Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

দুর্গাপুরে পরিত্যক্ত সুটকেস পাথর দিয়ে ভাঙল পুলিশ

কেউ-কেউ ঠেকেও শেখে না। পুলিশ তো নয়ই। বোমা নিষ্ক্রিয় করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্ক না হওয়ায় বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে, প্রাণ যাচ্ছে, তবুও শিক্ষা নিচ্ছেন না পুলিশকর্মীরা। শনিবার ফের তার প্রমাণ মিলল দুর্গাপুরে। শপিং মল থেকে পরিত্যক্ত সুটকেস বের করে এনে জনবহুল এলাকায় পাথর মেরে ভাঙলেন এক পুলিশকর্মী। কোনও আগাম পরীক্ষা ছাড়াই।

সুটকেস ভাঙছে পুলিশ। শনিবার দুর্গাপুরে।  ছবি:সব্যসাচী ইসলাম।

সুটকেস ভাঙছে পুলিশ। শনিবার দুর্গাপুরে। ছবি:সব্যসাচী ইসলাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৩৫
Share: Save:

কেউ-কেউ ঠেকেও শেখে না। পুলিশ তো নয়ই।

বোমা নিষ্ক্রিয় করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্ক না হওয়ায় বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে, প্রাণ যাচ্ছে, তবুও শিক্ষা নিচ্ছেন না পুলিশকর্মীরা। শনিবার ফের তার প্রমাণ মিলল দুর্গাপুরে। শপিং মল থেকে পরিত্যক্ত সুটকেস বের করে এনে জনবহুল এলাকায় পাথর মেরে ভাঙলেন এক পুলিশকর্মী। কোনও আগাম পরীক্ষা ছাড়াই।

২০০৫-এ বাঁকুড়ায় মাওবাদীদের রেখে যাওয়া ব্যাগ খুলতে বারিকুলের ওসি প্রবাল সেনগুপ্তের উড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে গত বছর আলিপুরদুয়ারে বম্ব স্কোয়াডের কর্মীর মৃত্যু তালিকা বেড়েই চলেছে।

তা সত্ত্বেও এ দিন পরিত্যক্ত সুটকেস ঘিরে বোমাতঙ্ক ছড়ানোর পরে পুলিশের সে সব মাথায় ছিল বলে মনে হয় না।

এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে একটি শপিং মলের শৌচালয়ে ওই সুটকেসটি পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। কিছু ক্ষণের মধ্যেই মুখে-মুখে খবর ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের কাছে বোমাতঙ্কের খবর পৌঁছয়। পুলিশ এসেই শৌচালয়টি বন্ধ করে দেয়। পরে জেলা গোয়েন্দা দফতরের (ডিআইবি) কর্মীরা আসেন, তাঁদের সঙ্গে আসেন বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের লোকজনও। শৌচালয় থেকে সুটকেসটি বের করে নিয়ে যাওয়া হয় শপিং মলের বাইরে ছোট্ট একটি বাগানে। পাশেই একটি বহুতল আবাসন। বাগানে বেশ কিছু লোকজন, ছাত্রছাত্রী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলেন। ভিড় করে ছিলেন সংবাদমাধ্যমের লোকজন। নিজেদের তো নয়ই, তাঁদের নিরাপত্তার কথাও ভাবেনি পুলিশ। কাউকে সরতে বলা হয়নি। সুটকেসটি বাগানে রেখে বড় পাথর দিয়ে বাড়ি মেরে সেটি ভাঙা হয়।

২০০৬ সালে লালগড়ের ঝিটকার জঙ্গলে একই ভাবে ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে বিস্ফোরকের কৌটো খুলতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। দুই পুলিশকর্মী ঘটনাস্থলেই মারা যান। জখম হন পাঁচ চিত্র সাংবাদিক। এ দিন অবশ্য বিস্ফোরণ ঘটেনি। সুটকেস ভেঙে কিছু ওষুধপত্র, দু’টি প্রেসক্রিপশনের ফাইল এবং একটি কাপড় পাওয়া যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশকর্মী বলেন, “সত্যি বিস্ফোরণ ঘটলে এ দিনও ক্ষয়ক্ষতি কিছু কম হত না!” যেখানে সুটকেসটি ভাঙা হয়, সেখান থেকে বড়জোর ফুট পনেরো দূরে বসে ছিলেন দুই বোন জুলি ও পম্পা চৌধুরী। পরে বিষয়টি বুঝে তাঁরা আঁতকে ওঠেন। কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সাধন দাস নামে এলাকারই এক বাসিন্দা। তাঁর মতে, “পুলিশ দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কাজ করেছে। ভাগ্যে খারাপ কিছু ঘটেনি!”

পুলিশ কেন এই ঝুঁকি নিল?

আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব ফোন ধরেননি। পরে এসএমএস মারফত তিনি দাবি করেন, তাঁদের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের অভিজ্ঞ পুলিশকর্মীরা সুটকেস দেখেই বুঝেছিলেন, তাতে মারাত্মক কিছু নেই। তাই ওই ভাবে ভাঙা হয়েছে।

এর আগে কোনও ঘটনাতেই অবশ্য পুলিশ বুঝতে পারেনি, ‘মারাত্মক’ কিছু ঘটতে পারে। কিন্তু যারা ঠেকেও শেখে না, তাদের বোঝাবে কে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

durgapur suitcase police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE