নিভুজি বাজার- হরিশঙ্করপুর রাস্তায় খানা-খন্দ পেরিয়েই চলে নিত্য যাতায়াত। —নিজস্ব চিত্র।
চার বছর আগে মাঝপথে থমকে গিয়েছিল কালনার নিভুজিবাজার-হরিশঙ্করপুর রাস্তার কাজ। তারপর আধিকারিকদের টেবিলে একের পর এক আবেদন জমেছে, ধুলো পড়েছে, কিন্তু কাজ শুরু হয় নি। নিত্য যাতায়াতে নরকযন্ত্রণা সইতে হচ্ছে ওই রাস্তার উপরের প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষজনকে।
কালনা আর মেমারির মধ্যে যোগাযোগ তৈরিতে প্রায় চার দশক আগে ওই পাকা রাস্তাটি তৈরি হয়। ৯ কিলোমিটার রাস্তার জন্য আশপাশের চাষিরা জমি দেন। কিন্তু সরকারি ভাবে জমি নেওয়া হলেও ক্ষতিপূরণের টাকা অনেকের হাতেই পৌঁছয়নি বলে চাষিদের অভিযোগ। তাঁরা এ নিয়ে বারবার প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তবুও লাভ হয় নি। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জনসংখ্যার চাপ ক্রমশ বাড়তে থাকায় রাস্তাটি চওড়া করার প্রয়োজন হয়। ঠিক হয়, রাস্তার পাশের গাছ আগে কাটা হবে। পরে পাকা রাস্তার দু’পাশে মাটি ফেলে চওড়া করা হবে। শেষে ৩.৮ মিটার চওড়া রাস্তাটিকে ৫.৫ মিটার করা হবে। ২০০৯ সালে এ জন্য আইডিএফ প্রকল্প থেকে ৩ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। ২০১০ সালে একটি ঠিকাদার সংস্থা রাস্তার কাজ শুরুও করে দেয়। কাজ যখন মাঝপথে তখন রাস্তার দু’পাশের হরিশঙ্করপুর, হৃদয়পুর, উপলতি-সহ বেশ কিছু গ্রামের চাষিরা দাবি তোলেন, রাস্তা তৈরিতে জমি দিলেও এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি তাঁরা। টাকা না পেলে রাস্তার কাজ শেষ হতে দেবেন না বলেও ঠিকাদারের লোককে জানিয়ে দেন তাঁঁরা। পিছু হটে ঠিকাদার সংস্থা। জট খুলতে আসরে নামেন পুলিশ কর্তারা। চাষিদের নিয়ে বেশ কয়েকটি বৈঠকও ডাকা হয়। প্রতি বৈঠকেই ক্ষতিপূরণের টাকা দাবি করেন চাষিরা। তবে প্রশাসনের তরফে লিখিত প্রতিশ্রুতি না দেওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় রাস্তার কাজ। এ দিকে, ঠিকাদার সংস্থাও ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে ওই রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় রাস্তা জুড়ে চওড়া ফাটল তৈরি হয়েছে। তবে সবচেয়ে খারাপ দশা হরিশঙ্করপুর থেকে কিলোমিটার খানেক রাস্তার। এই অংশে ঠিকাদার সংস্থা তখন পিচের আস্তরণ আর পাথর তুলে দেওয়ার কাজ করছিল। সে ভাবেই পড়ে রয়েছে রাস্তার ওই অংশটি। বাসিন্দাদের দাবি, পিচ-পাথর না থাকায় ছোট-বড় অসংখ্য গর্তে ভরেছে রাস্তা। যাতায়াত করা রীতিমতো মুশকিল হয়ে পড়েছে। পূর্ত দফতরের তরফে ঝামা ইঁট ও পাথর বসিয়ে কিছুটা সারানো হলেও তাতে বিশেষ লাভ হয়নি বলেও তাঁদের দাবি। তাঁরাই জানান, পায়ে হেঁটে তো তবু একরকম, কিন্তু গাড়িতে বা অন্য কোনও যানে চলাচল করলে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি হয়। এমনকী ঝাঁকানিতে গাড়ি থেকে ছিটকেও পড়েন অনেকে। বাস, ম্যাটাডর চালকেরাও জানান, এই রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রায়ই কোনও না কোনও যন্ত্রাংশ ভেঙে পড়ছে। আর বর্ষায় তো গাড়ি চালানোই দায়। এক লরির চালক রমেশ সর্দারের অভিযোগ, বর্ষায় বেশিরভাগ রাস্তাতেই জল জমে থাকে। উপর থেকে গর্ত কতটা গভীর তাও বোঝা যায় না। ফলে অনেক সময়েই মাল নিয়ে যাওয়ার সময় গর্তে চাকা ঢুকে যায়। একটা গাড়ি আটকে যাওয়ায় অন্য যানবাহনও পরপর দাঁড়িয়ে যেতে থাকে। শুধু ভারি যানবাহনই নয়, সাইকেল, ভ্যান বা মোটরবাইকও প্রায়ই দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। বাঘনাপাড়া এলাকার বাসিন্দা নন্দকুমার সাহার বক্তব্য, “পিচ উঠে রাস্তার যা হাল তার থেকে মোরাম রাস্তা করে দিলে অনেক মানুষ স্বস্তি পাবেন।”
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচটি জমি অধিগ্রহণ মামলার মধ্যে ওই রাস্তাটির জমিদাতাদের তালিকা রয়েছে। তবে ২০১ থেকে ২০৫ পর্যন্ত ওই মামলাগুলির মধ্যে আগে একমাত্র ২০৩ কেসের আওতাধীন চাষিদের ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি ২০৪ ও ২০৫ নম্বর দুটি কেসের আওতাধীন চাষিদের ক্ষতিপূরণের টাকা বিলি করা হয়েছে। তবে শংসাপত্র এখনও মেলেনি। পূর্ত দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “২০১ ও ২০২ নম্বর কেসের ফাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ওই দুটি কেসের টাকা বিলি আটকে আছে।” পূর্ত দফতরের কালনা শাখার সহ-বাস্তুকার সুনীতি বিশ্বাস জানান, আপাতত না বাড়িয়ে আসল রাস্তাটি শক্ত করে তৈরির পরিকল্পনা চলছে। তাঁর দাবি, যানবাহন চলাচলের জন্য সম্প্রতি ওই রাস্তার বেশ কিছু গর্ত বুজিয়ে পিচ ঢালা হয়েছে। তবে বর্ষায় তা কতটা মজবুত থাকবে তা নিয়েই সংশয় রয়েই গিয়েছে।
তবে কবে রাস্তার সম্পূর্ণ সংস্কার ফের শুরু হবে, কোন খাত থেকে টাকা আসবে, কবেই বা সমস্ত চাষিরা ক্ষতিপূরণ পাবেন- কোনও উত্তরই মেলেনি আধিকারিকদের কাছ। আপাতত দুর্ভোগই ভবিতব্য হরিশঙ্করপুরের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy