Advertisement
E-Paper

কম স্কুলে বিজ্ঞান গ্রামে, চাপ বাড়ছে শহরে

মাধ্যমিক পাশ করার পরেই মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার প্রবণতা থাকে বেশি। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ নেই। আবার, এলাকার স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ থাকলেও অনেক অভিভাবক ভাল টিউশন পাওয়ার আশায় ছেলেমেয়েকে শহরের স্কুলে ভর্তি করতে চান। এর ফলে, উচ্চ মাধ্যমিকে শহরের স্কুলগুলির বিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়ার চাপ পড়ছে। এমনই দাবি নানা স্কুল কর্তৃপক্ষের।

অর্পিতা মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০০:৪৪

মাধ্যমিক পাশ করার পরেই মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার প্রবণতা থাকে বেশি। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ নেই। আবার, এলাকার স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ থাকলেও অনেক অভিভাবক ভাল টিউশন পাওয়ার আশায় ছেলেমেয়েকে শহরের স্কুলে ভর্তি করতে চান। এর ফলে, উচ্চ মাধ্যমিকে শহরের স্কুলগুলির বিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়ার চাপ পড়ছে। এমনই দাবি নানা স্কুল কর্তৃপক্ষের।

স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর মহকুমায় ৬৩টি স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকের পঠন-পাঠন চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টিতে বিজ্ঞান বিভাগ আছে। দেখা গিয়েছে, শহরের প্রায় সব স্কুলেই বিজ্ঞান পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ, পাশেই গ্রামীণ এলাকা কাঁকসা ব্লকের ছবিটা একেবারেই অন্য। এই ব্লকে ১৬টি স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ানো হয়। তার মধ্যে মাত্র চারটিতে বিজ্ঞান পড়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে, বিপাকে পড়তে হয় আদিবাসী অধ্যুষিত এই ব্লকের পড়ুয়াদের। তাদের বক্তব্য, এমনিতেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার খরচ বেশি। তার উপরে শহরের স্কুলে পড়াশোনা করতে গেলে হয় গ্রাম থেকে নিয়মিত যাতায়াত করতে হয়, অথবা সেখানে হস্টেল বা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়। এর সঙ্গে রয়েছে বিজ্ঞানের সব বিষয়ে আলাদা টিউশন নেওয়ার ব্যাপার। সব মিলিয়ে পুরোটাই যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ। দামোদরের চরের লালবাবা মানা এলাকার পড়ুয়া বিবেকানন্দ নুনিয়া বর্তমানে গলসি কলেজের কলা বিভাগের পড়ুয়া। তিনি বলেন, “ইচ্ছে ছিল বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার। কিন্তু, আমাদের সিলামপুর হাইস্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ নেই। তাই পড়া হয়নি।”

খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, কাঁকসা হাইস্কুলে এ বছর বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছে ৫৯ জন। গত বছর ছিল ৬৪ জন। তার আগের বছর ছিল ৯৪ জন। কাঁকসা হিন্দি হাইস্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ চালু হয় গত বছর। মাত্র ২ জন পড়ুয়া প্রথম বছর বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ১৬ জন। অথচ আসন রয়েছে ৩০টি। গোপালপুর হাইস্কুলে এ বছর ১৯ জন ভর্তি হয়েছে বিজ্ঞান বিভাগে। গত বছর ছিল ২৫ জন। তার আগের বছর এই বিভাগে পড়ুয়া ছিল ১৫ জন। প্রধান শিক্ষক অতুলকুমার মজুমদার বলেন, “আসন সংখ্যা বলে তেমন কিছু নেই আমাদের স্কুলে। গ্রামীণ এলাকায় পড়ুয়া কম। তবে পরিকাঠামো রয়েছে। কেউ এলে ফিরে যেতে হবে না।”

তবু সব আসন পূরণ হয় না কেন? পড়ুয়া ও অভিভাবকদের একাংশের দাবি, গ্রামে ভাল গৃহশিক্ষক না মেলা একটি বড় কারণ। গ্রামের স্কুলের শিক্ষকরাও সাধারণত শহরেই বসবাস করেন। ফলে, টিউশনের জন্য শহরে যেতেই হয়। সেক্ষেত্রে শহরের স্কুলে ভর্তি হওয়াই সুবিধাজনক। স্কুল থেকে টিউশন সেরে একেবারে বাড়ি ফেরা যায়। লস্করবাঁধের অভিজিৎ ঘোষ ও অমিত বসুরা জানায়, এই কারণেই তারা বাঁকুড়ার একটি স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছে।

স্কুলগুলিতে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, গবেষণাগারের জন্য তিনটি ঘর-সহ আনুষঙ্গিক পরিকাঠামো গড়া হলে স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ চালুর অনুমতি পাওয়া যায়। সে জন্য খরচ হয় প্রায় ১৫-১৬ লক্ষ টাকা। সরকারি সাহায্য ছাড়া এমন পরিকাঠামো গড়ে তোলা বেশ কঠিন। তা ছাড়া বিভাগ চালু করার পরেও পর্যাপ্ত পড়ুয়া মেলে না। ফলে, গ্রাম এলাকার স্কুলগুলিতে নতুন করে বিজ্ঞান বিভাগ চালুর চেষ্টা তেমন আর হয় না। প্রধান শিক্ষকদের একটি সংগঠন, ‘হেডমাস্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর মহকুমা সম্পাদক তন্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কাঁকসা ব্লকের প্রায় ৯০ শতাংশ পড়ুয়াই হয় তফসিলি জাতি বা তফসিলি উপজাতির। অধিকাংশই আবার প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। মেধা থাকলেও সুযোগের অভাবে তাদের অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছে।”

এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়া সংখ্যা নিয়ে চাপে পড়ে যাচ্ছে শহরের স্কুলগুলি। যেমন, দুর্গাপুরের বিধানচন্দ্র ইনস্টিটিউশন ফর বয়েজ স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, একাদশ শ্রেণিতে এখন ৩৮৯ জন ও দ্বাদশে ৩৯১ জন পড়ুয়া রয়েছে। স্কুলের তরফে জানা গিয়েছে, পড়ুয়া সংখ্যা ৩৫০-এর মধ্যে থাকলে পঠন-পাঠনে সুবিধা হয়। রামকৃষ্ণপল্লি বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠে একাদশে ৯৭ ও দ্বাদশে ৯৮ জন পড়ুয়া রয়েছে। স্কুলের তরফে জানানো হয়, আশপাশের নানা গ্রাম থেকে এখানে পড়ুয়া আসে। স্কুলে ক্লাসঘর ও গবেষণাগারের সমস্যা রয়েছে। গ্রামের স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ থাকলে তাদের এতটা চাপে পড়তে হত না বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান।

এ বিষয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অপর্ণা করের বক্তব্য, “আমি সবে কাজে যোগ দিয়েছি। এখনও সব জানা হয়ে ওঠেনি।”

arpita majumdar science school
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy