Advertisement
১৯ মে ২০২৪

তৃণমূলের কাজে হতাশ, দল ছাড়তে চিঠি নেতার

জেলায় দলনেত্রীর কর্মিসভার আগের দিনই দল ছাড়তে চেয়ে উচ্চ নেতৃত্বকে চিঠি দিলেন বর্ধমান জেলা পরিষদের সদস্য তৃণমূলের শান্তি চাল। মুখ্যমন্ত্রী ও দলের কয়েক জন শীর্ষ নেতাকে চিঠি পাঠিয়ে তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বলে জানান কালনার এই নেতা।

শান্তি চাল।—নিজস্ব চিত্র।

শান্তি চাল।—নিজস্ব চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫১
Share: Save:

জেলায় দলনেত্রীর কর্মিসভার আগের দিনই দল ছাড়তে চেয়ে উচ্চ নেতৃত্বকে চিঠি দিলেন বর্ধমান জেলা পরিষদের সদস্য তৃণমূলের শান্তি চাল। মুখ্যমন্ত্রী ও দলের কয়েক জন শীর্ষ নেতাকে চিঠি পাঠিয়ে তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বলে জানান কালনার এই নেতা। দলের জেলা ও ব্লক নেতৃত্বের কাজকর্মে হতাশ হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তাঁর দাবি।

তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ অবশ্য বলেন, “এমন কোনও খবর আমার কাছে নেই।” যাঁকে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে তাঁর দাবি, তৃণমূলের সেই বর্ধমানের পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “এখনও এই রকম চিঠি হাতে পাইনি। পেলে খতিয়ে দেখা হবে।”

গত পঞ্চায়েত ভোটে কালনার ২৩ নম্বর আসন থেকে তৃণমূলের টিকিটে জেতেন শান্তিবাবু। জেলা পরিষদের টিকিট পাওয়ার আগে তিনি ছিলেন কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। আগে শান্তিবাবু দলের অন্দরে জেলা সভাপতি স্বপনবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, জেলা পরিষদ সদস্য হওয়ার পরে স্বপনবাবুর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল। প্রথমে কিছুটা মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও পরে হতাশ শান্তিবাবু দলত্যাগের সিধ্যান্ত নেন বলে মনে করছে জেলা তৃণমূলের একটি অংশ।

মঙ্গলবার শান্তিবাবু দলীয় নেতৃত্বকে যে চিঠি পাঠান, তাতে তিনি দাবি করেছেন, জেলা পরিষদ সদস্য হওয়ার পর থেকে দলের জেলা এবং ব্লক নেতারা তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। তাতে তিনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। এক পাতার ওই চিঠিতে শান্তিবাবু অভিযোগ করেন, ২০১৪ সালে এলাকায় একটি পাকা রাস্তা তৈরিকে কেন্দ্র করে দুর্নীতি হয়। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে দলের কিছু নেতার মদতে পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্মাধ্যক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেন। তা রাজ্য নেতৃত্বর কানে গেলে দলীয় স্তরে মিটিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু, সে অভিযোগ এখনও প্রত্যাহার হয়নি। সেপ্টেম্বরে একটি সমবায় নির্বাচন নিয়ে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। তার জেরে সেখানে ভোট প্রক্রিয়াই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তারও কোনও সুরাহা দল এখনও করতে পারেনি।

চিঠির শেষ পর্বে শান্তিবাবু অভিযোগ করেছেন, গত ১৬ নভেম্বর ব্লক স্তরের একটি কর্মিসভায় সকলকে এক সঙ্গে চলার বার্তা দেন মন্ত্রী তথা দলের জেলা সভাপতি স্বপনবাবু। তার রেশ ধরে তিনি জানতে চান, সেক্ষেত্রে মামলাগুলির নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। এর পরে সভাস্থলেই মন্ত্রী তাঁকে অপমান করেন বলে তাঁর অভিযোগ। এর পরে আর দলে থাকার প্রয়োজন বোধ করছেন না বলে দাবি শান্তিবাবুর।

জেলা পরিষদের এই সদস্যের আরও দাবি, দলের অনেক পুরনো কর্মী একই ভাবে নানা হেনস্থার শিকার হয়ে হতাশায় ভুগছেন। চিঠিটি মুখ্যমন্ত্রীকে ই-মেল করা ছাড়াও দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায়, তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী এবং দলের বর্ধমান জেলা পর্যবেক্ষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে ক্যুরিয়র মারফত পাঠিয়েছেন বলে জানান শান্তিবাবু। তিনি বলেন, “১৬ বছর তৃণমূলে ছিলাম। ২০০৮ থেকে দলের জন্য উদয়াস্ত পরিশ্রম করেছি। কিন্তু দল থেকে পাওনা শুধু হতাশা। কষ্ট হলেও তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।” এর পরে তিনি জেলা পরিষদের সদস্যপদ ত্যাগ করবেন কি না, সে প্রশ্নে তিনি বলেন, “যেচে কিছু করব না। তবে তৃণমূল সদস্যপদ কেড়ে নিলে কোনও প্রতিবাদ করব না।”

কালনা ১ ব্লক তণমূল সভাপতি উমাশঙ্কর সিংহরায় অবশ্য বলেন, “জেলা পরিষদের সদস্য এই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আমার মনে হয় না।” যে পঞ্চায়েত সমিতি কর্মাধ্যক্ষ শান্তিবাবুর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনেছিলেন, তিনি বলেন, “তর্কাতর্কির সময়ে উনি শ্লীলতাহানি করেছিলেন, তাই অভিযোগ করেছিলাম। কারও মদতে তা করিনি।”

এই পরিস্থিতিতে বিজেপি-র বর্ধমান জেলা সভাপতি রাজীব ভৌমিক বলেন, “শান্তিবাবু অনেক দিনের চেনা। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে কেউ দুর্নীতির অভিযোগ তোলেনি। তিনি বিজেপিতে আসতে চাইলে স্বাগত জানানো হবে।” তিনি অন্য কোনও দলে যোগ দেবেন কি না, সে প্রশ্নে শান্তিবাবুর বক্তব্য, “এ নিয়ে এখনই কিছু বলব না।” গোটা বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপনবাবু কোনও কথাই বলতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE