Advertisement
E-Paper

কর্মসূচিতে সাড়া দেখেই হামলা, দাবি সিপিএমের

শ্যামসুন্দর থেকে বাঁ দিকে পিচ রাস্তা ধরে কয়েক কিলোমিটার গেলেই রায়না। সেখান থেকে আরও কিলোমিটার পাঁচেক গিয়ে বাঁ দিকের মোরাম রাস্তা ধরলে পৌঁছনো যাবে উচিতপুর গ্রামে। গ্রামের রাস্তা জুড়ে লাল পতাকা।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৫০

শ্যামসুন্দর থেকে বাঁ দিকে পিচ রাস্তা ধরে কয়েক কিলোমিটার গেলেই রায়না। সেখান থেকে আরও কিলোমিটার পাঁচেক গিয়ে বাঁ দিকের মোরাম রাস্তা ধরলে পৌঁছনো যাবে উচিতপুর গ্রামে। গ্রামের রাস্তা জুড়ে লাল পতাকা।

বৃহস্পতিবার ব্লক অফিসে স্মারকলিপি দিয়ে ফেরার পথে বোমাবাজিতে মৃত্যু হয় এই গ্রামেরই বাসিন্দা স্বপন মালিকের। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। পুলিশ এক ছাত্র-সহ ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে ঘটনার পরে চার দিন কেটে গেলেও পুলিশ তদন্ত করতেও ওই গ্রামে ঢুকতে পারেনি। ঘটনার রাতে গ্রামের মহিলারা পর্যন্ত লাঠি উঁচিয়ে পাহারা দিয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে ময়না-তদন্তের পরে বর্ধমান থেকে মৃতদেহ পাহারা দিয়ে নিয়ে গেলেও উচিতপুর মোড়ে গিয়ে থমকে যেতে হয় পুলিশকে।

২০১১ সালের মমতা-সুনামিতে ‘লালদুর্গ’ বর্ধমানে ধস নামলেও রায়না-খণ্ডঘোষে সিপিএমের আধিপত্য বজায় ছিল। পরে পঞ্চায়েত বা লোকসভা ভোটে খাতায়-কলমে তৃণমূল এগিয়ে থেকেছে, কিন্তু উচিতপুরের মতো বেশ কিছু এলাকায় সিপিএমের দাপট রয়েছেই। প্রশাসনিক ভাবে রায়না ১ ব্লক নিয়ে গঠিত রায়না থানা, আর রায়না ২ ব্লক নিয়ে মাধবডিহি থানা। এই দু’টি ব্লকের বেশির ভাগ অংশ নিয়ে রায়না বিধানসভা। শুধু রায়না ১ ব্লকের দু’টি পঞ্চায়েত রয়েছে জামালপুর বিধানসভায়। উচিতপুর জামালপুর বিধানসভায় পড়ে। ভোটার প্রায় ১২০০। লোকসভা ভোটের হিসেব অনুযায়ী, সিপিএম ৮৫০ ভোটে এগিয়ে। জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামাণিক স্বীকার করেন, ওই এলাকায় সিপিএমের দাপট রয়েছে।

সিপিএমের কর্মী শেখ হাবিবুর, শেখ আখতরদের অভিযোগ, “রাজ্যে পরিবর্তনের পরে আমাদের এই এলাকায় তৃণমূলের সন্ত্রাস নেমে এসেছিল। উচিতপুরেই চার দিন বাইরে থেকে লোক এনে হামলা চালানো হয়েছিল। তখন দলের পতাকা পর্যন্ত তোলা যেত না। এখনও অনেক গ্রামে পতাকা তোলা যায় না। তবু সন্ত্রাসের বাধা সরিয়ে আমরা এগোচ্ছি। সেটাই মেনে নিতে পারছে না তৃণমূল।” সিপিএম নেতারা দাবি করেন, পুজোর আগে প্রকাশ্যে কোনও কর্মসূচি নেওয়া যেত না। পুজোর পরে জাঠা করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন সক্রিয় হতে প্রকাশ্য কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আর তার পর থেকেই শুরু হয়েছে তৃণমূলের আক্রমণ। ১ অক্টোবর রায়নার কয়েকটি জায়গায় সিপিএমকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অমল হালদার বলেন, “সন্ত্রাসের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে প্রতি দিন মানুষ আমাদের কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন। মানুষের ভিড় বাড়ছে। সে জন্যই এই আক্রমণ।”

তৃণমূলের অন্দরের খবর, ক্ষমতায় আসার পরেও রায়নার ওই দুই ব্লকে সংগঠন বাড়ানোর কাজ হয়নি। উল্টে, দলের পুরনো নেতাদের উপেক্ষা করা হয়েছে। পাশাপাশি, বালি খাদান-সহ নানা ব্যাপারে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তো রয়েছেই। এই রায়নাতেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে খুন হয়েছেন দলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আব্দুল আলিম। আবার দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ওই পদে বসে গিয়েছেন আনসার আলি। রায়নার ওসিকে মারধরের অভিযোগে জেলে রয়েছেন তৃণমূলের দাপুটে নেতা বামদেব মণ্ডল, নিয়ামত আলিরা। রায়নার বাসিন্দা, বর্ধমান জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সদন তা-র বক্তব্য, “সংগঠন তো করবে দলের পুরনো নেতা-কর্মীরা। তাঁরাই দলে উপেক্ষিত।”

কিন্তু একটা ‘নিরীহ’ কর্মসূচিতে বোমাবাজি করা হল কেন? তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি, রায়নার রাজনীতি ঘুরপাক খায় শ্যামসুন্দরকে ঘিরেই। সেখানে তৃণমূলের দাপট রয়েছে। সিপিএমের নানা কর্মসূচি দেখে দলের একটি অংশ আশঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল, তাদের ‘দাদাগিরি’ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সে জন্যই দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে হামলা হয়েছে। দলের এক নেতার কথায়, “ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে কেউ-কেউ নির্দেশ মানেননি। শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোরে দলের সভার পরে বর্ধমানের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন দলের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস। কী হয়েছিল, সেখানে তা বলা হয়েছে।”

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy