Advertisement
E-Paper

তোলা না পেয়ে অশান্তি, নালিশ রেল ইয়ার্ডে

ফের তোলা চাওয়ার অভিযোগ উঠল শিল্পাঞ্চলে। এ বার আসানসোলের রেল ইয়ার্ডে পণ্য নামানোর কাজে নিযুক্ত ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের নেতার বিরুদ্ধে। এই ঘটনার জেরে অশান্তি তৈরি হওয়ায় বুধবার দুপুর থেকে প্রায় ২৪ ঘণ্টা রেল ইয়ার্ডে কাজ বন্ধ থাকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:২৪
আসানসোলের সেই রেল ইয়ার্ড। —নিজস্ব চিত্র।

আসানসোলের সেই রেল ইয়ার্ড। —নিজস্ব চিত্র।

ফের তোলা চাওয়ার অভিযোগ উঠল শিল্পাঞ্চলে। এ বার আসানসোলের রেল ইয়ার্ডে পণ্য নামানোর কাজে নিযুক্ত ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের নেতার বিরুদ্ধে। এই ঘটনার জেরে অশান্তি তৈরি হওয়ায় বুধবার দুপুর থেকে প্রায় ২৪ ঘণ্টা রেল ইয়ার্ডে কাজ বন্ধ থাকে। শেষে পুলিশি হস্তক্ষেপে সমস্যা মেটে। ওই ঠিকাদার অবশ্য পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে কারও নাম লেখেননি।

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস তিনেক আগে বরাচকের এই ইয়ার্ডটি চালু হয়েছে। শিল্পাঞ্চলের নানা সংস্থার পণ্য এখানে ওঠানামা করে। আসানসোলের এক ঠিকা সংস্থা এই কাজের জন্য বিভিন্ন সংস্থার কাছে বরাত নিয়েছে। ওই সংস্থার মালিক মহম্মদ এয়াহার খান ওরফে মিস্টার খান তোলা চাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।

মিস্টার খান জানান, পণ্য তোলা-নামানোর জন্য তিনি শ্রমিক নিয়েছেন স্থানীয় একটি ঠিকা সংস্থার কাছ থেকে। তাঁর অভিযোগ, বুধবার দুপুর ১টা থেকে ওই শ্রমিকেরা আচমকা কাজ বন্ধ করে দেন। কিন্তু তাঁরা কেন কাজ বন্ধ করেছেন, সে কথা পরিষ্কার করে জানাননি। মিস্টার খান বলেন, “বেশ কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও শ্রমিকরা কাজে না নামায় আমি বাইরে থেকে শ্রমিক আনি। কিন্তু তাঁদেরও কাজ করতে দেওয়া হয়নি, মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।” এই ঘটনার পরে তিনি আসানসোল দক্ষিণ পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ করেন।

কেন হঠাৎ এমন ঘটল, তা জানতে চাওয়া হলে মিস্টার খান বলেন, “ওই অঞ্চলের দুই তৃণমূল নেতা রোহিত নুনিয়া ও সুজিত সিংহ আমার কাছ থেকে অন্যায় ভাবে টাকা চেয়েছেন। আমি টাকা দিতে অস্বীকার করেছি। তাই তাঁরা চক্রান্ত করে শ্রমিকদের কাজে নামতে বাধা দিচ্ছেন।” বৃহস্পতিবার সকালেও কাজ শুরু না হওয়ায় মিস্টার খান আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের দ্বারস্থ হন। কাজ চালু করতে তিনি সাহায্যের আবেদন করেন পুলিশ কমিশনারের কাছে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ইয়ার্ডে কাজ শুরু হয়ে য়ায়। পুলিশ কমিশনার বলেন, “ওখানে কী সমস্যা হয়েছিল, তা আমি জানি না। তবে সমস্যা হলেই পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। দরকার হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়। এখন ওখানে কোনও সমস্যা নেই।”

রোহিত নুনিয়া অবশ্য দাবি করেন, “এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। ওখানকার শ্রমিকেরা ঠিক মতো বেতন পাচ্ছেন না। তাই তাঁরা কাজ বন্ধ করেছেন। আমি কী করতে পারি?” তাঁর নাম কেন জড়াল, সে প্রশ্নে রোহিতবাবু বলেন, “আমি এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর। শ্রমিকেরা আমার কাছে ন্যায়বিচার চাইতে এসেছিলেন। আমি তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম মাত্র।” তাঁর আরও দাবি, তাঁরই হস্থক্ষেপে সমস্যা মিটে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে কাজ শুরু হয়েছে।

রোহিতবাবু কুলটি পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর। সিপিআই-এর টিকিটে জিতে কাউন্সিলর হয়েছিলেন। মাসখানেক আগে কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। এই উপলক্ষে নিয়ামতপুর বাসস্ট্যান্ডে ঘটা করে সভার আয়োজনও হয়েছিল। এ বার তোলাবাজির ঘটনায় এই নেতার নাম জড়িয়ে যাওয়ায় তৃণমূলের অন্দরেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বিষয়টিকে মোটেই ভাল চোখে নিচ্ছেন না দলের জেলা নেতারা। দলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, “আমার কানেও বিষয়টি এসেছে। দলের নাম করে তোলাবাজি বরদাস্ত করা হবে না। যাঁরা এই কাজ করবেন, তাঁরা দলের মধ্যে থাকবেন না। আমি পুলিশকে বলেছি, যিনি কাজের বরাত পেয়েছেন, তাঁকে নিশ্চিন্তে কাজ করতে দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।” দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “যে বা যারা অপকর্মে জড়াবে, রাজনৈতিক রং না দেখে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।”

জানা গিয়েছে, আসানসোলের একটি সিমেন্ট কারখানার কাঁচা পণ্য বুধবার থেকে ওই রেলের রেকে আটকেছিল। ফলে, তাঁদের ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। ওই সংস্থার ম্যনেজার দেবাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ বার কোনও রকমে আমরা ক্ষতি সামলে নিয়েছি। কিন্তু, বারবার এমন ঘটলে আমরা খুব বিপদে পড়ে যাব।” যদিও পুলিশের আশ্বাস, ভবিষ্যতে যাতে এমন না ঘটে সে ব্যাপারে নজর রাখা হচ্ছে।

asansol rail yard extortion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy