Advertisement
১১ মে ২০২৪
গ্যাস লিক কাঁকসাতেও

ডিএসপিতে গ্যাস লিক, মারা গেলেন দুই কর্মী

ডিএসপি কারখানায় গ্যাস লিক করে মৃত্যু হল দুই কর্মীর। রবিবার রাতে দুর্গাপুরের ডিএসপির ইস্পাত কারখানায় এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সন্ন্যাসী গোপ (৩০) ও শ্যামাপদ বাউড়ির (৩৪)। কারখানা ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ন্যাসীবাবুর বাড়ি আমরাই গ্রামে ও শ্যামাপদবাবুর বাড়ি অন্ডালে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:২৩
Share: Save:

ডিএসপি কারখানায় গ্যাস লিক করে মৃত্যু হল দুই কর্মীর।

রবিবার রাতে দুর্গাপুরের ডিএসপির ইস্পাত কারখানায় এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সন্ন্যাসী গোপ (৩০) ও শ্যামাপদ বাউড়ির (৩৪)। কারখানা ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ন্যাসীবাবুর বাড়ি আমরাই গ্রামে ও শ্যামাপদবাবুর বাড়ি অন্ডালে। রবিবার রাতেই কাঁকসার একটি বেসরকারি ইস্পাত কারখানায় গ্যাস বেরিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন জনা পনেরো কর্মী।

কেন্দ্রীয় সরকারি কারখানা ডিএসপির এক কর্তা জানান, রাত ৮ টা নাগাদ ডিএসপি’র ৩ নম্বর ব্লাস্ট ফার্নেসে বিষাক্ত গ্যাস লিক করে। ঘটনাস্থলেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন দুই ঠিকা কর্মী। তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে ডিএসপি প্ল্যান্ট মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে স্থানান্তরিত করা হয় ডিএসপি হাসপাতালে। সেখানে আইসিইউতে রেখে চিকিত্‌সা শুরু হয়। গভীর রাতে তাঁদের মৃত্যু হয় বলে জানান চিকিত্‌সকেরা। ডিএসপি সূত্রে জানানো হয়েছে, সম্ভবত নির্দিষ্ট গ্যাস মুখোশ না পরে কাজ করতে গিয়েই ব্লাস্ট ফার্নেস থেকে নির্গত বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস দু’জনের শরীরে ঢুকে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ডিএসপির মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বিভুরঞ্জন কানুনগো বলেন, “গ্যাসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে বিপজ্জনক কিছু পাওয়া যায়নি। ব্লাস্ট ফার্নেসের উত্‌পাদন বন্ধ হয়নি। ঘটনাটির তদন্ত শুরু হয়েছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঘণ্টাখানেক পরে, রাত ন’টা নাগাদ কাঁকসার বাঁশকোপার একটি বেসরকারি ইস্পাত কারখানার ৩ নম্বর ইউনিটের ব্লাস্ট ফার্নেসের ক্ষতিকারক গ্যাস লিক করে। অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রায় ১৫ জন কর্মী। কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতের পালিতে কাজ করছিলেন কর্মীরা। সেই সময় হঠাত্‌ ব্লাস্ট ফার্নেস থেকে বিষাক্ত গ্যাস বেরোতে শুরু করে। কিছু বুঝতে পারার আগেই ১৫ জন কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে কারখানার নিজস্ব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁদের স্থানান্তরিত করা হয় ইএসআই হাসপাতালে।

রবিবারের দুর্ঘটনা উস্কে দিয়েছে দু’দশক আগের ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার স্মৃতি। ১৯৮৪ সালের ২ ও ৩ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশের ভোপালে ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানায় বিষাক্ত গ্যাস বেরিয়ে দু’হাজারের বেশি মানুষ মারা যান। চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান অসংখ্য মানুষ। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলেও গ্যাস দুর্ঘটনা নতুন নয়। এর আগে ২০১০ সালের ১৪ জুলাই ডিএসপির ২ নম্বর ব্লাস্ট ফার্নেসে বিষাক্ত গ্যাস (নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ও অক্সিজেনের মিশ্রণ) বেরিরে ২৫ জন কর্মী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিত্‌সার পর ১০ জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাকিদের ভর্তি করা হয়েছিল। সপ্তাহ খানেক পরে তাঁরা অবশ্য সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই আসানসোলের ইস্কোর ইস্পাত কারখানায় গ্যাসের পাইপে বিস্ফোরণে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

রবিবারের দুর্ঘটনার পরেও ওই দু’টি কারখানা চত্বরেই ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায়। ছুটোছুটি শুরু করে দেন শ্রমিক-কর্মীরা। পরে অসুস্থদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। দু’টি কারখানার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কী ভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kanksha dsp factory gas leaque durgapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE