রক্ষিবিহীন বারুদঘর। নিজস্ব চিত্র।
কাছাকাছি খনি-খাদান এলাকা থেকে বিস্ফোরকের জোগান পাওয়া সহজ, সে কারণেই বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জঙ্গিরা ঘাঁটি গেড়েছিল বলে অনুমান গোয়েন্দাদের। এই খবর সামনে আসার পরেই প্রশ্ন উঠল রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা ইসিএলের বারুদঘরগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য সেখান থেকে সহজেই বিস্ফোরক চুরি যায় বলে অভিযোগ শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক নেতাদের। ইসিএলের তরফে অবশ্য জানানো হয়, বারুদঘরগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বাড়তি নজর দেওয়া হচ্ছে।
খনিতে কয়লার স্তর ভাঙার জন্য অনেক সময়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহার করা হয় পাওয়ার জেল বা জিলেটিন স্টিক, যা ইসিএলের সব ক’টি খনিতেই প্রচুর পরিমাণে মজুত থাকে। খাগড়াগড়-কাণ্ডের তদন্তে গোয়েন্দারা জেনেছেন, সেখানেও নানা রকম বিস্ফোরকের সন্ধান মিলেছে। শাকিল, কওসরেরা নিয়মিত রানিগঞ্জ বা আসানসোলে যাতায়াত করত বলেও তাঁদের সন্দেহ। তা থেকেই অনুমান করা হচ্ছে, খনি অঞ্চলের খাদানগুলিতে ব্যবহার্য বিস্ফোরক কওসরেরা সংগ্রহ করে থাকতে পারে।
ইসিএলের খনিগুলিতে প্রায় একশোটি বারুদ ঘর বা ম্যাগাজিন হাউস আছে। খনি থেকে নিরাপদ দূরত্বে এই বারুদঘর তৈরি করে সেখানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক মজুত করা থাকে। কয়লা স্তরে বিস্ফোরণ ঘটানোর সময়ে সেখান থেকে তা প্রয়োজন মতো নিয়ে যাওয়া হয়। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবে এই বারুদঘরগুলি থেকে দুষ্কৃতীরা অনায়াসে বিস্ফোরক চুরি করে বলে অভিযোগ শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দা থেকে শুরু করে নানা শ্রমিক নেতার।
আইএনটিইউসি অনুমোদিত খনি শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক চণ্ডী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ইসিএলের অনেকগুলি বারুদঘর আছে, যেখানে কোনও নিরাপত্তাকর্মী পাহারায় থাকেন না। সেখান থেকে বিস্ফোরক চুরি হয়ে বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে। আমরা আগেও এই ঘরগুলির নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি। খাগড়াগড়ের ঘটনার পরে ফের ইসিএল-কে সতর্ক হতে বলেছি।” সিটু নেতা তথা আসানসোলের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বংশোগোপাল চৌধুরীর বক্তব্য, “এই বিস্ফোরকগুলি পাহারা দেওয়ার জন্য বারুদঘরের সামনে লাঠিধারী নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন থাকেন, যা একেবারেই ঠিক নয়। বছর পাঁচেক আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে এ নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল। তার পরেও পরিস্থিতি পাল্টায়নি।” আসানসোলের বর্তমান বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় বলেন, “খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ-কাণ্ডের পরে মজুত বিস্ফোরকগুলির নিরাপত্তা বাড়াতে খনি কর্তৃপক্ষকে বাড়তি ব্যবস্থা নিতে বলছি।”
ডালুরবাধ, খোট্টাডিহি, কোয়ারডি কোলিয়ারির বারুদঘর থেকে নানা সময়ে বিস্ফোরক চুরির ঘটনা ঘটেছে। বারুদঘরগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে বেশ ঢিলেঢালা, তা কয়েকটি জায়গায় গেলেই মালুম হয়। জামুড়িয়ার বোগড়া গ্রামের কাছে বারুদঘর, কোয়ারডি খনির বারুদঘর, নর্থ সিহারশোল, পরাশিয়া, বেজডিহি, শ্রীপুর এরিয়ার এবিপিটি বারুদঘরের মতো বেশ কিছু জায়গায় পর্যাপ্ত রক্ষীর অভাব নজরে পড়ে। কোথাও দু’জন, কোথাও বা তিন জন লাঠিধারী কর্মী কর্তব্যে রয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আবার তাঁরা বারুদঘর থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরে ওয়াচ টাওয়ারে বসে থাকেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এরকম কয়েক জন রক্ষী বলেন, “সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা হামলা চালালে আমাদের কিছুই করার নেই।”
ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, খাগড়াগড়ে ২ অক্টোবরের ঘটনার পরে অবশ্য পুলিশের তরফে তাদের কাছে এই বারুদঘরগুলির উপরে বাড়তি নজরদারি আরোপের কোনও পরামর্শ আসেনি। সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ের অবশ্য দাবি, “আমাদের বারুদঘরগুলিতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়। সম্প্রতি আমরা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আরও বাড়িয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy