Advertisement
E-Paper

দুর্গাপুরে ভাড়াটেদের নিয়ে তথ্যই নেই পুলিশের কাছে

পরিচয়পত্র না রেখে মালিক বাড়ি ভাড়া দেওয়ার মাসুল ইতিমধ্যে গুনছে বর্ধমানের খাগড়াগড়। বাড়ির মালিকের কাছেই যেখানে ভাড়াটেদের সম্পর্কে পরিষ্কার তথ্য নেই, পুলিশ তো সেখানে আরও অন্ধকারে। প্রায় একই রকম পরিস্থিতি দুর্গাপুর শহরেও। শিল্পাঞ্চলের এই শহরেও ভাড়াটেদের সম্পর্কে প্রায় কোনও তথ্য নেই পুলিশের কাছে। ফলে, অপরাধমূলক কাজকর্ম নিশ্চিন্তে সেরে অনেক দুষ্কৃতী সহজে গা-ঢাকা দিচ্ছে বলে দাবি শহরবাসীর। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্ক বাড়ছে শহরে।

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৪ ০০:১৬

পরিচয়পত্র না রেখে মালিক বাড়ি ভাড়া দেওয়ার মাসুল ইতিমধ্যে গুনছে বর্ধমানের খাগড়াগড়। বাড়ির মালিকের কাছেই যেখানে ভাড়াটেদের সম্পর্কে পরিষ্কার তথ্য নেই, পুলিশ তো সেখানে আরও অন্ধকারে। প্রায় একই রকম পরিস্থিতি দুর্গাপুর শহরেও। শিল্পাঞ্চলের এই শহরেও ভাড়াটেদের সম্পর্কে প্রায় কোনও তথ্য নেই পুলিশের কাছে। ফলে, অপরাধমূলক কাজকর্ম নিশ্চিন্তে সেরে অনেক দুষ্কৃতী সহজে গা-ঢাকা দিচ্ছে বলে দাবি শহরবাসীর। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্ক বাড়ছে শহরে।

শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স, তারকা হোটেল, সরকারি-বেসরকারি নানা কলেজ থেকে শুরু করে তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক, বহু সংস্থার শো-রুম এবং অফিসগত কয়েক বছরে একের পর এক গড়ে উঠেছে এই শহরে। ফলে, বাইরে থেকে অনেকেই কর্মসূত্রে এসেছেন এই শহরে। এ ছাড়াও অসংগঠিত ক্ষেত্রে, বিশেষত কল-কারখানা, নির্মাণ শিল্পে কাজ করতে বাইরে থেকে আসা লোকজনও প্রচুর। শহরের নানা প্রান্তে বাড়ি ভাড়া নিয়ে তাঁরা থাকেন। সিটি সেন্টার, বিধাননগরের মতো বিভিন্ন এলাকায় অনেক বাড়িতে শুধু প্রবীণ মানুষজন বাস করেন। কর্মসূত্রে বা বিবাহের পরে ছেলে-মেয়েরা থাকেন অন্যত্র। এই ধরনের বহু ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, বয়স্ক দম্পতিরা বাড়ির একাংশ ভাড়া দিয়ে কার্যত সেই ভাড়াটেদের ভরসায় বাস করছেন। তাঁরা ভাড়াটেদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া তো দূর, অনেক সময়ে ভাড়াটেরাই তাঁদের খোঁজ-খবর নেন। আগে বাড়ি মালিকেরা ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে বাছ-বিছার করতেন। এখন বহু বাড়িই ফাঁকা পড়ে থাকে। ভাড়াটে পাওয়াও সমস্যার। তাই কেউ এলে তাঁর সম্পর্কে বিশেষ খোঁজখবর না নিয়েই ভাড়া দিয়ে দেওয়া হয় অনেক ক্ষেত্রে। তা না হলে ভাড়াটে হাতছাড়া হওয়ার ভয় থাকে।

পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাড়াটেদের সম্পর্কে তথ্য জোগাড়ের কোনও উদ্যোগই হয়নি সাম্প্রতিক কালে। ফলে, খাগড়াগড়-কাণ্ডের পরে আতঙ্ক বেড়েছে পুলিশেরও। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, ২০১২ সালে এক বার এ ব্যাপারে উদ্যোগ হয়েছিল। সে বছর আবর্জনার স্তুপে বোমা ফেটে সাত বছরের বালিকার মৃত্যু হয়। আসানসোলের মহিলা থানার তত্‌কালীন ওসি শম্পা বসুর বাবা, সিটি সেন্টারের বাসিন্দা দিলীপবাবু নিজের বাড়িতেই ভরসন্ধ্যায় খুন হন। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে মৌলানা আজাদ সরণির একটি খাদ্য ও পানীয় সংস্থার কার্যালয়ে লুঠ করে দুষ্কৃতীরা। এ ছাড়া অপহরণের হুমকি, লাগাতার চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় পুলিশের উপরে ক্ষোভ বাড়তে থাকে বাসিন্দাদের।

প্রায় সব ঘটনার তদন্তে নেমেই পুলিশ জানতে পারে, দুষ্কৃতীরা কেউই স্থানীয় নয়। তারা বাইরে থেকে এসে শহরে ঘরভাড়া নিয়ে থাকছিল। তার পরে দুষ্কর্ম করে পালিয়েছে। এর পরেই ভাড়াটেদের সম্পর্কে তথ্য জোগাড়ের কাজ শুরু করে পুলিশ। পাশাপাশি, বহিরাগতদের বাইরে বেরোলে পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক করে পুলিশ। কিন্তু সেই উদ্যোগ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি বলে অভিযোগ শহরবাসীর।

খাগড়াগড়-কাণ্ডের পরে পুলিশের তরফে ভাড়াটেদের সম্পর্কে তথ্য রাখতে ফের উদ্যোগ হয়েছে বলে কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শহরে এলাকা ধরে ধরে এ কাজ করা হবে। ভাড়াটের ছবি, ব্যক্তি-পরিচিতি, স্থায়ী ঠিকানা, কোন সংস্থায় কী কাজ করেন, কার মাধ্যমে শহরে এসেছেন, বাড়ি ভাড়া কে খুঁজে দিয়েছেন ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করা হবে। পুলিশের দাবি, এর ফলে অপরাধের কিনারা করতে সুবিধা হবে। এই কাজে বাড়ির মালিকদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে জানান এক পুলিশ আধিকারিক।

দেরিতে হলেও পুলিশের ঘুম ভাঙার খবরে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন শহরবাসী। তবে কিছু দিন পরে এই উদ্যোগ ফের শিথিল হয়ে যাবে কি না, সে আশঙ্কাও রয়েছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

no information tenants durgapur police subrata shit
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy