Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দুর্ব্যবহারের অভিযোগ বারবার, বাসকর্মীদের প্রশিক্ষণের ভাবনা

কখনও ভাড়া নিয়ে দুর্ব্যবহার। কখনও সঙ্গে থাকা ব্যগপত্র পরীক্ষার নামে হয়রানি। যাত্রীদের সঙ্গে এই ধরনের আচরণের অভিযোগ বারবার উঠছে বাসকর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। অনেক সময়ে শাস্তির মুখেও পড়তে হচ্ছে তাঁদের। কী ভাবে এই সমস্যা দূর করা যায়, সে নিয়ে ভাবনায় পড়েছে বেসরকারি বাসের মালিকেরা থেকে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এসবিএসটিসি) কর্তারা। কর্তব্যরত অবস্থায় যাতে বাসকর্মীরা মাথা ঠান্ডা রাখেন ও যাত্রীদের সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবহার করেন, সে জন্য নানা প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৪
Share: Save:

কখনও ভাড়া নিয়ে দুর্ব্যবহার। কখনও সঙ্গে থাকা ব্যগপত্র পরীক্ষার নামে হয়রানি। যাত্রীদের সঙ্গে এই ধরনের আচরণের অভিযোগ বারবার উঠছে বাসকর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। অনেক সময়ে শাস্তির মুখেও পড়তে হচ্ছে তাঁদের। কী ভাবে এই সমস্যা দূর করা যায়, সে নিয়ে ভাবনায় পড়েছে বেসরকারি বাসের মালিকেরা থেকে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এসবিএসটিসি) কর্তারা। কর্তব্যরত অবস্থায় যাতে বাসকর্মীরা মাথা ঠান্ডা রাখেন ও যাত্রীদের সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবহার করেন, সে জন্য নানা প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

মাসখানেক আগেই আসানসোলের এক যাত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে এসবিএসটিসি-র বেলঘরিয়ে ডিপোর একটি বাসের কন্ডাক্টরের বিরুদ্ধে। ওই কন্ডাক্টরকে সাসপেন্ড করেন নিগম কর্তৃপক্ষ। দিন তিনেক আগে বার্নপুরে এক যাত্রীকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে একটি বাসের কন্ডাক্টরের বিরুদ্ধে। তদন্ত কমিশন বসিয়ে সেই ঘটনার তদন্ত করছেন এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ। দু’টি ঘটনাতেই মহিলা যাত্রীদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

শুধু সরকারি বাস নয়, যাত্রীদের অভিযোগ, বেসরকারি বাসের অনেক কর্মীও নানা রকম দুর্ব্যবহার করে থাকেন। শিল্পাঞ্চলে মিনিবাসগুলিতে সবচেয়ে বেশি খারাপ আচরণের শিকার হতে হয় বলে তাঁদের দাবি। আসানসোল বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বাণী মণ্ডলের অভিযোগ, “আমাদের বারের সদস্যদের সঙ্গে বহু বার খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা সব সময়ই প্রতিবাদ করি। প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতেও বাধ্য করেছি।” চিত্তরঞ্জনের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষিকা বন্দনা জোয়ারদারের কথায়, “ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে মাঝে-মধ্যেই ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে কন্ডাক্টরেরা। দিন পনেরো আগে আমার সঙ্গেও একটি মিনিবাসের কন্ডাক্টরের বচসা হয়েছে। বেশ দুর্ব্যবহার করছিলেন তিনি।”

কিছু বাসকর্মী যে অনেক সময়ে যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন, তা স্বীকার করেন এসবিএসটিসি-র আধিকারিক থেকে বেসরকারি বাসের মালিকেরা। এই অভিযোগ কার্যত মেনে নিচ্ছে শ্রমিক সংগঠনগুলিও। তবে তাদের দাবি, সব ক্ষেত্রে বাসকর্মীদের একতরফা দোষ থাকে না, যাত্রীরাও অনেক সময়ে দুর্ব্যবহার করেন। এসবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান তমোনাষ ঘোষ দাবি করেন, সম্প্রতি বার্নপুরে তাঁদের এক কন্ডাক্টরের বিরুদ্ধে যে অভব্য আচরণের অভিযোগ উঠেছে, তা পুরোপুরি ঠিক নয়। তবু দুই আধিকারিককে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তমোনাষবাবু বলেন, “চালকদের উপরে যাত্রীদের প্রাণ নির্ভর করে। তাই তাঁদের মাথা ঠান্ডা রাখা জরুরি। আমরা তাঁদের নিয়মিত যোগাভ্যাস করানোর পরিকল্পনা করেছি। এ ছাড়া, যাত্রীদের সঙ্গে কী রকম ব্যবহার করা উচিত, তা শেখাতে বিশেষ প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করছি।”

আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় বলেন, “কর্মীদের বিরুদ্ধে যাত্রীদের সঙ্গে অভব্য আচরণের অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। যাত্রীদের সঙ্গে আচার-ব্যবহারের রীতি কর্মীদের শেখা উচিত। আমরাও ওঁদের এ বিষয়ে জানুয়ারি থেকে নিয়মিত বিশেষ প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” সিটু নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের আবার দাবি, তাঁরা নিজেদের সংগঠনের শ্রমিক-কর্মীদের এই ধরনের আচার-আচরণের ব্যাপারে সতর্ক করে থাকেন। আইএনটিইউসি নেতা সঞ্জয় সেনগুপ্ত বলেন, “বাসকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমাদের কাছেও অভিযোগ আসে। আমরা এ সব সমর্থন করি না।”

আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত আসানসোল মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়ার বক্তব্য, “বাসকর্মীদের মানসিক উত্‌কর্ষতা বাড়ানোর জন্য বাসমালিক ও এসবিএসটিসি-র আধিকারিকদের উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি।” তবে তাঁর দাবি, অনেক যাত্রী কোনও কারণ ছাড়াই বাসকর্মীদের মারধর, দুর্ব্যবহার করেন। এ নিয়েও প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

complaint of abuse sushanta banik asansol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE