Advertisement
১৭ জুন ২০২৪

দুর্নীতির অভিযোগে ছাত্রেরা ঘেরাও করল প্রধান শিক্ষককে

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি, নিয়মিত স্কুলে না আসা-সহ একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে স্কুলের গেটের সামনেই তাকে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখালেন পড়ুয়া ও অভিভাবকেরা। বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে অভিভাবক, স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্য এবং পড়ুয়াদের দিক থেকে ধেয়ে এল একের পর এক প্রশ্ন।

প্রধান শিক্ষককে ঘিরে চলছে বিক্ষোভ।

প্রধান শিক্ষককে ঘিরে চলছে বিক্ষোভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪ ০০:৫৭
Share: Save:

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি, নিয়মিত স্কুলে না আসা-সহ একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে স্কুলের গেটের সামনেই তাকে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখালেন পড়ুয়া ও অভিভাবকেরা। বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে অভিভাবক, স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্য এবং পড়ুয়াদের দিক থেকে ধেয়ে এল একের পর এক প্রশ্ন। সাফাই দিয়ে গেলেন প্রধান শিক্ষক।

বুধবার কাটোয়ার সরগ্রাম পঞ্চায়েতের পুইনি আইডিয়াল ইনস্টিটিউশনে ঘটনাটি ঘটে। দশটা বাজতেই স্কুলের গেট আটকে হাতে পোস্টার নিয়ে বসে পড়েন পড়ুয়ারা। একে একে জড়ো হন অভিভাবক, পরিচালন সমিতির সদস্য থেকে শুরু করে এলাকার শিক্ষানুরাগীরা। শিক্ষাকর্মীদেরও স্কুলে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় এ দিন। পড়ুয়াদের মাঝে বসেছিলেন তাঁরাও। দুপুরে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই স্কুলেরই প্রাক্তন শিক্ষক জিতেন মাঝি একের পর এক অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষক তাপসকুমার ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন। আর ছাত্রদের মাঝে বসে মাথা নিচু করে অভিযোগগুলি শুনছেন প্রধান শিক্ষক। আর তার পিছনে পড়ুয়ারা ‘মিড ডে মিলের অনিয়ম’ থেকে ‘টিফিনের পর ক্লাস হয় না’ কেন প্রশ্ন তুলে পোস্টার নিয়ে বসে আছে। পাশেই পুকুর পাড়ে বসে রয়েছেন অন্যান্য শিক্ষকেরা।

বেহাল শ্রেণিকক্ষ।

কিন্তু প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ কেন?

পড়ুয়া থেকে শিক্ষকদের একাংশের দাবি, প্রধান শিক্ষক তাপসবাবু সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন স্কুলে আসেন। এলেও ঠিক মতো ক্লাসে গিয়ে পড়ান না। ফলে কোনও বছরই তাঁর বিষয়ের সিলেবাস শেষ হয় না। এ দিন দশম শ্রেণির ছাত্র আকাশ কোনার, বাবু দেরা প্রধান শিক্ষকের দিকে আঙুল তুলে অভিযোগ করে, “স্যার, আমরা তো অন্য কোনও শিক্ষকের নামে অভিযোগ করছি না। আপনি সপ্তাহে দু-তিন দিন গাড়ি হাঁকিয়ে স্কুলে আসেন। ঠিকমতো ক্লাস না নিয়েই টিফিনের আগে ফের বর্ধমানে চলে যান। আমাদের গৃহশিক্ষক নেই, আপনারাই ভরসা। কিন্তু আপনি সেই ভরসা দিতে পারছেন না। ছাত্র হয়ে প্রকাশ্যে আপনাকে এ সব কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু না বলে আর উপায় নেই।” নবম শ্রেণির পড়ুয়া সাগরী পণ্ডিত, ফাল্গুনী মাঝিদেরও অভিযোগ, “সব জায়গাতেই স্কুলের ঘর নতুন হচ্ছে। শুধু আমাদের স্কুল দিন দিন ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হচ্ছে।” স্কুল ঘরগুলি ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের গায়ে বড় বড় ফাটল। স্যাঁতস্যাতে দেওয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। বেশ কয়েকটি ঘরের ছাদ থেকেও সিমেন্টের চাঁই খসে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পড়ুয়াদের প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত শ্রেণিকক্ষগুলি সংস্কারের দাবি জানিয়ে কাটোয়া ১ বিডিওকে চিঠি দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক উদ্যোগী নন বলেই সর্বশিক্ষা অভিযান কোনও গুরুত্ব দিচ্ছে না। প্রধান শিক্ষক নির্লিপ্ত জবাব, “আমি তো স্কুলের শ্রেণিকক্ষের করুণ অবস্থা সর্বশিক্ষা মিশনকে জানিয়েছি। তাঁরা টাকা না দিলে কী করব বলুন তো!”

ওই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক, গ্রামেরই বাসিন্দা জিতেন মাঝির অভিযোগ, “স্কুলের সামনের জমি থেকে বছরে তিনবার ফসল হয়। সেই ফসল বিক্রীর টাকা বরাবরই স্কুল পেয়ে থাকে। গত ৬ বছরে ভাগীদারের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক ৫০ হাজার টাকা পেয়েছে। সেই টাকারও কোনও হিসেব প্রধান শিক্ষক দিতে পারছেন না।” তৃণমূল পরিচালিত পরিচালন সমিতির সভাপতি চৌধুরী আলমগীর হোসেন ও সম্পাদক উত্তম চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বছর তিনেক আগেও এই প্রধান শিক্ষককে গ্রামবাসীরা ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। তখন তিনি স্কুলের প্যাডে মুচলেকা দিয়ে সমস্ত অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছিলেন এবং ওই ভুল আর করবেন না বলে লিখিত ভাবে গ্রামবাসীদের জানিয়েছিলেন। তিনি শোধরাননি বলেই গ্রামবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন।”

প্রধান শিক্ষকের অবশ্য দাবি, “এখানে সবাই আমার শত্রু। গ্রামবাসীরা স্কুলের উপর অত্যাচার করে। আমি কোনও কাজে গ্রামবাসীদের সাহায্য পাই না। হাল ছেড়ে দিয়েছি। আর ওই টাকার হিসেব ঠিক দিয়ে দেব।”

ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE