Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

কুয়ো খুঁড়তে নেমে মৃত্যু তিন শ্রমিকের

কুয়ো খুঁড়তে নেমে মৃত্যু হল তিন জন শ্রমিকের। শুক্রবার সকালে রানিগঞ্জের এগারা বাদামবাগানে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানায়, মৃত তপন রুইদাস (৫০) ও সুরেজ রুইদাস (২০) বাবা-ছেলে। আর এক মৃত শ্রমিক সুধাংশু রুইদাস (৩২) তাঁদের প্রতিবেশী। তিন জনই রানিগঞ্জের নতুন এগারা রুইদাস পাড়ার বাসিন্দা। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, বিষাক্ত গ্যাসের প্রকোপে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

কুয়ো থেকে তোলা হচ্ছে শ্রমিকদের।

কুয়ো থেকে তোলা হচ্ছে শ্রমিকদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৪ ০১:০৬
Share: Save:

কুয়ো খুঁড়তে নেমে মৃত্যু হল তিন জন শ্রমিকের। শুক্রবার সকালে রানিগঞ্জের এগারা বাদামবাগানে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানায়, মৃত তপন রুইদাস (৫০) ও সুরেজ রুইদাস (২০) বাবা-ছেলে। আর এক মৃত শ্রমিক সুধাংশু রুইদাস (৩২) তাঁদের প্রতিবেশী। তিন জনই রানিগঞ্জের নতুন এগারা রুইদাস পাড়ার বাসিন্দা। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, বিষাক্ত গ্যাসের প্রকোপে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ময়না-তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরেই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তিন জনই পেশায় কুয়ো কাটার শ্রমিক। প্রাক্তন অধ্যাপক মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায় বাদামবাগান এলাকায় নিজের জমিতে বাড়ি তৈরির আগে ওই শ্রমিকদের কুয়ো কাটার বরাত দেন। সপ্তাহখানেক কাজ করে তাঁরা ৩৫ ফুট গর্ত খোঁড়েন। এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ তিন জনে এক সঙ্গে কুয়ো খুঁড়তে যান। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে নীচে নামেন সুধাংশুবাবু। কিছু ক্ষণ পরে তাঁর কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে কী হয়েছে দেখার জন্য সুরেজ কুয়োয় নামেন। এ বার দু’জনকে ডাকাডাকি করে কোনও উত্তর না পেয়ে তপনবাবু নীচে নামেন।

স্বজনের কান্না। শুক্রবার সকালে রানিগঞ্জের বাদামবাগানে ছবিগুলি তুলেছেন ওমপ্রকাশ সিংহ।

তার পরে বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলেও তিন জনের কাউকেই উপরে উঠতে না দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়। তাঁরাই রানিগঞ্জ থানায় খবর দেন। পুলিশ সেখানে পৌঁছয়। রানিগঞ্জ ও দুর্গাপুর থেকে একটি করে দমকলের ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে আসে। রানিগঞ্জের দমকলের ওসি তাপস চট্টোপাধায় নিজেই সিঁড়ির সাহায্যে কুয়োর নীচে নামার চেষ্টা করেন। তিনি জানান, খানিকটা নামার পরেই অসুস্থ বোধ করেন। তাই সঙ্গে সঙ্গে উপরে উঠে আসেন। তাপসবাবু বলেন, “মনে হচ্ছিল গ্যাস জাতীয় কিছু গন্ধ পাচ্ছি। প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক ছাড়া নামা ঠিক হবে না বুঝতে পেরে উপরে উঠে চলে আসি। সকাল ১০টা নাগাদ ইসিএলের উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে যায়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে একে একে তিন জনকে উদ্ধার করে উপরে নিয়ে আসেন সেই দলের সদস্যেরা। পুলিশ তাঁদের রানিগঞ্জ ব্লক প্রথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানান। তিনটি দেহ ময়না-তদন্তের জন্য আসানসোল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তপনবাবুর চার ছেলের মধ্যে সুরেজ সেজো। তপনবাবুর স্ত্রী তুলসীদেবী কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন কুয়ো কাটার কাজ করেও তিন জনের কেউ গ্যাসের গন্ধ পেল না কেন, এটাই বুঝতে পারছি না।” সুধাংশুবাবুর স্ত্রী ছবিদেবী কোনও কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। সুধাংশুবাবুর বারো বছরের একটি মেয়ে আছে। তাকে কাছছাড়া করছেন না ছবিদেবী। এলাকার বাসিন্দা তথা রানিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সেনাপতি মণ্ডল বলেন, “এলাকায় শোকের ছায়া। এমন পরিণতি কারও হতে পারে, ভাবতেই আমরা হতভম্ব হয়ে যাচ্ছি।” কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “বিষাক্ত গ্যাসের প্রকোপে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে আমাদের অনুমান।” ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

digging of borewell death of workers raniganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE