দিন কয়েক ধরেই কখনও দু’ঘণ্টা, কখনও চার ঘণ্টা আবার কখনও বারো ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ভুগছে দুর্গাপুর ইস্পাতনগরী।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, একে প্রচণ্ড গরম, তারপর টানা বিদ্যুৎ নেই। ফলে বাড়িতে থাকাও অসহ্য হয়ে পড়ছে। যদিও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার তরফে জানানো হয়েছে, দ্রুত এই অবস্থা ঠিক হয়ে যাবে।
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা তৈরির সঙ্গে সঙ্গেই শ্রমিকদের থাকার জন্য কারখানা থেকে বেশ কিছুটা দুরে একটি টাউনশিপ তৈরি করা হয়। যা স্টীল টাউনশিপ নামে পরিচিত। বিভিন্ন রকম আধুনিক পরিষেবা থেকে শুরু করে স্টেডিয়াম, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বেশ কয়েকটি ভবনও তৈরি হয় ওই টাউনশিপে। চারিদিক সবুজে ঘেরা এই টাউনশিপ দুর্গাপুরের গর্বের জায়গা। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা নিজেই ওই টাউনশিপে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। ফলে শহরের অন্য জায়গার তুলনায় সেই পরিষেবাও বেশ ভাল। তবে গত কয়েকদিনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট সেই সুনামকে অনেকটাই নষ্ট করছে বলে দাবি ইস্পাতনগরীর বাসিন্দাদের। বাসিন্দারা জানান, এই কয়েকদিন ধরে গরমও বেড়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। এর আগে গরমকালে দুর্গাপুর জুড়ে লোডশেডিং বাড়লেও স্টিল টাউনশিপ সেই অবস্থায় কোনওদিনই পড়েনি। কিন্তু এ বার অবস্থা এমন যে দিনে এক-দু’ঘণ্টার বেশি বিদ্যুতের দেখা পাওয়া ভার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা ইস্পাতনগরীর বাসিন্দাদের।
ইস্পাতনগরীর এ-জোন, বি-জোন সব এলাকাতেই একই অবস্থা। কোথাও বিদ্যুৎ থাকছে না বারো ঘন্টারও বেশি। আবার কোথাও সারাদিনে দু’একবার বিদ্যুতের দেখা মিলছে। ফলে নাভিশ্বাস টাউনশিপবাসীর। এ-জোনের বাসিন্দা অভিজিৎ ভট্টাচার্য জানান, গরমে এমনিতেই মানুষের অবস্থা করুণ। তার উপর যোগ হয়েছে লাগাতার বিদ্যুৎ বিভ্রাট। তিনি আরও জানান, গত রবিবার রাতে বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। এসেছে সোমবার বিকালে। সবথেকে কষ্ট পাচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা। অভিজিৎবাবু বলেন, “সারাদিন গরমে থাকতে হচ্ছে। রাতেও বিদ্যুৎ না থাকার জন্য হা হুতাশ করতে হচ্ছে।” এ-জোনেরই আর এক বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা রেহেনা বেগম জানান, বাড়তি খাবার ফ্রিজে রাখা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে ফ্রিজে রাখা খাবারও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “সময়ের অভাবে অনেকেই একবার রান্না করেন। কিন্তু বিদ্যুতের যা অবস্থা তাতে করে বেশি খাবারও করা যাচ্ছে না।” গরমের হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই বাড়িতে এসি, কুলার লাগিয়েছেন। কিন্তু এই অবস্থায় সেগুলিও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বাড়ির বাচ্চারা খুবই কষ্ট পাচ্ছে বলে মত সি-জোনের বাসিন্দা তনুশ্রী ভট্টাচার্যের। তিনি বলেন, “এক একবার বিদ্যুৎ গেলে কখনও ঘন্টা পাঁচেক পরে আসছে। আবার কখনও সারা রাত পেরিয়ে গেলেও বিদ্যুতের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।” এ-জোনের হর্ষবর্ধনের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব মাধুরী চৌধুরী জানান, তাঁর শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে। প্রায় সময়েই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যেতে হয়। তিনি বলেন, “শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকায় এই বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় দুর্ভোগ বাড়ছে। বাড়িতে টেকা দায় হয়ে যাচ্ছে।”
কিন্তু কী কারণে এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট? দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার জনসংযোগ আধিকারিক বিআর কানুনগো জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ সরবরাহকারী তারগুলির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। সেই কারণে এই পরিস্থিতি। তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ পরিষেবার আরও উন্নতি ঘটানোর জন্য এই কাজ চলছে। দ্রুত স্বাভাবকি ভাবেই বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়ে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy