উদ্ধার করা সামগ্রী। নিজস্ব চিত্র।
দিনে কমবয়সীদের এলাকায় পাঠিয়ে খবর জোগাড় করা। রাতে বন্ধ দরজার তালা ভেঙে ঢুকে জিনিসপত্র সব সাফ করে দেওয়া। নগদ টাকা, গয়না, সোনার মুদ্রা, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল, ডিভিডি, ক্যামেরা তো বটেই। বাদ যাচ্ছে না পেন ড্রাইভ, ফাইবারের থালা, এমনকী জলের কলও। বাড়ি ফিরে চোখ কপালে উঠেছে গৃহকর্তাদের। দুর্গাপুর শহরে পুজোর ছুটিতে এমন পরপর চুরির ঘটনায় কার্যত নাজেহাল হয়ে পড়ে পুলিশ। সম্প্রতি সেই রকম কয়েকটি চুরিতে জড়িত সন্দেহে ছ’জনকে পাকড়াও করেছে পুলিশ।
পুজোর মরসুমে অনেকেই বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়েন। কেউ যান দেশের বাড়িতে। অনেকে আবার বাইরে বেড়াতে যান। এই সময়ে চুরির হিড়িক বেশ বেড়ে যায় শহরে। এক সময়ে দুর্গাপুর থানার তরফে ফাঁকা বাড়িতে স্বেচ্ছাসেবক পাঠিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করা হত। কমিশনারেট গড়ে ওঠার পরে সেই প্রথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, চুরি বন্ধ হয়নি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সুভাষপল্লিতে বন্ধ বাড়ির তালা ভেঙে প্রথম চুরিটি হয়। ১৭ অক্টোবর নতুনপল্লিতে এবং ২১ অক্টোবর ঝান্ডাবাদে একই ভাবে চুরি হয়। প্রায় একই সময়ে সত্যজিৎপল্লিতে চুরির ঘটনা ঘটে, ফরিদপুর থেকে চুরি যায় মোটরবাইক। পুলিশ তদন্তে নেমে দেখে, দুষ্কৃতীরা মূল্যবান সামগ্রীর পাশাপাশি বাড়ির সাধারণ জিনিসপত্রও নিয়ে গিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ অনুমান করে, দলে পেশাদারদের পাশাপাশি নতুন যোগ দেওয়া দুষ্কৃতীরাও রয়েছে। তা না হলে জলের কল খুলে নেওয়ার মতো কাজ করত না। উদ্ধার হওয়া সামগ্রীর মধ্যে এক টাকার নোটও মিলেছে, যা সাধারণত এখন অনেকে বাড়িতে জমিয়ে রাখেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রাঙ্ক রোড থেকে প্রথম রাজীব রুইদাস নামে এক জনকে পাকড়াও করা হয়। তাকে জেরা করে বেনাচিতির নিবেদিতা প্যালেসের কাছ থেকে ধরা হয় বাবু রায় নামে আর এক জনকে। পরে আমরাইয়ের ভাড়া বাড়ি থেকে ধরা হয় সাহাবুদ্দিন ওরফে বাচ্চা নামে এক ব্যক্তি। তার বাড়ি মুর্শিদাবাদে। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় সুভাষপল্লি ও সত্যজিৎপল্লি থেকে চুরি যাওয়া ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল ফোন। তাদের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। উঠে আসে গোপাল টুডু নামে আর এক জনের নাম। পুলিশ গোপাল ও তার সঙ্গী আরমান আনসারিকে গ্রেফতার করে। তাদের জেরা করে স্টিল মার্কেটে বাসনপত্রের দোকানদার শ্যামল গড়াইয়ের হদিস মেলে। তাকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, চোরাই সামগ্রীর ‘রিসিভার’ হিসেবে কাজ করত শ্যামল। তার দোকানে হানা দিয়ে উদ্ধার হয় ঝান্ডাবাদের এক ঠিকাদারের বাড়ি থেকে চুরি যাওয়া ৮ থেকে ১০ গ্রাম ওজনের ৩৯টি সোনার মুদ্রা, দু’টি সোনার বিস্কুট। এ ছাড়াও উদ্ধার হয় নগদ টাকা, সোনা-রুপোর গয়না-সহ নানা সামগ্রী। কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব জানান, প্রায় ৪৩ লক্ষ টাকা মূল্যের চোরাই সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ধৃতদের জেরা করে তাদের চুরি করার পদ্ধতি জানা গিয়েছে। বয়স ১২-১৫ বছর, এমন ছেলেদের দিনেরবেলায় পাঠিয়ে কোথায় কোন বাড়ি বন্ধ রয়েছে, তার কোথায় দরজা, কোন দিক দিয়ে ঢুকলে চুপিসাড়ে কাজ হাসিল করা যাবে, এই ধরনের তথ্য জোগাড় করে দুষ্কৃতীরা। তার পরে রাতে নিজেরা চুরি করতে যায়। এর মধ্যে এক কিশোর চুরির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত বলে ধারণা পুলিশের। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে। পুলিশ জানায়, দুষ্কৃতীরা রড নিয়ে চুরি করতে যেত। রড দিয়েই তারা তালা ভাঙার কাজ করত। এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব বলেন, “দলে আর কেউ আছে কি না জানতে ধৃতদের জেরা করা হচ্ছে। রাতে শহরে নজরদারি বাড়ানোর পরিকল্পনা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy