শুকনো কল।—নিজস্ব চিত্র।
তাপমাত্রার পারদ ক্রমশ বাড়ছে। গরমে হাসফাস করছে চারপাশ। তার মধ্যেই জলসঙ্কটে জেরবার হচ্ছেন অন্ডালের কাজোড়া গ্রামের মানুষ। অথচ, জলের সমস্যা মেটানোর জন্য ১৪ বছর আগে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে ওই এলাকায় কল বসানো হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই কলগুলি থাকাই সার। সেগুলি থেকে কখনই নিয়মিত জল পাওয়া যায় না। প্রতি বছরই ভোট এলে জল সরবরাহ স্বাভাবিক করে দেওয়ার আশ্বাস মেলে বটে। তবে, বাস্তবে কাজ হয় না।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০১ সালে কাজোড়া গ্রামে প্রথমে ৪২টি কল বসানো হয়। পরে কলের সংখ্যা বেড়ে হয় ১৪৬টি। কিন্তু কলের সংখ্যা বাড়লেও গ্রামে জল সরবরাহের সমস্যা মেটেনি। ওই গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত ৬ মাস ধরে ওই কলগুলি থেকে জল পড়া পুরোপুরি বন্ধ ছিল। তবে শেষ ১৫ দিনের মধ্যে ৩ দিন জল পাওয়া গিয়েছে। যদিও সেই জলের পরিমাণ অপর্যাপ্ত। লাইনে দাঁড়িয়েও জল পাননি অনেকে। ফলে গরমে তেষ্টা মেটাতে গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে এখনও ভরসা হল কুয়ো ও চাপাকল। সমস্যা মেটাতে অনেকেই টাকার বিনিময়ে জল কিনছে প্রয়োজন মেটাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক জারিকেন জল মিলছে ৪ টাকার বিনিময়ে। পঞ্চায়েত সমিতি ও ইসিএল কর্তৃপক্ষ অন্য বছর গরমে ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে জল সরবরাহ করলেও এ বার সেটা এখনও শুরু হয়নি। এর জেরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
কল থাকা সত্ত্বেও জল না পড়ার কারণ কী? ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, মূল সমস্যা হল কালাঝরিয়া জলপ্রকল্প থেকে কাজোড়া গ্রামের দুরত্ব। প্রথমে জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের অধীন আসানসোলের কালাঝরিয়া জল প্রকল্প থেকে প্রায় ৪০ কিমি দূরে অবস্থিত রানিগঞ্জের ছোড়া জলাধারে (ওভারহেড ট্যাঙ্ক) জল পৌঁছায়। সেখান থেকে জল যায় কাজোড়ায়। অতিরিক্ত অপচয়ের ফলে জল রানিগঞ্জ পর্যন্ত আসার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। অন্ডাল পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা সিপিএম নেতা শুভাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, “ছোড়া জলাধারে কমপক্ষে ১৪ ফুট জল না উঠলে পদ্ধতিগত কারণেই কাজোড়ায় জল পাঠানো যায় না। ফলে সমস্যা আরও বেড়েছে।’’
অন্ডাল পঞ্চায়েত সমিতির বর্তমান সভাপতি ও তৃণমূল নেতা কালোবরণ মণ্ডল দাবি, “গ্রীষ্মকালে ওই এলাকায় জল সরবরাহের জন্য ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইসিএলের কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে। অন্যান্য বছর পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে ঠিকাদারের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এ বছর ভোটের কারণে দরপত্র ডাকা যায়নি।”
কালাঝরিয়া থেকে দীর্ঘপথ ধরে আসার পথেই জল শেষ হয়ে যাওয়ার কথা মেনে নিয়ে রানিগঞ্জের বিধায়ক সোহরাব আলির অভিযোগ, “নজরদারির অভাবে জল সরবরাহের পাইপলাইন ফুটো করে পুকুর ভরাটের মতো ঘটনা দীর্ঘদিন ধরেই ঘটছে।” একই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, “পান্ডবেশ্বরে অজয় নদের পাড়ে উখড়া জলপ্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্প শেষ হয়ে গেলে জল সমস্যা মিটে যাবে।”
সমস্যা কী সত্যিই মিটবে? নাকি থেকে যাবে ভোট আশ্বাস হয়ে? উত্তর মিলবে ভোটের পরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy