানিগঞ্জের শিশুবাগান ডোমপাড়ায় হানা দিয়ে এক কনস্টেবল-সহ তিন পুলিশকর্মী আক্রান্ত হন। গত শনিবার রাতে পাণ্ডবেশ্বরের কেন্দ্রা গ্রামেও বাধার মুখে পড়েন তিন সিভিক ভলান্টিয়ার। কাজোড়ায় অভিযান চালিয়ে আক্রান্ত হওয়ার পরে সাত জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের আসানসোল মহকুমা কমিটির সম্পাদক সুরেন্দ্র সিংহের অভিযোগ, “রাজনৈতিক মদতে উৎসবের সময়ে এই জুয়ার আসর বসা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সচেতনতার উদ্যোগ ও কড়া ব্যবস্থা ছাড়া তা বন্ধ করা মুশকিল।” রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলি পুলিশি অভিযানকে সাধুবাদ জানালেও তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির নাম জড়ানোকে ‘বিরোধীদের চক্রান্ত’ বলে দাবি করেছেন। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “কাজোড়ায় পুলিশের উপরে হামলায় সিপিএমের লোকজন ধরা পড়েছে। তা থেকেই পরিষ্কার, শিল্পাঞ্চলে জুয়ার আসরের পিছনে রয়েছে সিপিএম।” সিপিএমের আসানসোল জোনাল সম্পাদক পার্থ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “ওরা তো সব কিছুতেই সিপিএমকে খুঁজে পাচ্ছে। সারা বছর ধরে খনি-শিল্পাঞ্চলে জুুয়ার ঠেক চলে। পুলিশ সব জানে। শুধু কালীপুজোর সময়ে হানা দেওয়ার বদলে সারা বছর তল্লাশি চালাক।”

আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “জুয়ার ঠেকে লাগাতার অভিযান চলছে। অভিযোগ পেলেই ফের তল্লাশি হবে।”

nilotpal roychowdhury raniganj gambling
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy